Advertisment

World Cup Football 2018 Trivia: বিশ্বকাপ ট্রিভিয়া, ইতিহাস থেকে (পঞ্চম পর্ব)

World Cup Football Trivia 2018: মৃত্যুশয্যায় বাহরামোভকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, "বলটা গোললাইন পেরিয়েছিলো?" উত্তরে নাকি তিনি একটাই শব্দ বলেছিলেন, "স্তালিনগ্রাদ"। ফুটবলের ইতিহাস খুঁড়ছেন ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মিঠুন ভৌমিক।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Argentina

World Cup Football 2018 Trivia: বিশ্বকাপ ট্রিভিয়া, ইতিহাস থেকে- পর্ব ৫

মিঠুন ভৌমিক

Advertisment

Football World Cup Trivia 2018: দেখতে দেখতে কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল পেরিয়ে বিশ্বকাপের একেবারে শেষ লগ্নে আমরা। ফাইনালে মুখোমুখি ফ্রান্স এবং ক্রোয়েশিয়া।গত এক সপ্তাহে যা যা হল তার মধ্যে সবথেকে উল্লেখযোগ্য সম্ভবত বেলজিয়ামের চমকপ্রদ উত্থান। পরপর দুটো কঠিন ম্যাচে জাপান এবং ব্রাজিলকে হারিয়ে তারা সেমিফাইনালে চলে যাবে, সম্ভবত তাদের অতি বড় সমর্থকও ভাবেননি। কিন্তু ফুটবল মহান অঘটনের খেলা। বলা হয়, টেনিস বা ক্রিকেটের মত ফুটবল ক্ষমাশীল নয়। এক লহমার ভুল পণ্ড করে দিতে পারে যাবতীয় পরিশ্রম।

জাপানের সঙ্গে ম্যাচটাই ধরা যাক। - গোলে পিছিয়ে বেলজিয়াম, খেলা দ্বিতীয়ার্ধে গড়িয়ে গেছে। একটা আপাত নিরীহ হেড থেকে গোল হল। সময় গোলটা না-হলে খেলার মোড় ঘোরে না। তার আগে বেলজিয়ামের কাছে সুযোগ আসেনি এমন নয়, একটা শট পোস্টে লেগে ফিরেছে। কিন্তু প্রথম গোলের পরেই দ্বিতীয় তৃতীয় গোল , এবং একটাও পড়ে পাওয়া, বা খেলার ভাষায় "সফট" গোল নয়। ব্রাজিলের সঙ্গে খেলায় ফার্নান্দিনহোর কাঁধে লেগে  সেমসাইড। অতঃপর দারুণভাবে ট্যাক্টিকাল গেম খেলে যাওয়া এবং দ্বিতীয় গোল, পরিকল্পনা মাফিক।

আরও পড়ুন: FIFA World Cup 2018: বিশ্বকাপ ট্রিভিয়া-ইতিহাস থেকে

বেলজিয়াম আক্রমণের প্রধান মুখ লুকাকু, জাপান এবং ব্রাজিল দুই ম্যাচেই পেনিট্রেটিভ জোনে বলের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। দুটো ম্যাচেই প্রথম গোল পড়ে পাওয়া, এবং ব্রাজিলের সঙ্গে ম্যাচে কুর্তোয়ার অতগুলো সেভ এবং ব্রাজিলকে একটি সম্ভাব্য পেনাল্টি না-দেওয়া বেলজিয়ামের পক্ষে যায়। কাজেই ভাগ্যের কিছুটা সাহায্য না-পেলে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের জেতারই কথা ছিল, যারা পরপর দুটো হাইভোল্টেজ ম্যাচ খেলে এসেছে।  

যাঁরা ফ্রান্স-বেলজিয়াম খেলা দেখলেন তাঁরা খেয়াল করবেন ১৯ মিনিটের মাথায় বেলজিয়ামের অ্যাজারের নেওয়া শট ফ্রান্সের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় ভারানের মাথায় লেগে অল্পের জন্য বারের ওপর দিয়ে চলে যায়। ওই সময় বেলজিয়াম গোলটা পেয়ে গেলে তাদের পক্ষে সহজেই ব্রাজিল ম্যাচের স্ট্র্যাটেজিতে চলে যাওয়া সম্ভব হত। প্রতিপক্ষকে অধৈর্য্য করে তুলে অসতর্ক অবস্থায় প্রতি আক্রমণে গোল করে খেলাটা হাতের মুঠোয় আনাও সম্ভব হত। এইসব কিছুই হয়নি, এবং আগের দুটো ম্যাচের পুনরাবৃত্তি করে ম্যাচ জুড়ে বারবার বেলজিয়ামের আক্রমণভাগের খেলোয়াড়েরা ব্যর্থ হয়েছেন প্রথম গোলটা করতে গিয়ে।

