চাঁদের মাটিতে অন্ধকার নেমে এসেছে। জাকিয়ে ঠান্ডা পড়ে গেছে। অকেজ হতে শুরু করেছে বিক্রম। প্রচন্ড ঠান্ডায় বিকল হয়ে যাবে যন্ত্রপাতি এমনটা আগেই জানিয়েছিল ইসরো। শেষচেষ্ঠাও বৃথা গেল। বিক্রমের সাড়া পাওয়া গেল না। কিন্তু এই ব্যর্থতায় ভেঙে পড়লেও থেমে থাকবে না ইসরো জানিয়েছেন কে. শিভান। চন্দ্রযান ২ এর পর এখন ইসরো মন দিয়ে গগনযানে। দ্বিতীয়বার সিংহাসন দখলের পর স্বাধীনতা দিবসের দিন জোর গলায় ভারত থেকে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর কথা বলেছিলেন নরেন্দ্রমোদী। এবার সেই নিয়েই উঠে পড়ে লেগেছে ইসরোর তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীরা।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চেয়ারম্যান কে সিভান শনিবার ঘোষণা করেন, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ইসরো। আইআইটি ভুবনেশ্বরের সমার্বতনে উপস্থিত ছিলেন কে শিভান। সেখানে তিনি ঘোষণা করেন সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০২২ সালে ভারত থেকে মহাকাশে পাড়ি জমাবে মানুষ। চন্দ্রযান-২ কে স্মৃতিতে রেখে এটাই আমাদের এখন লক্ষ্য। এই লক্ষ্য জয় করতে প্রাণপনে চেষ্টা চালাচ্ছে ইসরোর বিজ্ঞানীরা।
আরও পড়ুন: ”কমিউনিস্ট ও নকশাল হীন এবং নেশামুক্ত যাদবপুর ক্যাম্পাস গড়ে তোলার চেষ্টা করবে এবিভিপি”
"চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার একদম ঠিকঠাক চলছে, তার আটটি যন্ত্রের সবকটিই ঠিক তাদের যেভাবে কাজ করার কথা, সেভাবেই করছে। কিন্তু ল্যান্ডারের সঙ্গে আমরা আর যোগাযোগ স্থাপন করতে পারি নি। আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য গগনযান অভিযান," শিভনকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে সংবাদ সংস্থা এএনআই।
ইসরো প্রধান আরও বলেন যে ৯৮ শতাংশ সফল হয়েছে চন্দ্রযান-২ অভিযান, এবং এখনও বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে চলেছেন বিজ্ঞানীরা।
শিভনকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, "আমরা এই অভিযানকে ৯৮ শতাংশ সফল বলছি কারণ এর উদ্দেশ্য ছিল দুটি - এক, বিজ্ঞান, দুই, প্রযুক্তি প্রদর্শন। সেই প্রদর্শনের ক্ষেত্রে প্রায় ১০০ ভাগ সফল এই মিশন।" তিনি আরও বলেন, "ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে...এখনও কিছু চূড়ান্ত হয় নি। আপাতত আগামী বছর আরও একটি যান্ত্রিক মিশন পাঠানোর লক্ষ্যে এগোচ্ছি। প্রথমে বোঝা দরকার ঠিক কী হয়েছে ল্যান্ডারের।"
আরও পড়ুন: বাজারে নতুন গ্যাজেট, টুপি পরলেই মিটছে ‘টাক’ সমস্যা
বৃহস্পতিবার একটি টুইটের মাধ্যমে ইসরো জানায়, "#Chandrayaan2 অরবিটার পুরোদমে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে ইসরো বিশেষজ্ঞরা এবং শিক্ষাবিদদের জাতীয় কমিটি বিক্রম ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করে দেখছেন।"
আরও পড়ুন: গগনযান: মহাশূন্যে কীভাবে যাবেন ভারতীয় মহাকাশচারী
গত ৭ সেপ্টেম্বর চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করতে অসমর্থ হয় বিক্রম। ইসরো জানিয়েছে, চাঁদের চারপাশে ঘুরতে থাকা অরবিটার থেকে বিক্রমের থার্মাল ছবি তোলা হয়েছে।
আজ, অর্থাৎ শনিবার রাত পেরোলেই বিক্রমকে খোঁজার চেষ্টা করেও কোনও লাভ হবে না, কারণ চাঁদে নেমে আসতে চলেছে রাত, যা পৃথিবীর ১৪ দিনের সমকক্ষ। চাঁদের যে জায়গায় মাটি ছুঁয়েছে ল্যান্ডার, সেখানে এই রাত চলাকালীন তাপমাত্রা অত্যন্ত বেশিরকম নেমে যায়, এমনকি শূন্যের ২০০ ডিগ্রি নীচে পর্যন্ত। বিক্রমে বসানো বৈদ্যুতিন যন্ত্রপাতি এত কম তাপমাত্রা সহ্য করতে সক্ষম নয়, সুতরাং সেগুলি বিকল হয়ে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।