/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/xNxqVRZW7QYbisIFmWs0.jpg)
Mohun Bagan SG: মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। (ছবি- মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট)
ISL Champion Mohun Bagan Super Giant: দু'ম্যাচ বাকি থাকতে রবিবারই লিগ-শিল্ড জিতে নিয়েছে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট। এনিয়ে পরপর দু'বার লিগ-শিল্ড জিতল জাতীয় ক্লাব। যা নিয়ে এখন ব্যাপক আলোচনা চলছে। কারণ, গড়ের মাঠের আরও দুই বড় ক্লাব ইস্টবেঙ্গল এবং মহামেডান স্পোর্টিং যে লিগ টেবিলের তলানিতে, সেখানেই দুর্দান্ত রেজাল্ট করে সবাইকে চমকে দিয়েছে সবুজ-মেরুন শিবির। প্রশ্ন উঠছে, মোহনবাগান পারলে বাকি দুই বড় ক্লাব কেন লিগ-শিল্ডে ভালো কিছু করতে পারছে না?
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/oU1P2tYFIxpgjgFADKgO.jpg)
আসলে, চলতি মরশুমের শুরুতেই মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট একের পর এক তারকা ফুটবলারকে সই করিয়েছিল। কখনও অস্ট্রেলিয়া তো কখনও আবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে তারকাদের নিয়ে এসে তারা দলে নিয়েছে। কিন্তু, সবসময় যে তারকা ফুটবলারকে সই করালেই সাফল্য মেলে, তা কিন্তু নয়। অনেক সময়ই দেখা যায় যে নামী তারকার ভিড় বেশি থাকলে, দলের মধ্যে অশান্তির সৃষ্টি হয়। কিন্তু, সেটা মোহনবাগানের ক্ষেত্রে হয়নি। অথবা, বলা যায় যে মোহনবাগান থেকে তেমন কোনও খবর মেলেনি। যার অর্থ, তারকা নির্বাচনের সঙ্গে ম্যান ম্যানেজমেন্টেও জোর দিয়েছিল বাগান শিবির।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/Zy2WIsYaD3B4YITJsg1K.jpg)
কোচ হোসে মোলিনা এই সাফল্যের পরও থেমে থাকতে চান না। তিনি বলছেন, তাঁদের আরও ট্রফি চাই। ডুরান্ড তাঁদের ঘরে, লিগ-শিল্ড তাঁদের ঘরে, এবার তাঁরা আইএসএল কাপ জিততে চান। অর্থাৎ, যে তিনটি মূল টুর্নামেন্টে তারা এবছর খেলছেন, সেই তিনটি টুর্নামেন্টেই তাঁরা চ্যাম্পিয়ন হতে চান। এরপর রয়েছে এএফসি কাপ। সঙ্গে নিতে হবে সুপার কাপের প্রস্তুতিও। এই সব টুর্নামেন্টও তাঁরা জিততে চান বলেই বাগান কোচ জানিয়েছেন। যার অর্থ পরিষ্কার, তাদের খেলা টুর্নামেন্টের সবক'টাতেই জিততে মরিয়া বাগান শিবির।
মোহনবাগান কোচের এই উচ্চাকাঙ্ক্ষার পিছনে রয়েছে, তাঁর সাফল্যের রসায়ন। সেই রসায়ন হল:-
১) ফুটবলার স্কাউটিং: কীভাবে মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ফুটবলারদের তুলে আনে বা বাছাই করে। এক্ষেত্রে দুটো ভাগ আছে। সেটা হল, কিছু ফুটবলারকে অন্য ক্লাব থেকে তুলে আনা হয়। আর, কিছু ফুটবলার ইউথ ডেভলপমেন্টের দল থেকে মূল দলে উঠে আসে। যারা ইউথ ডেভলপমেন্ট থেকে মূল দলে এসেছেন, তেমন ফুটবলারও কম নেই দলে। যেমন- রাজ বাসফোর, দীপেন্দু বিশ্বাসরা এই মরশুমে দুর্দান্ত ফুটবল খেলেছেন। রাজ তেমন সুযোগ পাননি। কিন্তু, দীপেন্দু ডিফেন্সে সাবলীলভাবে খেলেছেন। কখনও রাইট ব্যাক তো কখনও লেফট ব্যাক, কখনও স্টপার- সব পজিশনই তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞতার সঙ্গে সামলেছেন। যা দীপেন্দুরা অর্জন করেছেন কোচ, কোচিং স্টাফ এবং দলের সিনিয়র ফুটবলারদের সাহায্যে। দীপেন্দু নিজেই স্বীকার করেছেন শুভাশিস বসু, জেমি ম্যাকলারেনরা তাঁকে ঠিক কীভাবে অনুপ্রাণিত করেছেন। এভাবেই মোহনবাগান তাদের স্কাউন্টিং প্রসেস সারা বছর ধরেই চালিয়ে যাচ্ছে।
আর, এর ফলে শুধু আইএসএলই নয়। বয়সভিত্তিক লিগগুলোতেও লাগাতার সাফল্য পেয়ে আসছে মোহনবাগান। পাশাপাশি, ফুটবলারদের সই করানোর সময় তাঁদের চোট-আঘাত পরিস্থিতির কথা বিচার করে নেন বাগানের রিক্রুটাররা। সেটা বিদেশি এবং দেশি, সব খেলোয়াড়দের ক্ষেত্রেই সমানভাবে সত্যি। বিশেষ ভাবে দেখা হয়, তাঁর কী চোট ছিল, কতদিনের চোট ছিল, কবে সুস্থ হয়েছেন- যাবতীয় পরিসংখ্যান। এই ব্যাপারে পিছিয়ে পড়ছে বাংলার বাকি দুই বড় ক্লাব। তারা যে তারকাদের দলে নিচ্ছে না, তা নয়। সেই সব তারকারাও যে একেবারে খারাপ, তা না। কিন্ত, সমস্যা হচ্ছে যে, দেখা যাচ্ছে- মরশুমের মাঝপথে ওই সব তারকারা চোটের কবলে পড়ছেন। যার জেরে হয় তাঁরা গোটা মরশুমের জন্যই ছিটকে যাচ্ছেন। নয়তো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে খেলতে পারছেন না।