এর আগে বেলজিয়াম সেমিফাইনালে উঠেছিল সেই ১৯৮৬ সালে, প্রবাদপ্রতিম এনজো শিফোর বয়স তখন কুড়ি, তাঁর প্রথম বিশ্বকাপ সেটা। শিফো বেলজিয়ামের সেমিফাইনালে ওঠার পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন। পরের তিনটে বিশ্বকাপেও শিফো বেলজিয়ামের হয়ে খেলেছেন, তার মধ্যে ১৯৯০ সালের প্রতিযোগিতায় উরুগুয়ের বিরুদ্ধে দূরপাল্লার শটে গোলটা স্মরণীয়। পরবর্তীকালে বিশ্বকাপের সেরা গোলের তালিকায় দশ নম্বরে স্থান পায় গোলটি।

১৯৮৬' ম্যাচেই মারাদোনার অসামান্য স্কিলে - হেরে যায় বেলজিয়াম। দুটি গোলই মারাদোনার, ইউটিউবের সৌজন্যে গোলদুটো বহুবার দেখা যায়, এবং বারবার দেখেও পুরোনো হওয়ার জো নেই।

পরের সেমিফাইনালের কথায় চলে আসি। ইংল্যান্ড-ক্রোয়েশিয়ার ম্যাচে কী হবে বলা কঠিন ছিলো। ইংল্যান্ড খুবই তরুণ শৃঙ্খলাবদ্ধ দল, ক্রোয়েশিয়া এবারের অন্যতম সেরা মাঝমাঠ। ইংল্যান্ডের সঙ্গী ছিলো বিশ্বকাপে দীর্ঘদিনের ব্যর্থতা ও অনভিজ্ঞতা, ক্রোয়েশিয়ার সমস্যা ছিলো পরপর দুটো লম্বা ম্যাচ খেলার ক্লান্তি। ইংল্যান্ডের প্রথমার্ধের সুযোগ নষ্ট এবং ক্রমাগত পরিশ্রম ম্যাচটা ক্রোয়েশিয়াকে জিতিয়ে দেয়। তিনটে ম্যাচেই অতিরিক্ত তিরিশ মিনিট করে খেলার ফলে ক্রোয়েশিয়া ইতিমধ্যে একটা গোতা নব্বই মিনিটের ম্যাচ খেলে ফেলেছে।

এর আগে ১৯৯৮ সালে ক্রোয়েশিয়া সেমিফাইনাল অবধি পৌঁছেছিল। সেবার - গোলে তারা হেরে যায় ফ্রান্সের কাছে। মজার ব্যাপার হলো এবারেও ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ সেই ফ্রান্স। '৯৮র ম্যাচে ডাভর সুকেরের গোলে এগিয়ে থেকেও পরপর দুগোল হজম করে ম্যাচটা হেরে যায় ক্রোটরা। দুটো গোলই করেন ফ্রান্সের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় থুরাম। প্রসঙ্গত, থুরাম সমগ্র ফুটবল জীবনে প্রায় ১৪৭ টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে ওই দুটো গোলই করেছেন।

আরও পড়ুন, History of Soccer: ফুটবলায়নের দিনগুলি (দ্বিতীয় পর্ব)

ইংল্যান্ড সেমিফাইনালে ওঠার পর থেকেই শোনা যাচ্ছিল পুরনো গানের কলি "ইটস কামিং হোম" ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপ জিতেছিলো ইংল্যান্ড, ঘরের মাঠে। আন্তর্জাতিক ফুটবল তখন অনেক সরল ছিল বিশ্বকাপেও এখনকার মত আটঘাট বেঁধে সবকিছু হতো না। ফলে ইংল্যান্ড বেশ কিছু সুবিধা নিয়ে নেয়। প্রথমত, তাদের সব ম্যাচের আয়োজনই হয়েছিলো ওয়েম্বলিতে। বাকি সব দল যখন ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন শহরে খেলছে, তখন তারা গোটা প্রতিযোগিতা খেলেছিল একটাই মাঠে। দ্বিতীয়ত, '৬৬র রেফারিদের নেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়ে বহু বিতর্ক আছে। এই সেই বছর যখন থেকে ইংল্যান্ড-আর্জেন্তিনার ডুয়েল শুরু।

সেবার কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি ইংল্যান্ড আর্জেন্তিনা। ইংল্যান্ড খুব ভালো ভালো খেলোয়াড় নিয়েও তার আগে খুব একটা দারুণ খেলছিল না, গ্রুপ লিগের চারটে ম্যাচই তারা গোলশূন্য ড্র করে। আর্জেন্তিনা বরং ভালো খেলছিল। অন্যতম ফেভারিট পশ্চিম জার্মানির সঙ্গে গোলশূন্য ড্র তাদের মনোবল বাড়ায়। যাই হোক, খেলা শুরু হওয়ার ৩৫ মিনিটের মাথায় রেফারি রুডল্ফ ক্রেইটলিন আর্জেন্তিনা ক্যাপ্টেন আন্তোনিও র‌্যাটিনকে মার্চিং অর্ডার দেন। অভিযোগ,র‌্যাটিন নাকি রেফারির সমস্ত সিদ্ধান্তেরই প্রতিবাদ করছিলেন, তর্ক করছিলেন। যদিও ক্রেইটলিন-র‌্যাটিনপরষ্পরের ভাষা জানতেন না। সেদিন আর্জেন্তিনা প্রচুর ফাউল করছিল বলেও রিপোর্ট আছে। বহিষ্কারের নির্দেশ পেয়ে র‌্যাটিন সেদিন মাঠ ছেড়ে না বেরিয়ে তর্ক চালিয়ে যান, ফলে ফিফার অফিসারেরা এসে তাঁকে এসকর্ট করে বের করে দেন। তারপরেও র‌্যাটিন মাঠের বাইরেই পাতা লাল কার্পেটে বসে থাকেন (কার্পেটটি ভি ভি আইপিদের জন্য পাতা ছিল, যাঁদের মধ্যে স্বয়ং রানিও ছিলেন)

