Advertisment

পোল্যান্ড বর্ডার পেরোতে পারব কিনা জানি না! আতঙ্কের ভিডিওয় EXCLUSIVE ইউক্রেন ফিজিও

আতঙ্কে হিমশীতল ইউক্রেনবাসী। মৃত্যুর প্রহর গুনছে সকলকে। সম্ভাব্য রুশ হানার মুখে কেমন পরিস্থিতি, কিয়েভ থেকে লিভ যাওয়ার পথে জানালেন ইউক্রেন মহিলা ফুটবল দলের হেড ফিজিও জর্দি এসকুরা।

author-image
Subhasish Hazra
New Update
Jordi_Escura_Ukraine

কিয়েভ থেকে লিভ পালানোর সময় একান্ত ভিডিওয় জর্দি এসকুরা (ছবি- জর্দি এসকুরা এবং টুইটার)

ইউক্রেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে। লুহানস্ক, ডোনেৎস্ককে কেন্দ্র করে ইউক্রেন আড়াআড়ি দুভাগে ভাগ হয়ে গিয়েছে চোখের সামনে। বারুদের গন্ধ মেখে হানাদার রুশ বিমান আছড়ে পড়ছে ইউক্রেনে। প্রেমিক-প্রেমিকার শেষ অলিঙ্গনের, বিচ্ছেদের ছবি ভাইরাল হচ্ছে। আর চোখ ভারী হচ্ছে অ্যান্ডোরার জর্দি এসকুরার।

Advertisment

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে ইউক্রেন থেকে ভিডিও বার্তায় তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, "গাড়ি করে পালাচ্ছি। আর রাস্তায় দেখছি শয়ে শয়ে মানুষ বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে বেরিয়ে পড়েছেন। হাঁটছেন, কেউ বা দৌড় লাগাচ্ছেন। বাইরের তাপমাত্রা তখন খুব বেশি হলে ৪-৫ ডিগ্রি, বিকেলের দিকে সূর্য ডুবলে যা নেমে আসছে মাইনাস বা ১ ডিগ্রির আশেপাশে।"

ইউক্রেনের জাতীয় মহিলা দলের হেড ফিজিও। গত বছরেই নতুন দায়িত্ব নিয়ে পূর্ব ইউরোপের এই দেশে এসেছিলেন এসকুরা। তবে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই যে এমন পরিস্থিতির মুখে পড়বেন ভাবতে পারেননি। কিয়েভে ছিলেন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তবে সেদিনের শুরুটা হয়েছিল অন্যরকম ভাবে।

আরও পড়ুন: রাশিয়ার উপর ক্ষুব্ধ UEFA, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সরল চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল

এসকুরা শুক্রবার রাতে বলছিলেন, "গতকাল বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে। প্ৰথমে বুঝতে পারিনি সেটা বোমার শব্দ। পরে আমার বোন আমাকে ফোন করে জানায়, যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে, খবরে দেখাচ্ছে। তখনই বুঝতে পারি, যে বিকট শব্দে ঘুম ভেঙেছিল সেটা আসলে বোমার শব্দ। তারপরেই লুইকে (হেড কোচ লুই কর্তেজ) ঘুম থেকে তুলি। দ্রুত কিয়েভ ছাড়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলি আমরা। ইউক্রেনিয়ান ফুটবল ফেডারেশন, স্প্যানিশ দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করি। কিয়েভে আর কোনওভাবেই থাকতে চাইছিলাম না। কীভাবে ইউক্রেন ছাড়ব, তা আমাদের মাথায় খালি ঘুরপাক খাচ্ছিল।"

রোমহর্ষক অভিজ্ঞতা শেয়ার করে জর্দি ভিডিওয় বলে চলেছিলেন, "ইউক্রেন ফুটবল ফেডারেশনের তরফে কোনওরকমে ভ্যান এবং একজন ড্রাইভারের বন্দোবস্ত করা হয়। সেই ভ্যানে করেই আমাদের নতুন জার্নি শুরু হয়। গতকাল দুপুর ১২ টা নাগাদ আমাদের যাত্রা করি কিয়েভ থেকে।"

publive-image

"এদিন (শুক্রবার) সকাল ৯ টা পর্যন্ত টানা গাড়িতে কাটাই প্রায় ২০ ঘন্টা। ৪০০ কিমি পেরিয়ে এসেছি এখনও পর্যন্ত। তবে দিনের শুরুতে ব্যাপক যানজটের মুখে পড়তে হয়েছিল। কিয়েভ ছাড়ার মুখে এমন বিশাল জ্যাম লাগে যে গাড়ি প্রায় এগোচ্ছিলই না। ১৫-২০ মিনিটে হয়ত ১০-১৫ মিটার পেরোচ্ছিলাম আমার। তবে কিয়েভ ছাড়িয়ে যত দ্রুত এগোতে থাকি ততই যানজট অনেকটা কমে আসে।"

আরও পড়ুন: ইউক্রেনে বোমা-বারুদের মধ্যে আটকে চ্যাম্পিয়ন দাবাড়ু! দ্রুত দেশে ফেরার আর্জি বাবা-মার

