কেমন হত যদি দুর্ঘটনার কবলে পড়ার আগেই জেনে যাওয়া যায়, ঘনিয়ে আসছে বিপদ? এবং সেই অশনি সংকেত যদি নোটিফিকেশন হিসেবে কয়েক ঘন্টা আগেই পাওয়া যায়, তাহলে তো কথাই নেই। এমন ভাবনা থেকেই অ্যালগোরিদমের খেলায় মেতে উঠেছেন বারাসাতের দীপশুভ্র গুহ রায়। আবিষ্কার করেছেন এমন এক ডিভাইস যা দুর্ঘটনার আগাম বার্তা দেবে। যা আপনার কাছে নোটিফিকেশন হিসেবে আসবে। শুধু তাই নয়, নোটিফিকেশন আসার আগে মাঝপথে নেটওয়ার্ক সমস্যা বাধা হয়ে দাঁড়ালেও অন্য পথ বেছে নিতে পারবে ডিভাইস।
শুধুমাত্র অ্যাপ বা ডিভাইস এটা নয়। দীপশুভ্র জানান, এরকম অ্যাপ বা ডিভইস অনেকেই বানিয়েছেন। বিভিন্ন রকম অ্যাপ পাওয়া যায় যা দিয়ে অনেক কিছুই মনিটরিং করা যায়। তাহলে প্রশ্ন ওঠে, এই প্রযুক্তি আলাদা কোথায়? দীপশুভ্র জানান যে তিনি তাঁর বানানো নিজস্ব অ্যালগোরিদম এটিতে স্থাপন করেছেন, যার নাম স্মার্ট গেটওয়ে অ্যালগোরিদম। মৌলানা আবুল কালাম আজাদ প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র তথা গবেষক দীপশুভ্র। সম্প্রতি তিনি দেখিয়েছেন, দেশীয় পরিকাঠামোয় অল্প খরচেই প্রযুক্তির প্রয়োগ করা সম্ভব। অ্যাপ নির্ভর জগতে ইতিমধ্যেই ঝড় তুলছে তাঁর গবেষণার ফল।
কীভাবে সেই পরিবর্তন আসতে পারে? উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বারাসতের বাসিন্দা বছর সাতাশের দীপশুভ্র বলেন, "বিভিন্ন অ্যাপের ক্ষেত্রে 'মেসেজ লস', 'এন্ড টু এন্ড ডিলে' সমস্যা দুটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমার তৈরি প্রোটোটাইপ ও অ্যালগোরিদম একসঙ্গে কাজ করলে অ্যাপের অনেক সমস্যা থেকেই মুক্তি পাওয়া যাবে৷"
আগুন লেগে যাওয়ার পর আগুন লাগার খবর গেলে ক্ষতির মুখোমুখি হতেই হয়। কিন্তু যদি সে খবর আগেই পাওয়া যায় তাহলে দুর্ঘটনা এড়ানোর উপায় পাওয়া যায়। দীপশুভ্র জানান, "সেন্সর পরিবর্তন করলেই ব্রিজ, রেলের ট্র্যাক, সিগন্যাল, গাড়ির ব্রেক থেকে শুরু করে চাষের জমিতে জল দেওয়া, অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক সময়ে সঠিক বার্তা পাওয়া যাবে। এতে স্বাভাবিকভাবে পথ দুর্ঘটনাও এড়ানো যাবে। পাশাপাশি পরিবেশ নজরদারি সেন্সরগুলোকেও নজর রাখা যাবে। পরিকল্পনা চলছে এ ধরনের কাজ করার৷"
শুধু যে দুর্ঘটনার সংবাদই দিতে পারবে আই অ্যাপলিকেশন, এমনটা নয়। চাষের কাজেও সাহায্য করবে, কখন চাষ করলে আলু সঠিক পরিমাণ ফসল দেবে তার বার্তাও দিতে পারবে। একইসঙ্গে বিচার করবে জলবায়ু। এছাড়াও, দেখভাল করা যাবে ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের। তবে এই ডিভাইসটা কিনে লাগিয়ে দিলেই যে আপনি বিপদমুক্ত হবেন এমনটা নয়। ব্রিজ নির্মাণকারী বা যে কোনো অন্য জিনিসের প্রস্তুতকারককে দীপশুভ্রর তৈরি অ্য়ালগোরিদমকে স্থাপন করতে হবে। এখনও অবধি সেইরকম কোনো সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত করা হয়নি। দীপশুভ্রর আবেদন প্রস্তুতকারকরা যদি তার সঙ্গে যোগযোগ করে তাহলে সে তার তৈরি স্মার্ট গেটওয়ে অ্যালগোরিদম নির্মাণকারীদের সেন্সরের সঙ্গে যুক্ত করবেন। পাশাপাশি তার গবেষণা সঠিক বার্তা দিতে পারবে বলেও আশা করছেন বাঙালি গবেষক।
এই গবেষণার জন্য তাঁকে খরচ করতে হয়েছে মাত্র ছ'হাজার টাকা। ইতিমধ্যে অবশ্য আন্তর্জাতিক খেতাব জিতেছেন দীপশুভ্র। ওঁর এই গবেষনায় সহায়তা করেছেন বিপাশা মাহাতো। দেড় বছর পর 'Elsevier FGCS journal' স্বীকৃতি পেয়েছে তাঁর এই গবেষণা। গবেষণায় পাশে পেয়েছেন অধ্যাপক দেবাশিষ দে এবং মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাউড ল্যাবের রাজকুমার বুয়্যা কে।