রবিউল ইসলাম বিদ্যুৎ, ঢাকা
কড়া ‘হেডমাস্টার’ দিয়েই সাকিবদের শাসন করতে চায় বিসিবি! বেশ কিছুদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল চন্ডিকা হাথুরুসিংহের কথা। দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ হয়ে আসছেন তিনি। শেষ পর্যন্ত হলও তাই। বাংলাদেশ জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব নিতে চলেছেন হাথুরুসিংহে। তাঁর সঙ্গে বিসিবির দুই বছরের চুক্তি হবে।
ইংল্যান্ড সিরিজের আগে ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় পা রাখবেন হাথুরুসিংহে। অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই বোঝা গিয়েছিল হাথুরুসিংহে বাংলাদেশ দলের কোচ হতে চলেছেন। ২০১৪ সালের মে মাসে যখন কোচ হয়ে এসেছিলেন হাথুরু তখনও নিউ সাউথওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্ব ছেড়েই এসেছিলেন।
কাকতালীয়ভাবে এবারও সেটাই করলেন। প্রথম মেয়াদে হাথুরুসিংহে প্রায় ৩ বছর কাটিয়ে গিয়েছেন। তার মেয়াদে বাংলাদেশ অনেক সাফল্যের দেখা পেয়েছিল। তবে হাথুরুসিংহের বিদায়টা মোটেও সুখকর ছিল না। শ্রীলঙ্কা জাতীয় দলের কোচ হওয়ার জন্যই তিনি ২০১৭ সালে বাংলাদেশ দলের দক্ষিণ আফ্রিকার সফর চলাকালেই পদত্যাগ পত্র পাঠিয়ে দেন। হাথুরুসিংহের এমন সিদ্ধান্তে তখন সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল!
বাংলাদেশ জাতীয় দলের দায়িত্ব ছেড়ে শ্রীলঙ্কার কোচিং মেয়াদ মোটেই সুখকর হয়নি হাথুরুসিংহের। বোর্ড কর্মকর্তা ও ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাঁর সবসময় লেগেই ছিল। এমনকি দেশটির ক্রীড়ামন্ত্রী হাথুরুসিংহের বেতন নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছিলেন। যার ফলশ্রুতিতে হাথুরুসিংহেকে বরখাস্ত করে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট।
প্রথম মেয়াদে বাংলাদেশের কোচ থাকাকালীন সাকিব-মাশরাফিদের সাথে বিতর্কে জড়িয়েছেন হাথুরুসিংহে। তার অনাগ্রহের কারণেই মাশরাফি বাধ্য হয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ছাড়তে। সেই মাশরাফি এখনো ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ২৫ বছরের তরুণের মতো পারফর্ম করছেন। এবারের বিপিএলে ১০ ম্যাচে ৭.৫৫ ইকোনমি রেটে তুলে নিয়েছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২টি উইকেট।
সাকিবের সঙ্গেও হাথুরুর দ্বন্দ্ব লেগেই ছিল। এক কথায় বাংলাদেশ জাতীয় দলের ‘কড়া হেডমাষ্টার’ ছিলেন হাথুরুসিংহে। অবশ্য তার মেয়াদে বাংলাদেশ দল অভাবনীয় কিছু সাফল্যও পেয়েছিল। ২০১৫ সালে ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ।
সে বছরই অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের উঠেছিল মাশরাফিরা। এছাড়া ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে বাংলাদেশ দল সেমিফাইনালে খেলেছিল। শুধু রঙিন পোশাকেই নয়, সাদা পোশাকেও হাথুরুর মেয়াদে বাংলাদেশ দল বেশ কিছু বড় জয় তুলে নিয়েছিল। ঘরের মাঠে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়াকে যেমন হারিয়েছে, জয় এসেছিল শ্রীলঙ্কার মাটিতে শততম টেস্টেও।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা লাগামহীন কথাবার্তা বলে বিসিবিকে বারবার বেকায়দায় ফেলছে! বিপিএল শুরুর আগে প্রকাশ্যে সমালোচনা করে বোর্ডকে একহাত নিয়েছেন সাকিব। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেছেন প্রাক্তন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাও। মাঠের ভিতরেও বেশ কিছু অস্বস্তিকর ঘটনাও ঘটেছে। যা বোর্ডের বিরুদ্ধেই গিয়েছে। নিজেদের দূর্বলতার কারণে সেই জায়গাগুলোতে বোর্ড বড়সড় পদক্ষেপ নিতে পারেনি। মনে করা হচ্ছে, হাথুরুসিংহের মতো ‘কড়া হেডমাস্টার’ দিয়ে সাকিবদের শাসন করতে চাইছে বিসিবি! কারণ হাথুরুসিংহে এক বিসিবি সভাপতি ছাড়া কারও ধার ধারেন না!
এবারও যে তিনি সেই ক্ষমতাই ভোগ করবেন সেটি বুঝতে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ হতে হয় না! সাকিবও বোধহয় সেটা আগেভাগে বুঝে গিয়েছেন। এজন্য তিনি হাথুরুসিংহে প্রসঙ্গে দুটি শব্দই খরচ করলেন,‘ নো কমেন্টস’।