২) কোচ হোসে মোলিনার পরিকল্পনা: চোট-আঘাত যেমন অন্যান্য দলের ক্ষেত্রে আছে, মোহনবাগানের ক্ষেত্রেও আছে। কিন্তু, কোচ হোসে মোলিনা যেভাবে দলটাকে খেলিয়েছেন, কখনও অনিরুদ্ধ থাপা, কখনও আপুইয়ার আলতেরা চোট পেয়েছেন। যার ফলে, বেশ কিছু ম্যাচে তাঁরা খেলতে পারেননি। কিন্তু, আবার এই সব খেলোয়াড়রা মাঠে ফিরেছেন। চোট পাওয়া খেলোয়াড়দের পরিবর্ত হিসেবে যে সব খেলোয়াড়রা মাঠে নেমেছেন, তাঁরাও কিন্তু ভালো খেলেছেন। যার ফলে, বলতে গেলে রিজার্ভ বেঞ্চও হতাশ করেনি মোলিনাকে। বাগান কোচ রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের সমানভাবে সুযোগ দিয়েছেন, তাঁদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর সুযোগ দিয়েছেন। যার, সুফল হিসেবেই তিনি রিজার্ভ বেঞ্চের খেলোয়াড়দের ভালো পারফরম্যান্স পেয়েছেন।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/1B5wvgJzvNPV7PP7WWFd.jpg)
৩) ম্যান ম্যানেজমেন্ট: মোহনবাগান ম্যান ম্যানেজমেন্টও সামলেছে দুর্দান্তভাবে। দলে চার-পাঁচ জন বিশ্বকাপার। অনেক সময়ই দেখা যায় যে তারকাদের মধ্যে ইগোর সমস্যা দেখা দিচ্ছে। যাঁর গোলে রবিবার মোহনবাগান জয় পেয়েছে, সেই দিমিত্রিকে নিয়েও অনেক গুঞ্জন শোনা গিয়েছিল। অনেকে তো এমনও বলেছিলেন যে দিমিত্রির এবার মোহনবাগান ছেড়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু, তারপরও দেখা গেল যে দিমিত্রি গোল করলেন। আরও একবার মোহনবাগান সমর্থকদের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন। আর, এর পিছনেও রয়েছে মোহনবাগান কর্তাদের অসাধারণ ম্যান ম্যানেজমেন্টের কৃতিত্ব। শুধু তাই নয়, মোহনবাগান কোচ হোসে মোলিনাও প্রত্যেক খেলোয়াড়ের সঙ্গে ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। যা তাঁকে সাফল্য দিচ্ছে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/URqif9Y7Rgzt2iFuZvoN.jpg)
৪) মূল দল ধরে রাখা: দীর্ঘদিন ধরে মোহনবাগান মূল দল ধরে রেখেছে। মোহনবাগান আর এটিকে সংযুক্ত হওয়ায় লাভই হয়েছে। মূল দল ধরে রাখাকে এটিকে বরাবরই বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। ফলে, মোহনবাগানের সঙ্গে সংযুক্তির পর তারা আরও শক্তিশালী হয়েছে। তারকা ফুটবলার পেয়েছে এই সংযুক্ত দল। সব মিলিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মূল দলকে ধরে রাখলে যে সুবিধা মেলে, প্রত্যেকে প্রত্যেককে জানেন, তাঁদের খেলার ধাঁচ জানেন। পাশাপাশি, ভারতীয় ফুটবলে মোহনবাগানের গুরুত্বের কথাও তাঁরা উপলব্ধি করতে পারছেন। এই উপলব্ধিও মোহনবাগানকে ভারতসেরা করতে খেলোয়াড়দেরকে সাহায্য করেছে। এই ব্যাপারে মনে রাখা দরকার, দেশের অন্যতম সেরা সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার আনোয়ার আলি মরশুমের মাঝপথে ইস্টবেঙ্গলে যোগ দিয়েছেন। তা নিয়ে প্রচুর বিতর্কও হয়েছে। গত মরশুমে আনোয়ার আলি মোহনবাগানে নিয়মিত স্টপারের ভূমিকায় খেলেছেন। তাঁর দল ছাড়ায় মোহনবাগান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু, সেই ক্ষতি মোহনবাগান ভরাট করতে পেরেছে তাদের ইউথ ডেভলপমেন্টের সাহায্যে।
/indian-express-bangla/media/media_files/2025/02/25/pyz9S773DeEOLiEBtGpI.jpg)
এই মুহূর্তে মোহনবাগান পরের মরশুমের প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে। লেফট ব্যাক পজিশনে তারা আরও একজন তারকাকে টার্গেট করেছে। যদিও তাঁর নাম এখনও দল প্রকাশ্যে আনছে না। কারণ, মরশুমের এখনও বেশ কিছুটা সময় বাকি। তবে মোহনবাগান একজন সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার বা স্টপারের খোঁজ করছে। তেমনই লেফট ব্যাট, একজন ভালোমানের প্লে মেকারকে পরের মরসুমের জন্য বাগান দলে নেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য লিগ-শিল্ডে হ্যাটট্রিক। আর, সেকথা মাথায় রেখেই তারা পরের মরশুমের জন্য দলগঠন শুরু করে দিয়েছে।