২৮ এপ্রিল, ২০০৭। ব্রিজটাউন, বার্বেডোজ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্রিকেট ওয়ার্ল্ড কাপের ফাইনালে মুখোমুখি অস্ট্রেলিয়া-শ্রীলঙ্কা। হওয়ার কথা ছিল সমানে সমানে টক্কর। হয়ে দাঁড়াল একজনের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের দৌলতে শ্রীলঙ্কার সর্বনাশ। তাঁর নাম অ্যাডাম গিলক্রিস্ট। এবং সেদিন তাঁর অবিস্মরণীয় ব্যাটিংয়ের নেপথ্য নায়ক হয়ে রয়ে গেল একটি স্কোয়াশ বল।
ঠিকই পড়েছেন। সেদিন ব্যাট করতে নামার সময় বাঁ হাতের গ্লাভের মধ্যে স্কোয়াশ বল পুরে নিয়েছিলেন 'গিলি'। যার ফলে ক্রিকেটবিশ্ব দেখল যে কোনো বিশ্বকাপ ফাইনালের সম্ভবত সেরা ব্যাটিং পারফরম্যান্স, ১০৪ বলে অনবদ্য ১৪৯ রান।
অথচ তখনও পর্যন্ত টুর্নামেন্টটা খুব একটা ভালো যায় নি গিলক্রিস্টের। উল্টোদিকে তাঁর ওপেনিং পার্টনার ম্যাথু হেডেন দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু অপেক্ষাকৃত হালকা ব্যাট এবং একটু অদ্ভুত গ্রিপের কারণে এমন সব শট নিতে গিয়ে আউট হচ্ছিলেন গিলি, যেসব শট একসময় তাঁর কাছে জলভাত ছিল। বিশেষভাবে ভোগাচ্ছিল পয়েন্টের দিকে স্লাইস করা ড্রাইভটা। তা ম্যাচের আগের রাতে তিনি ঠিক করলেন, পরের দিন স্কোয়াশ বল ব্যবহার করে দেখাই যাক না।
বুদ্ধিটা তাঁকে দিয়েছিলেন প্রাক্তন স্কোয়াশ খেলোয়াড় বব মিউলম্যান। বাঁ হাতের দস্তানার মধ্যে স্কোয়াশ বল পুরে নিলে 'বটম হ্যান্ড'-এর প্রভাব অনেকটাই কমে যাবে, বলেছিলেন বব। ব্যাপারটা অস্বস্তিকর সন্দেহ নেই, কিন্তু ফলাফল হয়েছিল চমকপ্রদ। শট খেলার সময় হাত না ঘোরার ফলে তাঁর স্বাভাবিক শটগুলো কার্যত খেললেন না গিলি।
বিপক্ষের অধিনায়ক মাহেলা জয়বর্ধনে বুঝলেনই না, এত সযত্নে সাজানো ফিল্ড গিলক্রিস্টকে বিন্দুমাত্র অসুবিধের মধ্যে ফেলতে পারল না কেন। অফসাইড ব্লক করে রেখেছিলেন মাহেলা। গিলি আপাতদৃষ্টিতে অক্লেশে সোজা ব্যাটে খেলে দিলেন। তুলে তুলে চার ছয়ও মারলেন, কোনো ঝুঁকি না নিয়ে। নিজের 'স্কোরিং এরিয়া' আমূল পাল্টে ফেললেন। এবং ওয়ার্ল্ড কাপ ফাইনাল হয়ে দাঁড়াল 'দ্য অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ম্যাজিক শো'।