বেহালার বীরেন রায় রোড থেকে তাঁর বাড়ি বেশিদূর নয়। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের বেহালাতেই এবার স্বপ্নভঙ্গের আখ্যান নড়িয়ে দিল গোটা রাজ্যকে। মঙ্গলবার থেকেই সোশ্যাল মিডিয়ার দৌলতে ভাইরাল পৌলমী অধিকারী। নাম বললে অনেকেই চিনতে পারবেন না।
তবে দেশকে ফুটবলের মাঠে গর্বিত করা পৌলমী আপাতত জোম্যাটোর ডেলিভারি গার্ল। একসময় দেশের জার্সিতে খেলে এসেছেন জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড বা পড়শি শ্রীলঙ্কায়। তিনি আপাতত বেকারত্বের জ্বালায় বেছে নিয়েছেন মাসিক বারো হাজার টাকার জোম্যাটোর চাকরি।
মাতৃহারা হয়েছেন শৈশবেই। বাবা দিনমজুর। বেড়ে উঠেছেন মামার বাড়িতে। বেহালার শিবরামপুরের স্থানীয় ফুটবল মাঠে ছেলেদের সঙ্গেই ফুটবলে 'পায়ে খড়ি'।
স্থানীয় ফুটবল খেলতে খেলতেই পৌলমী সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন কলকাতার ইনভেনশন ক্লাবে। তারপরে দারুণ পারফরম্যান্সের সুবাদে যুব মহিলা দলের হয়ে খেলার সুযোগও পেয়ে যান।
তবে রকেট গতির এই উত্থানে ব্রেক কষে দেয় আর্থিক প্রতিবন্ধকতা। আর্থিক দুরবস্থার কারণে পৌলমী শেষমেষ অনিশ্চিত ফুটবল ভবিষ্যৎ পিছনে ফেলে ডেলিভারি বয়ের চাকরি জুটিয়ে নিয়েছেন।
যে পায়ে গোটা দেশ একসময় স্বপ্ন দেখত, তা এখন বাইকের স্টার্টিং দিতে দিতে রাস্তা দিয়ে ছোটে। অপরিচিতদের হাতে তুলে দেন রসনা তৃপ্তির খাবার।
ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ার ভিডিওয় তাঁকে নিয়ে আলোচনা শুরু হতেই টনক নড়েছে রাজ্যের ক্রীড়ামহলের। অভিনেতা এবং রজনীতিবিদ রুদ্রনীল ঘোষ সরাসরি তাঁকে সাহায্য করার বার্তা দিয়েছেন ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে। লিখে দিয়েছেন, "পৌলমী অধিকারীর ফোন নাম্বার চাই। এই ভিডিওতে জানতে পারলাম ওর বাড়ি বেহালায়। ভারতীয় মহিলা টিমে ফুটবল খেলেছেন। বর্তমানে সামান্য টাকায় জোমাটোতে ফুড ডেলিভারির কাজ করে সংসার টানতে হয় ফুটবলার পৌলমীকে। এই ভিডিওতে কথা বলতে গিয়ে দলা পাকানো কান্না ধাক্কা মারছিল গলায়,কিন্তু চোখের জল ফেলেনি সে।"
"যদি কেউ পৌলমীকে চেনেন দয়া করে ওনার ফোন নাম্বারটা আমায় ইনবক্স করুন। জানি না পারব কিনা ওর মত যোগ্য মানুষের জন্য কিছু করতে। কিন্তু সবাই মিলে ওর পাশে তো দাঁড়াতে পারি।"
আইএফএ-র তরফেও সাহায্যের প্রতিশ্রুতি মিলেছে। ফুটবল মাঠে ফেরার ব্যবস্থা করে আর্থিক দুরবস্থা মেটানোর উদ্যোগ নেবে রাজ্য সরকার? সেদিকেই তাকিয়ে ক্রীড়ামহল।