কিয়েভ ছেড়ে শুক্রবারই পোল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষা লিভে পৌঁছে গিয়েছেন। রাতেই ইউক্রেন ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে এসকুরাদের। লিভে পৌঁছে আবার অন্যরকম অভিজ্ঞতা হয় তাঁদের।

Jordi_Escura

"সকালে লিভে প্রবেশের আগে আমাদের ফোনে জরুরি বার্তা আসে। যেখানে বলা হয়, লিভে সাইরেনের শব্দ শোনা যাচ্ছে। অর্থাৎ ওঁরা এই শহরে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে চাইছে ওপর থেকে যুদ্ধবিমানকে প্রস্তুত রেখে। পরে আমাদের জানানো হয়, ওঁদের রাডারে যখন কোনও বিপদের ইঙ্গিত পায় তখন এরকম সাইরেন বাজানো হয়। এই শহরে হানার আশঙ্কা রয়েছে কিনা, তা স্পষ্ট নয়। তবে নিরাপত্তার জন্যই এরকম করা হয়েছে। যদি আগাম কোনও হামলার খবর পৌঁছয়, তাহলে সকলকে শেল্টারে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। তারপরেই আমরা ফ্রিলি মুভ করতে পারব।" এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছিলেন তিনি।

তবে রাজধানী কিয়েভ থেকে লিভের ব্যবধান দুস্তর। একদম পশ্চিম প্রান্তের লিভ অনেকটাই নিরাপদ এখনও। সেই আঁচ পেয়েই আশ্বস্ত হয়েছেন এসকুরা। জানাচ্ছেন, "এই শহরে আবার দেখলাম, কেউই পালিয়ে যাচ্ছে না। রাস্তায় গাড়ি, মানুষ জন শপিং করছে, নিজের মত সময় কাটাচ্ছে। এদিন রাতেই বর্ডার ক্রশ করে ফেলব আশা করি। ওখানে গিয়ে আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে, জানি না।"

publive-image

"তবে পোলিশ বর্ডারে এখন মারাত্মক চাপ। বিশাল সংখ্যক গাড়ি বর্ডার ক্রশ করতে চাইছে। ১০-১২ ঘন্টা গাড়ির লাইন পোল্যান্ডের বর্ডারে। আমরা জানি না কী অপেক্ষা করছে। শেষমেশ বর্ডার পেরোতে পারব কিনা, সেটাও জানি না বাস্তবে। তবে এটুকু জানি, ১৮ থেকে ৬০ ইউক্রেনিয়ান পুরুষদের বর্ডার পেরোতে দেওয়া হচ্ছে না। কারণ তাঁদের ইউক্রেনে থাকতে হবে দেশকে রক্ষা করার জন্য।"

তিনি চলে যাচ্ছেন, অনিশ্চিত এক প্রহরের আশঙ্কা মেখে। তবে ইউক্রেনিয়ান বন্ধুদের জন্য হৃদয় গলে যাচ্ছে তাঁর। মৃত্যু দেখছেন সামনে থেকে। তাই বুক কেঁপে উঠছে মুহুর্মুহু। ব্যথিত গলায় অ্যান্ডোরার জাতীয় দলে দীর্ঘ ১৩ বছর খেলা ডিফেন্ডারের গলা হিমশীতল, "দলের প্রত্যেকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে চলেছি। কারণ তাঁদের সকলের কাছেই জটিল পরিস্থিতি হাজির হয়েছে। গতকালই যেমন আমাদের দুজন প্লেয়ার সাবওয়েতে কাটিয়েছে। বাড়িতে থাকার সাহসও ওঁরা পাচ্ছে না। অনেকের বাবাই দেশকে রক্ষা করার জন্য এখন যুদ্ধে। জাস্ট ওঁদের মানসিক অবস্থাটা বোঝার চেষ্টা করা হোক, যাঁদের বাবারা এখন ফ্রন্টলাইন সৈনিক।"

publive-image

"আবার এমনও একজন রয়েছে যে দু-একদিন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগই করে উঠতে পারেননি। সাধারণ ভাবেই পরিবারের কোনও খোঁজ খবর না পেয়ে সে ব্যাপক দুশ্চিন্তায় ভুগছে। এই সময়ে আমরা যেটা করতে পারি, তা হল, তাঁদের মানসিকভাবে পূর্ণ সমর্থন জুগিয়ে যাওয়া। যাতে তাঁরা এমন পরিস্থিতিতেও শান্ত থাকতে পারে। আমরা জানি এমন পরিস্থিতিতে সকলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা বেশ কঠিন। তাই এমন জটিল অবস্থায় মানসিকভাবে শান্ত থেকে পরিস্থিতির মোকাবিলা করা আসলে গুরুত্বপূর্ণ।"

মৃত্যু উপত্যকা ফেলে ক্রমশ জীবনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন এসকুরা, লুই কর্তেজরা। পিছনে ফেলে যাচ্ছেন একরাশ স্মৃতি, বন্ধু-পরিজন, যাঁদের ভাগ্য আপাতত অনিশ্চয়তার পেন্ডুলামে দোদুল্যমান।

Football russia Sports News Ukraine Flight Ukraine Ukraine Crisis eastern Ukraine Russia-Ukraine Row Russia-Ukraine Conflict Russian Missile Ukraine’s revolution ukraine woman
Advertisment