ব্লু হোয়েলের পর এবার আরও এক মারণ গেম, মোমো চ্যালেঞ্জ। আপাতত স্যোশাল সাইটে এই নয়া ত্রাসে জেরবার জেন ওয়াই। নামটা শুনে খাবারের কথা মাথায় এলেও এই চ্যালেঞ্জের সঙ্গে খাবারের কোনও যোগ একেবারেই নেই। বরং পাতা রয়েছে মৃত্যু ফাঁদ। সম্প্রতি হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেই ছড়িয়ে পড়েছে মোমো চ্যালেঞ্জ গেমটি। বুয়েনস আইরেস টাইমসে প্রকাশিত একটি রিপোর্ট অনুযায়ী, আর্জেন্টিনায় এক ১২ বছরের মেয়ের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় তার বাড়ির পেছনের একটি গাছ থেকে। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। তার ফোনের তথ্য পরীক্ষা করে দেখার পর মনে করা হচ্ছে এই মোমো চ্যালেঞ্জের জেরেই মৃত্যু হয়েছে ওই কিশোরীর।
কী এই মোমো চ্যালেঞ্জ? টার্গেট করা ইউজারকে হোয়াটসঅ্যাপে একটি লিঙ্ক পাঠানো হবে, এ ক্ষেত্রে লিঙ্ক আসছে একাধিক অজানা নম্বর থেকে। টেক্সট করে তাঁকে অজানা এক নম্বরে 'মোমো' লিখে পাঠাতে বলা হবে। মোমো লিখে টেক্সট করার মানে সে এই গেমে অংশ নিতে আগ্রহী। এরপরেই শুরু হবে খেলা।
এই লিঙ্ক খুললেই ভেসে ওঠে ভয়ঙ্কর চেহারার একটি মুখ। যাবতীয় কথাবার্তা সে-ই বলবে। খেলার শুরুতেই বলা হবে, চ্যালেঞ্জ গ্রহণ না করলে সশরীরে বাড়ি আসবে ওই বিকট চেহারার জীব। এমনকী খুনও করা হতে পারে গেমারকে। এভাবেই অ্যাডমিনের একের পর এক চ্যালেঞ্জ গ্রহন করার মধ্যে দিয়ে চলবে খেলা। যার পরিণতি হতে পারে মৃত্যু।
আরও পড়ুন: বন্ধ হয়ে যেতে পারে ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টাগ্রাম
প্রথমে মনে করা হচ্ছিল, যে বিকট চেহারাটি ভেসে উঠছে, তা জাপানি শিল্পী মিদোরি হায়াশির একটি শিল্পকর্ম থেকে নেওয়া। যদিও ওই শিল্পী তাঁর ফেসবুক পেজে লিখেছেন, মোমোর এই মুখ তাঁর শিল্পকর্ম নয়। সূত্রের বক্তব্য, লিঙ্ক ফ্যাক্টরি নামে জাপানের একটি স্পেশাল এফেক্ট সংস্থা ‘মোমো’ নামে একটি পাখি তৈরি করে। সেই পাখির চেহারাটিই নেওয়া হয়েছে। যদিও সেই সংস্থার সঙ্গে মোমো গেমের কোনও যোগ নেই।
এই গেমের উদ্দেশ্য এখনও স্পষ্ট নয়। তবে সাইবার বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, মূলত ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতেই এই ফাঁদ পাতা হয়েছে। হোয়াটসঅ্যাপে ঘুড়ে বেরানো এই লিঙ্ক-এ কৌতূহল বশত ক্লিক করলে মোবাইলে স্পাইওয়্যার ইনস্টলড হচ্ছে। এর ফলে মোবাইলের উপরে নিয়ন্ত্রণ পেয়ে যাচ্ছে গেমের অ্যাডমিন। ফলে, কেউ মোবাইল নিয়ে কোথায় যাচ্ছে বা কার সঙ্গে কী কথা বলছে এবং অন্যান্য সব তথ্যই চলে যাচ্ছে আড়ালে থাকা মোমোর কাছে। তার পরে শুরু হচ্ছে ব্ল্যাকমেল করা।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকোর সহ ইউরোপ ও আমেরিকার বেশ কয়েকটি দেশে ইতিমধ্যেই সতর্কতা জারি করা হয়েছে মোমো চ্যালেঞ্জ নিয়ে, অনলাইন গেমের ক্ষেত্রেও সতর্কতা বাড়ানো হয়েছে। স্পেনের পুলিশ বাহিনীও এই আত্মঘাতী খেলার সম্পর্কে সতর্কবার্তা দিয়েছে অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে। তারা জানিয়েছে, কোনরকম অদ্ভুত আচরণ দেখলেই তা সত্ত্বর পুলিশ কে জানানো আবশ্যক।
উল্লেখ্য, এশিয়াতে এখন পর্যন্ত এই গেমের প্রাদুর্ভাব নেই, তবে ইতিমধ্যেই এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। অদূর ভবিষ্যতে এই মারণ গেম ভাইরাল হয়ে ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে বিভিন্ন দেশের সাইবার ক্রাইম সেল।