তখনও ফুটবলে হলুদ লাল কার্ডের ব্যবহার শুরু হয়নি। এই ঘটনার পর থেকেই তা চালু হয়।ম্যাচের বেশিটাই দশজনে খেলেও আর্জেন্তিনা সমানে সমানে লড়ে মাত্র একগোলে হারে। খেলা শেষের পর ব্রিটিশ কোচ র‌্যামসে আর্জেন্তিনার ফুটবলারদের "অ্যানিম্যালস" বলেন।

এরপর থেকে যতবার ইংল্যান্ড- আর্জেন্তিনার খেলা হয়েছে ততবারই মাঠ মাঠের বাইরে উত্তপ্ত হয়েছে। ১৯৮২ সালের ফকল্যান্ড যুদ্ধে দুটি দেশ জড়িয়ে পড়ার পর পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়। এরপরই ১৯৮৬' ম্যাচ, মারাদোনার "হ্যান্ড অফ গড' গোল। ম্যাচেই মারাদোনা পরে আরো একটা গোল করেন, ইংল্যান্ডের প্রায় অর্ধেক দলকে ড্রিবল করে। গোলটা শতাব্দীর সেরা আখ্যা পেলেও স্বয়ং মারাদোনা সেদিনের দুটি গোলের মধ্যে প্রথমটাকেই বেশি প্রিয় বলেছিলেন, কারণ গোলটা বিশেষ করে ইংরেজদের রাগের কারণ ছিল। ম্যাচ -১ জিতে উঠে পরবর্তীকালে মারাদোনা লিখলেন,

“It was as if we had beaten a country, not just a football team. Although we had said before the game that football had nothing to do with the Malvinas war, we knew they had killed a lot of Argentine boys there, killed them like little birds. And this was revenge.”

আরও পড়ুন, FIFA World Cup 2018: চিন-জার্মানির সফর করবে বাংলায় জয়ী

ফিরে আসি ১৯৬৬' ইংল্যান্ডের কথায়। ফাইনালে ইংল্যান্ড মুখোমুখি হলো পশ্চিম জার্মানির। নব্বই মিনিটের খেলা - শেষ হওয়ার পরে অতিরিক্ত সময়ে জর্জ হার্স্টের শট ক্রসবারে লেগে নিচে পড়ে ব্যাকস্পিন করে ফিরে আসে। ইংল্যান্ড দাবি করে ওটা গোল, জার্মানীর দাবি বল গোললাইনে ড্রপ খেয়েছে। আজেরবাইজানের লাইন্সম্যান তোফিক বাহরামোভ রেফারিকে ইঙ্গিতে বলেন "গোল" ইংল্যান্ড - এগিয়ে যায়, পরে আরো একটা গোল করে বিশ্বকাপ পাওয়া সুনিশ্চিত করে।

বিতর্কের অবসান ঘটেনি যদিও। পরে বাহরামোভ বলেন, বল ক্রসবারে লেগেছে তিনি বোঝেন নি, ভেবেছিলেন জালের একাংশে লেগে নেমে এসেছে। গোললাইন পেরিয়েছে কিনা তিনি দেখতে পাননি। ১৯৯০ সালে একটি বিশেষজ্ঞ দল খতিয়ে দেখে রায় দেয় যে বল যথার্থভাবেই গোলের বাইরে ছিল। এর উত্তরে ২০১৬ সালে আরও একটা গবেষণা হয় এবং বলা হয়, ওটা গোলই।

বিতর্কিত সিদ্ধান্তের পর থেকেই বাহরামোভকে "দ্য রাশিয়ান লাইন্সম্যান" বলে ডাকা হতে থাকে, আজেরবাইজান তখন সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত বলে তাঁর আসল পরিচয় জানার দরকার আর পড়ে না কারুর। জার্মানরা পরবর্তীকালে এক চমকপ্রদ কাহিনী ছড়ায়। সেই কাহিনী অনুযায়ী বাহরামোভের পরিবারের লোকজন স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে জার্মান সেনার হাতে মারা যায়। সেই রাগেই নাকি তড়িঘড়ি জার্মানির বিরুদ্ধে গোলটা দিতে চেয়েছিলেন তিনি। তারা এও বলে, যে মৃত্যুশয্যায় বাহরামোভকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো, "বলটা গোললাইন পেরিয়েছিলো?" উত্তরে নাকি তিনি একটাই শব্দ বলেছিলেন, "স্তালিনগ্রাদ"

FIFA World Cup 2018 FIFA World Cup Football Trivia Calcutta Football League ISL 2018
Advertisment