‘৪০ দিনের দীর্ঘ অপেক্ষা আজ শেষ হতে চলেছে’, টান টান উত্তেজনার আগে এমনই মন্তব্য করেছেন ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল স্পেস প্রমোশন অ্যান্ড অথরাইজেশন সেন্টারের (INSPACE) চেয়ারম্যান এবং মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার প্রাক্তন এমডি পবন কে গোয়েঙ্কা।
গত ১৪ জুলাই চাঁদে পাড়ি দিয়েছে চন্দ্রযান ৩ । এর আগে ২০১৯ সালে চাঁদে পাঠানো হয়েছিল চন্দ্রযান ২। তবে সেই মিশন সফল হয়নি। সেই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এবার আর কোনরকম ভুল করতে চাইছে না ইসরো। এবার লক্ষ্য চাঁদের দক্ষিণ মেরু, যে অংশে এখনও পৌঁছতে পারেনি কোনও দেশ। সব ঠিক থাকলে ইতিহাস তৈরি করবে ভারত।
চন্দ্রাভিযানে সফল হওয়া ভারতের কাছে অগ্নিপরীক্ষার সমান। চন্দ্রযান-৩ অবতরণের ১৫ মিনিট খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছে ইসরো। বুধবার সন্ধ্যায় চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করবে চন্দ্রযান ৩। শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্ব এই ঐতিহাসিক মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা করছে। ল্যান্ডার (বিক্রম) এবং রোভার (প্রজ্ঞান) সমন্বিত ল্যান্ডার মডিউলটি সন্ধ্যা ৬.০৪ মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরু অঞ্চলে নরম অবতরণ করবে। সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে মিশনের প্রতি মুহূর্তের আপডেটের ওপর নজর রাখবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। এখনও পর্যন্ত অভিযানে সফল হয়েছে চন্দ্রযান ৩। আপাতত লক্ষ্য সফট-ল্যান্ডিং।
আজ সন্ধ্যা ৬টা ০৪ মিনিটে চাঁদের মাটিতে অবতরণ করতে চলেছে চন্দ্রযান-৩। ইসরোর তরফে জানানো হয়েছে এখনও পর্যন্ত সব কিছুই ঠিকমত চলছে। যদিও চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণের শেষ ১৫ মিনিট খুব গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানিয়েছে ইসরো। এর ওপর নির্ভর করছে মিশনের সাফল্য। ২০১৯ সালে, ভারতের চন্দ্রযান মিশন শেষ ১৫ মিনিটে বড় ধাক্কা খেয়ে ব্যর্থ হয়। এমন পরিস্থিতিতে শেষ ১৫ মিনিট মুন মিশনের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। ইসরোর আশা সব চ্যালেঞ্জ জয় করে চন্দ্রযান ৩ নতুন ইতিহাস গড়বে।
এখন চন্দ্রযান ৩ চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের জন্য প্রায় প্রস্তুত। প্রশ্ন হল কী আছে এই দক্ষিণ মেরুতে? কেন এই অঞ্চল নিয়ে বিজ্ঞানীদের এত কৌতুহল?
চাঁদের দক্ষিণ মেরু সারা বিশ্বের বিজ্ঞানীদের কাছে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। আর ঠিক সেই অংশেই অবতরণ করতে চলেছে ভারতের চন্দ্রযান-৩। ঠিক সেই কারণেই গোটা বিশ্বের নজর ভারতের মুন মিশনের দিকে। বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন চাঁদের এই অংশে এমন গভীর গর্ত রয়েছে যেখানে কোটি কোটি বছর ধরে সূর্যের আলো পৌঁছায়নি। এই অঞ্চলে তাপমাত্রা মাইনাস 248 °C (-414 ফারেনহাইট) এ নেমে যায়। এখানে চাঁদের পৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করার মতো কোনো বায়ুমণ্ডল নেই।
চাঁদের এই সম্পূর্ণ অজানা জগতে পা রাখেনি কোনো দেশ। নাসার মতে, চাঁদের দক্ষিণ মেরু রহস্য, বিজ্ঞান ও কৌতূহলে ভরপুর। বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানোর জন্য তথাকথিত মহাকাশ প্রতিযোগিতা চলছে। এই জায়গাটি বিষুবরেখার চারপাশের জায়গা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত। ISRO এর আগে, রাশিয়ার মুন মিশন Luna-25 চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের চেষ্টা করে, কিন্তু ২০ আগস্ট, দুর্ঘটনার কবলে পড়ে লুনা ২৫ এবং মিশন ব্যর্থ হয়। কেন চাঁদের দক্ষিণ মেরু বিজ্ঞানীদের অন্বেষণের জন্য এত লোভনীয়? এর মূল কারণ 'জল’ বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।