ভারতের তৃতীয় চন্দ্র অভিযান, চন্দ্রযান-৩, বুধবার সন্ধ্যায় বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং করারা সঙ্গে সঙ্গে ইতিহাস গড়েছে ভারত। প্রজ্ঞান রোভার, যেটি নিরাপদে বিক্রম ল্যান্ডারের ভিতর রাখা ছিল সেটি, এখন চাঁদের পৃষ্ঠে তার কাজ শুরু করেছে। চাঁদে ‘নরম অবতরণ’ করে ইতিহাস সৃষ্টি করল ল্যান্ডার বিক্রম। এখন মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব থাকবে বিক্রম ল্যান্ডার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া রোভার প্রজ্ঞানের কাঁধে। এটি একটি ছয় চাকার রোবোটিক যান যা চাঁদের পৃষ্ঠে চলাচল করে তথ্য সংগ্রহ করবে।
চন্দ্রযান ৩ সফল অবতরণ প্রসঙ্গে দেশের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেছেন, ‘চাঁদে চন্দ্রযান-৩ এর ‘নরম অবতরণ’ নতুন পথ খুলে দেবে এবং বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও অনুসন্ধানে সহায়তা করবে’।
ISRO-এর চন্দ্রযান-৩ নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। বিক্রম ল্যান্ডারের সফল অবতরণের মাধ্যমে, ভারত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছানো বিশ্বের প্রথম দেশ হয়ে উঠেছে। এখন মিশনকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব প্রজ্ঞান রোভারের উপর, এই ৬ চাকার রোবোটিক ডিভাইসটিকে ল্যান্ডার বিক্রম থেকে আলাদা করা হয়েছে। এখন এটি চাঁদের পৃষ্ঠে তথ্য সংগ্রহ করে ইসরোতে পাঠাবে।
চতুর্থ দেশ হিসেবে চাঁদে সফল অবতরণ ভারতের। চন্দ্রযানের বিক্রম ল্যান্ডার ২৩শে আগস্ট সন্ধ্যায় ঠিক ৬.০৪ মিনিটে সফট ল্যান্ডিং করা মাত্রই বিশ্বজুড়ে শুরু হয় সেলিব্রেশন। এখন পর্যন্ত বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশ সফলভাবে চাঁদ ধরতে পেরেছে। অবতরণের পর, এখন আসল মিশন শুরু হয়েছে, বিজ্ঞানীরা এখন এই বিষয় নিয়ে কাজ করছেন। এর প্রথম পদক্ষেপ ছিল ল্যান্ডার বিক্রম থেকে রোভারটিকে আলাদা করা। যা সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে।
আরও পড়ুন: < চাঁদের মাটিতে তেরঙ্গা-ইসরোর লোগো খোদাই করবে রোভার প্রজ্ঞান, কীভাবে সম্ভব করবে এই অসম্ভবকে জানুন! >
অবতরণের চার ঘণ্টা পর বিক্রম থেকে রোভার নামল
চন্দ্রযান-৩ তিনটি মডিউল দিয়ে তৈরি, এতে প্রপালশন মডিউল রয়েছে, বিক্রম ল্যান্ডার এবং প্রজ্ঞান রোভার, বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণ করেছে, প্রজ্ঞান রোভার এর ভিতরে ছিল। ISRO যেভাবে মিশনটি ডিজাইন করেছে, চার ঘন্টা নরম অবতরণ করার পরে প্রজ্ঞান রোভারটি বেরিয়ে এসেছে। ISRO জানিয়েছে, প্রজ্ঞান রোভার বিক্রম থেকে রাত ১০.০৫ মিনিটে আলাদা হয়ে যায় এবং মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য চাঁদের পৃষ্ঠে চলাচল শুরু করেছে।
বিক্রম ল্যান্ডারের সাইড প্যানেল প্রথম খোলা হয়েছিল প্রজ্ঞান রোভার অবতরণের জন্য। এরপর চাঁদের পৃষ্ঠ পর্যন্ত একটি র্যাম্প তৈরি করা হয়। একটি ছয় চাকার রোবোটিক যান এই র্যাম্প থেকে অবতরণ করেছে। এখন চন্দ্রযান-৩ তার নিজের মিশনকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। চন্দ্রযান-১ এবং চন্দ্রযান-২-এর মিশন ডিরেক্টর আন্নাদুরাইয়ের মতে, প্রজ্ঞান রোভার প্রথমে অবতরণ করবে। এটি চন্দ্রপৃষ্ঠে প্রতি সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার গতিতে চলাচল করবে এবং তথ্য সংগ্রহ করবে।
চাঁদে নরম অবতরণের পর বিক্রমের কাজ শেষ হবে না। এটি পরের ১৪ দিন ধরে একটানা কাজ চালিয়ে যাবে এবং রোভার থেকে যা কিছু তথ্য পাওয়া যাবে তা পৃথিবীতে প্রেরণ করবে। এ ছাড়া বিক্রম তার দিক থেকেও তথ্য সংগ্রহের কাজ চালিয়ে যাবে। এতে চারটি পেলোড রয়েছে।
রোভার একদিন চাঁদের মাটিতে থাকবে। এতে দুটি পেলোড রয়েছে। প্রথম পেলোড হল LIBS যা চন্দ্র পৃষ্ঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করবে। এতে চন্দ্রের মাটির গঠন কেমন তা জানা যাবে। ভূপৃষ্ঠে কয়টি রাসায়নিক উপাদান আছে? দ্বিতীয় পেলোড হল আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার, যা চন্দ্র পৃষ্ঠের খনিজগুলি যেমন ক্যালসিয়াম, টাইটানিয়াম এবং লোহা সনাক্ত করবে এবং তাদের পরিমাণ সম্পর্কে তথ্য দেবে।
বিক্রমের কাছে তথ্য পাঠাবে রোভার
চাঁদের পৃষ্ঠে প্রজ্ঞান রোভারের গতিবিধি ল্যান্ডার বিক্রমকে জানানো হবে। রোভার শুধুমাত্র বিক্রমের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এবং বিক্রম ল্যান্ডার সরাসরি ইসরোর সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে। যা রোভার থেকে প্রাপ্ত তথ্য ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে ইসরোর কাছে পাঠাবে। চাঁদ থেকে যা কিছু সংকেত পাঠানো হবে তা ভারতীয় ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সরাসরি বায়ালালু ইন্ডিয়ান ডিপ স্পেস নেটওয়ার্কে পৌঁছাবে। এই নেটওয়ার্ক কর্ণাটকের রামনগর জেলায় অবস্থিত। সেখান থেকে চাঁদ থেকে প্রাপ্ত সংকেতগুলো ডিকোড করা হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াটিকে বলা হয় ISTRAC অর্থাৎ টেলিমেট্রি, ট্র্যাকিং এবং কমান্ড নেটওয়ার্ক।