প্রাচীন ভারতের দর্শন আর শাস্ত্রের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে যোগ অনুশীলন। ইউরোপের ‘জিম’ সংস্কূতি এখন এশিয়াতেও অত্য়ন্ত জনপ্রিয়। কিন্তু একাধিক বিশেষজ্ঞের মতে, যোগব্যয়ামের কোনও বিকল্প নেই। সেটা যে কোনও বয়সের মানুষই করতে পারেন, যা জিমের সরঞ্জাম-নির্ভর শরীরচর্চায় সম্ভব নয়। শুধু ভারতেই নয়, ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুর এবং হংকংয়ের মতো এশিয়ার দেশগুলিতে যোগ অসম্ভব জনপ্রিয়। এতটাই, যে এই বাংলা তথা ভারতের যোগ চ্যাম্পিয়নরা আজ বিদেশের মাটিতে লক্ষাধিক টাকার চাকরি পাচ্ছেন।
গত ২৫-২৮ ডিসেম্বর দমদমের রবীন্দ্র ভবনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল পঞ্চম ওপেন ন্যাশনাল যোগ স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৮। নর্থ কলকাতা যোগ কালচার অ্যান্ড মেডিটেশনের আয়োজনে ভারতের ১৩টি রাজ্যের ৩০০ জন প্রতিযোগী এতে অংশ নেন জুনিয়র, ইউথ, সিনিয়র ও ওপেন গ্রুপ ক্যাটাগরি মিলিয়ে। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও তামিলনাড়ু, গুজরাত, দিল্লি, হরিয়ানা, ঝাড়খণ্ড, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র, অসম, বিহার, উত্তরাখণ্ড ও উড়িষ্য়া অংশগ্রহণ করেছিল। এখানেই শেষ নয়, দেশের গণ্ডী টপকে বিদেশের প্রতিযোগিদেরও দেখা মিলল এবারের চ্যাম্পিয়নশিপে। ভিয়েতনাম থেকে তিনজন ও হংকং থেকে একজন অংশ নেন।
আরও পড়ুন: ভারতীয় স্পোর্টস: বছর শেষ, এ এক নতুনের দেশ
নর্থ কলকাতা যোগ কালচার অ্যান্ড মেডিটেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও সচিব ডাঃ প্রসূন গুপ্ত বললেন, "এই চ্যাম্পিয়নশিপকে এখন যোগের দুর্গাপুজো বলা হয়। আসলে যোগব্যায়ামে বাংলায় অনেক অ্যাসোসিয়েশনই রয়েছে। কিন্তু এভাবে ওপেন টু অল প্রতিযোগিতা খুব কমই হয়। আর এই টুর্নামেন্টের মানও আলাদা। রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় যাঁরা এক থেকে তিনের মধ্যে থাকেন, তাঁরাই এখানে অংশ নিতে পারেন। যাঁদের কোয়ালিটি আছে তাঁদেরই আমরা প্রমোট করি।" প্রসূনবাবু এও জানালেন, এই টুর্নামেন্টের জন্য কোনও আর্থিক সহায়তা তাঁরা পান না। নিজেরাই সাত থেকে আট লক্ষ টাকা খরচ করে প্রতিবার এই জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্ট আয়োজন করেন।
প্রাক্তন চ্যাম্পিয়ন ও সংগঠনের ম্যানেজার সোমেন দাস ভিয়েতনামে যোগ প্রশিক্ষকের কাজ করেন। তিনি বলছেন, "এশিয়ায় যোগব্যায়াম অসম্ভব জনপ্রিয়। ইউরোপে জিম কালচারটা আছে। আমাদের এখান থেকেই প্রায় ২০-২২ জন বিদেশে যোগ ট্রেনারের কাজ করেছেন। ভিয়েতনাম, সিঙ্গাপুরে অসম্ভব চাহিদা। বিদেশে ফ্রেশারদেরই ওরা ভারতীয় মুদ্রায় মাসে ৬৫,০০০ টাকা বেতন দেয়। পরে অভিজ্ঞতা বাড়ার সঙ্গে সেটা লাখেও পৌঁছয়। এছাড়া ভিসা, থাকার ব্যবস্থা, সবটাই কোম্পানি থেকে করে দেওয়া হয়। এমনকি এক দিনে যদি দু’তিনটে সেন্টারে গিয়ে শেখাতে হয় তার জন্য বাইকও ওরা দিয়ে দেয়।” এবছর এই টুর্নামেন্টে লিটল চ্যাম্পের খেতাব জিতেছে স্বাতী মণ্ডল, শৌনক রায় ও সানাভালি গঙ্গোপাধ্য়ায়। সিনিয়রদের মধ্যে যোগ রত্ন খেতাব পেয়েছেন সায়ন্তন দে, মেঘনা সিনহা ও বিভাস শ।