ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের আলোচনা প্রস্তাবের কয়েক ঘন্টা পরে প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের তরফে 'আলোচনা'র জন্য টোকিও অলিম্পিক ব্রোঞ্জ পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া এবং রিও অলিম্পিক পদক বিজয়ী সাক্ষী মালিক সহ ভারতের শীর্ষ কুস্তিগীরদের একটি প্রতিনিধি দল পৌঁছেছেন অনুরাগ ঠাকুরের বাসভবন। তাদের সঙ্গে ছিলেন কৃষক নেতা রাকেশ টিকাইত।
জারি রয়েছে কুস্তীগিরদের প্রতিবাদ। দাবি একটাই ব্রিজভূষণের গ্রেফতারি। আন্দোলনের জেরে বিশ্বমঞ্চে মুখ পুড়ছে দেশের, ফের কুস্তিগীরদের সঙ্গে আলোচনার বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে আলোচনা, আশ্বাস সত্ত্বেও প্রতিবাদী কুস্তিগীররা তাদের সিদ্ধান্তে অনড়। এবার প্রতিবাদী কুস্তিগীরদের পাশে থাকার বিরাট বার্তা দিল কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রীঅনুরাগ ঠাকুর বলেছেন ‘সরকার আলোচনার জন্য প্রস্তুত’।
সরকার আবারও কুস্তিগীরদের আলোচনার আমন্ত্রণ জানিয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর। ক্রীড়ামন্ত্রী টুইট করেছেন, “সরকার কুস্তিগীরদের সঙ্গে তাদের সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে প্রস্তুত। এর জন্য আমি আবারও কুস্তিগীরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছি”।
এর আগে, অলিম্পিক পদক বিজয়ী বজরং পুনিয়া এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছে শনিবার (৩ জুন) রাতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কুস্তিগীররা এক বৈঠক করেছিলেন। পুনিয়া জানিয়েছেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সমস্যা সমাধানের বিষয়ে কুস্তিগীরদের আশ্বাস দিয়েছেন’।
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি, বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক এবং ভিনেশ ফোগাট সহ প্রায় ৩০ জন কুস্তিগীর যন্তর মন্তরে একটি ধর্নায় বসেছিলেন, যৌন হয়রানির অভিযোগে ব্রিজ ভূষণ শরণ সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে। ১৯ জানুয়ারি, কুস্তিগীররা ক্রীড়া মন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুরের সঙ্গে দেখা করেন। সেই সময়ও তিনি তাদের ব্রিজভূষণের বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন।
এর পরে, ২৩ এপ্রিল, কুস্তিগীররা আবার যন্তর মন্তরে ধর্নায় বসেন। ২৪ এপ্রিল, ক্রীড়া মন্ত্রক বলেছিল যে ভারতীয় অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ৪৫ দিনের মধ্যে রেসলিং ফেডারেশনের কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন পরিচালনা করার জন্য একটি অ্যাড-হক কমিটি (অস্থায়ী কমিটি) গঠন করবে।৭ মে রেসলিং ফেডারেশনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল, যা বাতিল করেছে ক্রীড়া মন্ত্রক।
২৮ মে, কুস্তিগীররা নতুন সংসদের কাছে একটি মহিলা মহাপঞ্চায়েতের ডাক দেন। পুলিশ তাদের আটক করে এবং যন্তর মন্তর থেকে তাদের এই আন্দোলন উঠিয়ে দেওয়া হয়। এর পরে কুস্তিগীররা হরিদ্বারের গঙ্গায় পদক বিসর্জনের সিদ্ধান্ত নেন। কুস্তিগীরদের পাশে এসে দাঁড়ান ভারতীয় কিষান ইউনিয়নের নেতা রাকেশ টিকাইত। কুস্তিগীরদের সমর্থনে, কৃষকরা মুজাফফরনগরে এবং হরিয়ানার কুরুক্ষেত্রে ২ জুন একটি খাপ মহাপঞ্চায়েতের আয়োজন করেছিল।
এদিকে, মঙ্গলবার (৬ জুন), দিল্লি পুলিশ তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ব্রিজ ভূষণের সহকর্মী এবং তার বাসভবনে কর্মরত ব্যক্তিদের বয়ান রেকর্ড করেছে। কুস্তিগীররা সাফ জানিয়েছেন, ‘ন্যায়বিচার না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে’।
তবে কেন্দ্রের তরফে এই আশ্বাস সম্পর্কে বুধবার কুস্তিগীররা বলেছেন, ‘সরকারের কাছে তাদের একটাই দাবি, তা হল রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান ব্রিজ ভূষণের গ্রেফতারি। কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর আবার আলোচনার জন্য কুস্তিগীরদের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। সমস্ত দাবি অস্বীকার করে, ব্রিজ ভূষণ ক্রীড়ামন্ত্রীর সঙ্গে কুস্তিগীরদের বৈঠকের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি। কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক এপ্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিবাদ শেষ করছি না। আমরা দেখব সরকার আমাদের কাছে কী প্রস্তাব দেবে। আমাদের প্রধান দাবি রেসলিং ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউএফআই) প্রধান ব্রিজ ভূষণের গ্রেফতারি’।