২০১১-য় ভারতের বিশ্বকাপ জয়। আর মাঠ পরিক্রমার সময়ে কোহলির কাঁধে শচীন তেন্ডুলকর। এখনও ভারতীয় ক্রিকেট সমর্থকদের স্মৃতিতে টাটকা। সেবারে কোহলি প্ৰথমবার বিশ্বকাপে খেলতে নেমেছিলেন। আর প্রত্যক্ষ করেছিলেন কীভাবে তাঁর আইডল ষষ্ঠবারের প্রচেষ্টায় বিশ্বকাপ জয়ী ট্রফির দখল নিলেন। যে কোনও ভারতীয় ক্রিকেট-পাগল সমর্থকের কাছে এই দৃশ্য ছিল স্বপ্নের মত। তারপরে গোটা দেশের আবেগের অনুরণন ঘটেছিল যেন কোহলির সেই বিখ্যাত ওয়াংখেড়ের মন্তব্যে, "২৩ বছর ধরে গোটা দেশের ভার বয়ে চলেছেন শচীন। এখন সময় হয়েছে ওঁকে আমাদের কাঁধে বয়ে নিয়ে যাওয়ার।
শচীনের অবসরের পরে কেটে গিয়েছে প্রায় একদশক। এই একদশকে কোহলি নিজেকে শচীনের সমকক্ষ হিসাবে আবির্ভাব ঘটিয়েছেন। তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন, ভারতের সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান কে, তিনি নাকি তাঁর পূর্বসূরি শচীন! তবে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতার আবহেই দুজনের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা একদম অটুট। কোহলি-শচীনের সম্পর্ক নিয়ে আস্ত মহাকাব্যই লেখা যায়। তবে সম্ভবত সবথেকে হৃদয়গ্রাহী ঘটনা ২০১৩-য় শচীনের ফেয়ারওয়েল টেস্টের পরে।
আরও পড়ুন: বাস্তেনের আগেই ০ ডিগ্রিতে গোল ছিল সুরজিতের! আক্ষেপ-হতাশায় বিষণ্ণ সাব্বির
মার্কিন সাংবাদিক গ্রাহাম বেন সিঙ্গারকে শচীন জানিয়েছেন, "ওহ, সেই ঘটনা এখনও মনে রয়েছে। সবেমাত্র ড্রেসিংরুমে ঢুকেছিলাম। চোখে জল নিয়ে প্রবেশ করি। আমি অবসর মুখে ছিলাম। তবে শেষ বল ফেস করার পরে নিজেকে জানাই, 'এখানেই শেষ! আর কোনওদিন জীবনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার হিসেবে দেশের জার্সিতে মাঠে নামবে না।' তাই নিঃশব্দে ড্রেসিংরুমের একপ্রান্তে বসে মাথায় টাওয়েল জড়িয়ে চোখের জল মুছছিলাম। আবেগে ভেসে যাচ্ছিলাম। কান্না থামাতে পারছিলাম না। বিরাট তারপরে আমার কাছে এসে সেই পবিত্র মাদুলি আমার হাতে তুলে দেয়, যেটা ওঁর বাবা ওঁকে দিয়েছিলেন।"
"নিজের কাছে কিছুক্ষণ রেখে ওঁকে ওটা ফিরিয়ে দিই। বলি, 'এটা অমূল্য। এটা তোমার কাছে থাকা প্রয়োজন। এটা আর কারোর নয়। স্রেফ তোমার। জীবনের শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত এটা আগলে রেখো। সেই মাদুলি ওঁকে ফিরিয়ে দিই। পুরো ঘটনাটাই ছিল ভীষণ আবেগের। এই ঘটনা আমার স্মৃতিতে আজীবন থেকে যাবে।"
বছর দুয়েক আগে কোহলি নিজেই এই ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছিলেন। এই ক্রিকেট শো-য়েই সেই ঘটনার বর্ণনা দিয়েছিলেন। কোহলি জানিয়েছিলেন, তাঁর জীবনের সেটাই অমূল্য সম্পদ ছিল। তাই কোনওরকম ইতস্তত বোধ না করেই শচীনের হাতে তা তুলে দিতে চেয়েছিলেন।
"আমরা সাধারণত নিজেদের কব্জিতে মাদুলি ধারণ করি। ভারতে অনেকেই করেন। তাই আমার বাবা আমাকেও একটা পবিত্র মাদুলি দেন। তবে আমি সেটা ব্যাগে রাখতাম। সেই সময় মনে হয়েছিল, এটাই আমার জীবনের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ। তাই শচীনকে দিতে চেয়েছিলাম। বলেছিলাম, 'বাবা আমাকে এটা দিয়েছিলেন। এর থেকে মূল্যবান আর কিছু দিতে পারব না। আমি স্রেফ জানাতে চাই আমাকে তুমি কতটা অনুপ্রেরণা জুগিয়েছ। আমাদের কাছে তুমি মানে কী! এটাই আমার ছোট্ট উপহার।'," জানিয়েছিলেন কোহলি।