ক্রিকেটের সঙ্গে বিতর্ক অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে গিয়েছে আজকাল। ২০২১ ক্রিকেট সূচিতে ঠাসা ছিল। টি২০ ওয়ার্ল্ড কাপ থেকে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ফাইনাল- একের পর এক ইভেন্ট দেখা গিয়েছে গোটা বছরে। গোটা ক্রিকেট বিশ্বে যেমন ইয়র্কশায়ারের বর্ণবিদ্বেষ, অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ আফ্রিকা সফর বাতিল করার মত একের পর এক বিতর্ক দেখা গিয়েছে, তেমনই ভারতীয় ক্রিকেটে আছড়ে পড়ছে একের পর এক বিতর্কের ঢেউ।
দেখে নেওয়া যাক এক নজরে-
১) আইপিএলে করোনা: করোনা অতিমারীর মধ্যেই বিসিসিআই ২০২০-এ ভারত সফলভাবে আইপিএল আয়োজন করেছিল। তবে বাণিজ্যিক লাভের মুখ দেখার জন্য বোর্ড দেশেই আইপিএল আয়োজন করতে উদ্যোগী হয়েছিল। সেই সময়ে দেশে করোনার সংক্রমণই ক্রমশ নিম্নমুখী হচ্ছিল।
প্ৰথমে ছয় শহরে আইপিএল ভালভাবে শুরু হলেও, মাঝে টুর্নামেন্টের বায়োবাবলে করোনার সংক্রমণ ঘটে। সিএসকে, কেকেআর এবং তারপরে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে একাধিক ক্রিকেটার করোনা আক্রান্ত হওয়ার পরে টুর্নামেন্ট সাময়িকভাবে স্থগিত করতে বাধ্য হয়। আইপিএলের দ্বিতীয় পর্ব আয়োজিত হয় সেপ্টেম্বরে। আমিরশাহিতে। যেখানে ফের একবার ট্রফি তুলে শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ দেয় ধোনির সিএসকে।
আরও পড়ুন: ভারতের ঐতিহাসিক জয়ে কোনও অবদানই নেই কোহলির! ব্যাটিং-অঙ্কে লজ্জা পাবে যে কেউ
২) সিডনিতে ভারতীয়দের বর্ণবিদ্বেষ: ভারতের অস্ট্রেলীয় সফর রূপকথার ছিল। সিডনিতে পঞ্চম দিনের উইকেটে ভারতীয়দের কাছে।চ্যালেঞ্জ ছিল ম্যাচ বাঁচানোর। টেস্ট জয়ের জন্য একসময় ফেভারিট ছিল অজিরা। তবে ভারতীয়রা সমস্ত বিপত্তি এড়িয়ে ম্যাচ বাঁচিয়ে দেয়।
এমন দুরন্ত ম্যাচেই অজিঙ্কা রাহানে এবং মহম্মদ সিরাজ সিডনির গ্যালারিতে দর্শকদের একাংশের তরফে বর্ণবিদ্বেষের শিকার হন। রবিচন্দ্রন অশ্বিন পরে জানিয়ে দেন, অস্ট্রেলিয়ায় প্রত্যেক সফরেই তিনি বর্ণবিদ্বেষের শিকার হয়েছেন। অস্ট্রেলীয় বোর্ডের তরফে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা হলেও, শেষমেশ বিতর্ক এড়ানো যায়নি।
৩) অশ্বিন-সাউদি বিতর্ক: আইপিএলে কেকেআর বনাম দিল্লি ক্যাপিটালস ম্যাচে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে অশ্বিন এবং সাউদি সরাসরি ঝামেলায় জড়ান। অশ্বিন ব্যাটিংয়ের সময় রান 'চুরি' করে নিয়েছিলেন। যা ভালভাবে নেননি কেকেআর অধিনায়ক মর্গ্যান। অশ্বিন আউট হওয়ার পর সাউদি কিছু একটা বলেন। তাতে পাল্টা দেন অশ্বিনও। এরপরে সেই সঙ্ঘাতে সরাসরি যোগ দেন মর্গ্যান। ক্রিকেটের স্পিরিট ইস্যুতে এবার শ্যেন ওয়ার্ন, বীরেন্দ্র শেওয়াগ, মাইকেল ভন, ওয়াসিম জাফর, দীনেশ কার্তিক দুই পক্ষ নিয়ে একের পর এক মতামত পরিস্থিতিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যায়।
৪) ভারতের অসমাপ্ত ইংল্যান্ড সিরিজ: নির্বিঘ্নে ভারত ইংল্যান্ড সফরে গিয়ে চারটে টেস্ট খেলেছিল। তবে ম্যাঞ্চেস্টারে পঞ্চম টেস্ট খেলতে নামার ঠিক আগেই বিপত্তি। ভারতীয় শিবিরে করোনা হানা দেওয়ায় ভারতীয়রা মাঠে নামতে অস্বীকার করেন। ইংল্যান্ড সফরের ঠিক পরেই ভারতের আইপিএলের দ্বিতীয় পর্বে নামার কথা ছিল। কোনওভাবে পঞ্চম টেস্ট খেললে সংক্রমিতের তালিকা আরও বাড়লে আইপিএলে আয়োজনেও সমস্যা দেখা দিত, সেই কথা বিবেচনা করে ভারতীয় বোর্ডও ক্রিকেটারদের মাঠে না নামায় সবুজ সঙ্কেত দেয়।
সিরিজে শেষ টেস্টের আগে ভারত ২-১ এ এগিয়ে ছিল। কীভাবে করোনা আক্রান্ত হলেন ভারতীয় সাপোর্ট স্টাফরা। অভিযোগের কেন্দ্রে উঠে আসে, রবি শাস্ত্রীর বই প্রকাশ অনুষ্ঠান। যে অনুষ্ঠানে বায়ো বাবল ভেঙে অতিথিদের প্রবেশ করানো হয় বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও তা অস্বীকার করেছেন রবি শাস্ত্রী।
আরও পড়ুন: আর কতদিন অফফর্ম চলবে! কোহলিকে বাদ দেওয়ার দাবিও এবার উঠে গেল
৫) কোহলিকে ওয়ানডে নেতৃত্বে ছাঁটাই: ডিসেম্বরে বর্ষসেরা বিতর্ক হাজির হয় কোহলিকে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে বোর্ড সরিয়ে দেওয়ায়। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের টেস্টবদল ঘোষণার সময় বোর্ডের তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, ওয়ানডেতে জাতীয় দলের নেতা হচ্ছেন রোহিত শর্মা। এর আগে জাতীয় টি২০ দলের নেতৃত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন কোহলি।
বোর্ড সভাপতি সৌরভ জানান, সীমিত ওভারে দুই অধিনায়ক রাখতে চায়নি বোর্ড। তাছাড়া কোহলিকে নাকি বোর্ডের তরফে টি২০-র অধিনায়কত্ব ছাড়তে বারণ করা হয়েছিল। তবে কোহলি বোর্ডের কথায় কর্ণপাত করেনি। তাই বোর্ডের কাছে ওয়ানডে নেতৃত্ব থেকে সরানো ছাড়া অন্য উপায় ছিল না।
কোহলি অবশ্য প্রোটিয়াজ সফরের আগে বিষ্ফোরক প্রেস কনফারেন্সে বলে দেন, টি২০-র নেতৃত্ব ছাড়ার কোনও অনুরোধই বোর্ড করেনি। বরং তাঁর পদত্যাগপত্র সাদরে গ্ৰহণ করে বিসিসিআই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন