Bengal gymnast Niladri Sarkar wins gold medal in Khelo India Games: খেলো ইন্ডিয়া গেমসে বাংলার মান রাখলেন তরুণ জিমন্যাস্ট নীলাদ্রি সরকার। অনুর্ধ্ব ১৮ এই গেমসে বাংলার হয়ে একমাত্র সোনার মেডেল পেলেন জিমন্যাস্ট। কাঁকিনাড়ার বাসিন্দা নীলাদ্রি মুখরক্ষা করলেন বাংলার। দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুধবার হরাইজন্টাল বারে সোনা পেয়েছেন নীলাদ্রি। এছাড়াও অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে রুপো পেয়েছেন। তাঁর এই সাফল্যে পরিবার, কোচ এবং বাংলা দলের ম্যানেজার প্রত্যেকেই উচ্ছ্বসিত। অনেক প্রতিকূলতাকে জয় করে এই সাফল্য অর্জন করেছেন নীলাদ্রি।
এইবছর উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছেন নীলাদ্রি। কিন্তু পড়াশোনার চেয়ে বেশি তাঁর ধ্যান-জ্ঞান সবই জিমন্যাস্টিক্স। সেই সাড়ে তিন বছর বয়সে কাঁকিনাড়ার একটি ক্লাবে প্রশিক্ষণ শুরু। তার পর থেকে আর বিরাম নেই। এখন বর্তমানে সাই-য়ের (SAI) ছাত্র নীলাদ্রি। এতদিন বিধাননগরের সাইয়ে প্র্যাকটিস করতেন নীলাদ্রি। সম্প্রতি তাঁর কোচ দিল্লির সাইয়ে বদলি হয়ে যাওয়ায় এখন নীলাদ্রিও সেখানেই প্রশিক্ষণ নিতে চলে গিয়েছেন। দিল্লিতেই থাকেন হস্টেলে। তবে পড়াশোনাও মন দিয়ে করছেন। কিন্তু মনোযোগ রয়েছে বেশি জিমন্যাস্টিক্সে।
নীলাদ্রির মা কাবেরি সরকার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে জানান, ছেলের এই সাফল্যে তিনি অত্যন্ত গর্বিত এবং উচ্ছ্বসিত। বলেছেন, নীলাদ্রির ছোট থেকেই প্রেম-ভালবাসা সবকিছুই জিমন্যাস্টিক্স। এখন তো স্কলারশিপের টাকা পায়। কিন্তু সেই টাকা দিয়ে কখনও কোন জামাকাপড় কেনার কথা বলেনি। বরং জিমন্যাস্টিক্সের সরঞ্জাম কেনার জন্যই বলে। বিধাননগর সাইয়ে ওঁর কোচের কাছে অনেক কিছু শিখেছে। তিনি দিল্লির চলে যাওয়ার পর এখন নীলাদ্রিও সেখানেই চলে গেছে।
গতবছরও জুনিয়র ন্যাশনাল চ্যাম্পিয়নশিপে সোনা জিতেছিল নীলাদ্রি। স্কুলে স্তরে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে একাধিক সাফল্য রয়েছে তাঁর ঝুলিতে। এখন ভবিষ্যেতে তাঁর লক্ষ্য ভারতের হয়ে অলিম্পিকে খেলা। ২০২৬ সালে জাপানে এশিয়ান গেমসের জন্য ট্রায়াল শিবিরে ডাক পেয়েছেন নীলাদ্রি। ছেলে এশিয়ান গেমসে খেলার সুযোগ পাবে বলে আশাবাদী মা। তার পর অলিম্পিকের জন্য নিজেকে তৈরি করতে মনোযোগ দেবেন নীলাদ্রি।
কিন্তু ছেলের এত বড় সাফল্যের দিনেও মনে কিছুটা আক্ষেপ রয়েছেন কাবেরি দেবীর। নীলাদ্রির বাংলার মান রাখলেও রাজ্যের ক্রীড়াদফতর থেকে কোনও আধিকারিক বা কর্তা খোঁজ নেয়নি নীলাদ্রির। এমনকী সাফল্যের জন্য শুভেচ্ছা জানানো বা সংবর্ধনাও পাননি নীলাদ্রি। এটাই বড় খেদ নীলাদ্রির মায়ের। বলেছেন, 'যদি রাজ্যের তরফে খেলোয়াড়দের কোনও সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক সাহায্য না দেওয়া হয় তাহলে সাফল্য পেলেও মনে আক্ষেপ থেকে যায়। অন্য রাজ্যের খেলোয়াড়রা সরকারের থেকে অনেক সাহায্য পায়, সংবর্ধনা পায়। আমাদের রাজ্যে কেন এসব হবে না?'
দিল্লিতে বাংলা জিমন্যাস্ট দলের ম্যানেজার ছিলেন সুদীপ্ত গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ফোনে জানান, 'নীলাদ্রির এই সাফল্য তাঁর পরিশ্রমের ফল। খুব ভাল এবং বাধ্য ছেলে। প্রচুর পরিশ্রম করে। কোনওদিন আত্মতুষ্টি দেখিনি তাঁর মধ্যে। যেভাবে নীলাদ্রি এবং তাঁর পরিবার কষ্ট করেছে, তার পর এই সাফল্য সত্যিই প্রাপ্য। নিজেকে ঠিক রাখতে পারলে আরও অনেক দূর যাবে সে। বাংলায় জিমন্যাস্টিক্সের ভাল পরিকাঠামোর অভাব। রাজ্য সরকার এই বিষয়ে নজর দিলে নীলাদ্রির মতো আরও অনেক ভাল জিমন্যাস্ট উঠে আসবে। এবং জাতীয় স্তরে বাংলাকে গৌরব এনে দেবে।'