চাঁদের পৃষ্ঠদেশে অবতরণকারী ২৯ তম মহাকাশযান হতে যাচ্ছে চন্দ্রযান-২। কিন্তু ভারতের এই মহাকাশযান এমন জায়গায় তার ল্যান্ডার নামাবে, যেখানে এর আগে কোনও মহাকাশযান পৌঁছতে পারে নি। এই ল্যান্ডিং ঘটবে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে, চাঁদের বিষুবরেখার (equator) ৭০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের (latitude) কাছাকাছি। চাঁদের দুই মেরু অবস্থিত রয়েছে ৯০ ডিগ্রি অক্ষাংশে।
এতদিন অবধি চাঁদে যত মহাকাশযান নেমেছে, সবই বিষুবরেখার আশেপাশে। বিষুবরেখা থেকে সবচেয়ে দূরে গিয়েছিল মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র সার্ভেয়র ৭, সেই ১৯৬৮ সালের ১০ জানুয়ারি। মোটামুটি ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশের কাছে এটি অবতরণ করে।
এর নেপথ্যে অবশ্যই যথেষ্ট কারণ রয়েছে। এমনকি চিনের পাঠানো চ্যাং'ই ৪ পর্যন্ত ৪৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের কাছাকাছি ল্যান্ড করে, অথচ এটি ছিল চাঁদের যে অংশ পৃথিবীর দিকে মুখ করে নেই, সেখানে পৌঁছতে পারা প্রথম মহাকাশযান। সোজা কথা হলো, বিষুবরেখার কাছাকাছি ল্যান্ড করাটা সহজ, এবং নিরাপদও বটে। ভূখণ্ড এবং তাপমাত্রা, দুইই অনেকটা সহনীয়, যার ফলে যন্ত্রপাতি বিকল হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা কম। এখানে চাঁদের মাটি মসৃণ এবং সমতল, খাড়াই বলতে প্রায় নেই, এবং টিলা, গহ্বর ইত্যাদিও কম। পর্যাপ্ত পরিমাণে সূর্যের আলো পাওয়া যায়, অন্তত পৃথিবী-মুখী অংশে, সুতরাং সৌরশক্তি দ্বারা চালিত যন্ত্রপাতিতে নিয়মিত সরবরাহ হতে থাকে উত্তাপ এবং শক্তি।
কিন্তু চাঁদের দুই মেরুতে ছবিটা একেবারেই অন্য। অনেক অংশই চির অন্ধকারে ঢাকা, কারণ সূর্যের আলো পৌঁছয় না, এবং তাপমাত্রা নেমে যেতে পারে শূন্যের ২৩০ ডিগ্রি পর্যন্ত নীচে। সূর্যের আলোর অভাব এবং অসম্ভব ঠাণ্ডার কারণেই অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে যন্ত্রপাতি পরিচালনা। এছাড়াও যত্রতত্র ছড়িয়ে আছে অসংখ্য ছোটবড় গহ্বর, আয়তনে কয়েক সেন্টিমিটার থেকে শুরু করে কয়েক হাজার কিমি পর্যন্ত।
এই কারণেই আজ পর্যন্ত অনাবিষ্কৃতই রয়ে গেছে চাঁদের মেরু অঞ্চল। কিন্তু এর আগের অনেক ক'টি অরবিটার মিশন এই ইঙ্গিত দিয়েছে যে এই অঞ্চলগুলিতে অনুসন্ধান করতে পারলে নানা অজানা তথ্য পাওয়া যাবে। এখানকার গহ্বরে ব্যাপক পরিমাণে বরফের অণু বা মলেকিউলের উপস্থিতির ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে। প্রচণ্ড ঠাণ্ডা হওয়ার ফলে এখানে মাটির নীচে যাই বন্দী থাকুক, মোটামুটি অপরিবর্তিত অবস্থাতেই থাকবে। অর্থাৎ এখান থেকে সংগ্রহ করা পাথর এবং মাটি পরীক্ষা করলে সৌরজগতের গোড়ার কথা কিছু জানা গেলেও যেতে পারে।