Air India Boeing 787: আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনার পর আবারও আলোচনায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭। বৃহস্পতিবার বিকেলে আহমেদাবাদ বিমানবন্দরের কাছেই লন্ডনগামী এই বিমানে বিস্ফোরণ ঘটে, মুহূর্তেই দাউ দাউ করে জ্বলে ওঠে বিমানটি। এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানিসহ অন্তত ২৬৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। এখন মৃতদের ডিএনএ পরীক্ষার পরেই চূড়ান্ত সংখ্যা নিশ্চিত করা যাবে।
কীভাবে ঘটল দুর্ঘটনা?
Air India-এর Boeing 787-8 Dreamliner বিমানটি আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে উড়েছিল স্থানীয় সময় দুপুর ১:৩৮ মিনিটে। বিমানটিতে ছিলেন ২৩০ জন যাত্রী ও ১২ জন ক্রু মেম্বার। টেক অফের মাত্র কয়েকমিনিটের মধ্যেই বিমানটি "Mayday" সংকেত পাঠায়, যার কিছুক্ষণ পরই এটি মেঘানীনগর এলাকার একটি আবাসিক অঞ্চলে ভেঙে পড়ে বিমানটি। সংঘর্ষের পর বিমানে বিস্ফোরণে আগুন ধরে যায় এবং আশেপাশের এলাকাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
বোয়িং ৭৮৭: নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন
বোয়িং ৭৮৭, যেটিকে 'ড্রিমলাইনার' বলা হয়, বিশ্বের অন্যতম আধুনিক ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী বিমান হিসেবে পরিচিত। তবে গত কয়েক বছরে বোয়িং বিমানের একাধিক কারিগরি ত্রুটির অভিযোগ সামনে এসেছে। বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন এয়ারলাইন্সের রিপোর্ট বলছে, বোয়িং ৭৮৭ মডেলে অতিরিক্ত কম্পন, ব্যাটারি ও বৈদ্যুতিক গোলযোগ, ইঞ্জিন ও ফ্লাইট কন্ট্রোল সিস্টেমে ত্রুটির মতো ঘটনা ঘটেছে।
এই বিমানটি মূলত লং-হল ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং এয়ার ইন্ডিয়ার বহরে একাধিক বোয়িং ৭৮৭ রয়েছে। তবে বৃহস্পতিবারের ভয়াবহ দুর্ঘটনার পর বোয়িং ৭৮৭-এর নিরাপত্তা মান নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
তদন্তে কারিগরি ত্রুটির ইঙ্গিত
DGCA (Directorate General of Civil Aviation) এবং এয়ারক্র্যাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (AAIB) ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে। প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে বিমানের ইঞ্জিন বা বৈদ্যুতিক সিস্টেমে ত্রুটির কারণে বিস্ফোরণ ঘটেছে। তবে ব্ল্যাকবক্স উদ্ধারের পরই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
আহমেদাবাদে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার পর ফের আলোচনায় এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার। আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি হলেও, এই বিমানের অতীত রেকর্ড ও সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে উঠছে নানা প্রশ্ন। বোয়িং ৭৮৭ আসলে কতটা নিরাপদ? আসুন জেনে নেওয়া যাক বিস্তারিত।
বোয়িং ৭৮৭-কে আধুনিক বাণিজ্যিক বিমানের এক প্রযুক্তিগত বিস্ময় বলা হয়। এটি ডিজিটাল fly-by-wire সিস্টেম ব্যবহার করে, যেখানে পাইলটের কমান্ড অনুযায়ী কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিমান নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকি, সিস্টেমে রয়েছে ত্রিস্তরীয় ব্যাকআপ। বিমানের বডি অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে হালকা কিন্তু শক্তিশালী কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল-এ তৈরি, যা একে ক্ষয় ও ফাটল থেকে অনেকটাই রক্ষা করে। এতে ইনবিল্ট "হেলথ মনিটরিং সিস্টেম" রয়েছে, যা বিমানের বিভিন্ন যন্ত্রাংশের কার্যকারিতার ওপর নির্বিচারে নজরদারি চালায় এবং বিপদের আগে সতর্কবার্তা দেয়।
ফ্লাইট AI171 – কোন ভার্সন ছিল?
এয়ার ইন্ডিয়ার লন্ডনগামী বিধ্বস্ত ফ্লাইট AI171 ছিল বোয়িং ৭৮৭-৮ মডেল। এই বিমানটিতে ২৪৮ জন যাত্রী বহন ক্ষমতা ছিল এবং সাধারণত GEnx-1B বা Trent 1000 ইঞ্জিন ব্যবহার করা হয় এই বিশেষ বিমানে। এর ডানা ৬০ মিটার এবং সর্বোচ্চ ১৩,৫০০ কিমি দূরত্ব কভার করতে পারে।
কতদিন ধরে এয়ার ইন্ডিয়া ব্যবহার করছে এই বিমান?
এয়ার ইন্ডিয়া ২০১২ সাল থেকে বোয়িং ৭৮৭ চালাচ্ছে এবং বর্তমানে দীর্ঘ দূরত্বের বহু আন্তর্জাতিক রুটে এই মডেল ব্যবহার করা হয়ে থাকে। বোয়িং-এর মতে, বিশ্বের ১২০০-র বেশি ড্রিমলাইনার আজও আকাশে উড়ছে এবং এক বিলিয়নেরও বেশি যাত্রী নিরাপদে বহন করেছে।
বোয়িং ৭৮৭-এ কী নিরাপত্তা সংক্রান্ত ত্রুটি আগেও দেখা গিয়েছে?
২০১৩: জাপান এয়ারলাইন্সের একটি ৭৮৭ বিমানে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে আগুন ধরে যায়।
একই বছর: ANA-র একটি ফ্লাইটে পোড়া গন্ধের কারণে জরুরি অবতরণ হয়।
২০২১: ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের এক ৭৮৭ বিমানের নোজ গিয়ার পার্কিংয়ের সময় ভেঙে পড়ে।
২০২৪: LATAM এয়ারলাইন্সের একটি ৭৮৭ মাঝ আকাশে ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, ৫০ জন যাত্রী আহত হন। পাইলটের আসনের একটি সুইচে ভুলবশত চাপ পড়ায় নিয়ন্ত্রণ হারানোর ঘটনা ঘটে।
বোয়িং-এর নিরাপত্তা রেকর্ড কেমন?
বোয়িং ৭৮৭ মডেলে হয়তো মারাত্মক দুর্ঘটনা তেমন ঘটেনি। কিন্তু কোম্পানির অন্য মডেল বিশেষ করে ৭৩৭ বহুবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে।
৫২৯টি দুর্ঘটনা,
৫,৭৭৯ জন নিহত,
বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার নিঃসন্দেহে আধুনিক প্রযুক্তির প্রতিফলন। তবে একাধিক ঘটনা ও অভিযোগ বলছে, প্রযুক্তির পাশাপাশি নিরাপত্তা এবং মনিটরিং ব্যবস্থাতেও জোর দেওয়া জরুরি। আহমেদাবাদের দুর্ঘটনার তদন্তের ফলাফলের দিকে এখন তাকিয়ে গোটা বিশ্ব।