ভারতে ৫৬০ মিলিয়ন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী রয়েছেন। এঁরা যে ডেটা উৎপন্ন করেন তার হিসেব টেরাবাইটে পৌঁছে যায়। এবার এই ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের কাছে নতুন সুযোগ পৌঁছচ্ছে। নিজেদের আর্থিক যেসব লেনদেন ডিজিটািলি করে থাকেন এঁরা, তার তথ্যের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে তাঁদেরই হাতে। তাঁরাই স্থির করতে পারবেন, এ তথ্য কার সঙ্গে কত সময়ের জন্য শেয়ার করবেন তাঁরা।
ভারতের শীর্ষস্থানীয় ব্যাঙ্কগুলি এরকম একটা ব্যবস্থা তৈরি করতে চলেছে, যার মাধ্যমে গ্রাহকরা আর্থিক তথ্য অ্যাকসেস করতে পারবেন এবং তৎক্ষণাৎ তা শেয়ারও করতে পারবেন। এর পিছনে রয়েছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যদি এ প্রকল্প কার্যকর হয় তাহলে ডেটা সিকিউরিটিতে এক নতুন মাত্রা যুক্ত হবে, নতুন মাত্রা যুক্ত হবে গ্রাহকেদর নিয়ন্ত্রণক্ষমতাতেও। সবচেয়ে বড় কথা, লক্ষ লক্ষ ভারতীয়ের কাছে ক্রেডিট মার্কেট খুলে যাবে।
সারা পৃথিবীতে গ্রাহকদের হাতে নিয়ন্ত্রণ দেবার এমন উদাহরণ আর বেশি নেই। এ ব্যাপারে ভারত ভরসা করবে থার্ড পার্টির উপর। এই থার্ড পার্টি তথ্য শেয়ার করার জটিল পদ্ধতিতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে ভারতের যে দরিদ্র অংশের মানুষ প্রত্যক্ষভাবে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার বাইরে রয়েছেন, তাঁদের এর মধ্যে নিয়ে আসবে।
ইনফোসিস চেয়ারম্যান নন্দন নিলেকানি বলেছেন, কেবলমাত্র ভারতের কাছেই এরকম মাত্রার সমাধান রয়েছে। তিনি একেই একমাত্র ভবিষ্যৎ বলে বর্ণনা করেছেন।
কাজ হবে কীভাবে
বিভিন্ন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরের ব্যবস্থা করবে। ডেটা সংগ্রহ ও শেয়ার বিষয়টি তাদের হাতে থাকবে। অথরাইজড অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা সমস্ত ধরনের আর্থিক তথ্য একসঙ্গে আনতে পারবেন- তার মধ্যে থাকবে খরচের রকম, বিল পেমেন্ট, ট্যাক্স রিটার্ন, ব্যবসায়িক লেনদেন এসব কিছুই। ঋণ পাবার জন্য, লগ্নির জন্য বা এমনকি বিমার জন্য এর মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য তাৎক্ষণিকভাবে শেয়ার করা যাবে।
যেমন ধরা যাক একজন সম্ভাব্য ঋণগ্রহীতা তাঁর ঋণদাতাকে নিজের ঋণ পরিশোধের ক্ষমতা সম্পর্কে বোঝানোর জন্য জিএসটি ফাইলিংয়ের অংশটুকু শেয়ার করতে পারবেন। একজন সব্জিবিক্রেতা কোনও বন্ধক না রেখে ঋণ পাবার জন্য নিজের বিশ্বাস যোগ্যতা বোঝাতে মোবাইল ফোনের রিপেমেন্ট হিস্ট্রি শেয়ার করতে পারবেন।
ভারতে যে নতুন ডিজিটাল আইন হয়েছে, তাতে এরকম ব্যবস্থার প্রস্তুতি রাখা হয়েছে। এখন কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলির কাছে মেশিনে পাঠযোগ্য ফর্মাটে রাখার মত উপায়ে আর্থিক তথ্য পাওয়া প্রয়োজন, যার ফলে সহজে সে তথ্য প্রয়োজনমত অংশ কেটে নেওয়া যাবে এবং তা শেয়ার করা যাবে।
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
লক্ষ লক্ষ ছোট ভারতীয় সংস্থা রয়েছে যাদের প্রতিমাসে প্রায়ে দেড় ট্রিলিয়ন টাকা ঋণের প্রয়োজন। নতুন এই পদ্ধতি ঋণদাতাদের এই ঋণ দেবার ব্যাপারে সাহায্য করবে বলে জানিয়েছেন অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরদের অলাভজন সংস্থা সহমতির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বিজি মহেশ।
তিনি বলেন, ছোট ব্যাঙ্কগুলি এই নয়া ব্যবস্থায় বিভিন্ন ব্যবসায়ে স্বল্প অঙ্কের ঋণ দিয়ে প্রতিযোগিতায় নামতে পারবে।
এ ছাড়াও ভারতীয় ব্যবহারকারীরা এখন নতুন করে নিজেদের আর্থিক তথ্যের অ্যাকসেস পাবেন তাৎক্ষণিক ভাবে, এবং সে তথ্য কারা কখন দেখতে পাবেন, তার নিয়ন্ত্রণও থাকবে তাঁদের নিজেদের হাতে। আমেরিকায় যা ঘটে এ পরিস্থিতি তার চেয়ে ভি্ন। সেথানে তিনটি বৃহৎ মাপের ক্রেডিট রিপোর্টিং এজেন্সি সরাসরি ব্যাঙ্ক থেকে গ্রাহকদের তথ্য সংগ্রহ করে এবং তা বিক্রি করে। এ ব্যাপারে গ্রাহকদের যে সম্মতি নেওয়া হয়, তা নামমাত্র বললেই চলে।
ইউরোপে নতুন যে ডেটা প্রোটেকশন বিধি রয়েছে তাতে গ্রাহকের অধিকার যথেষ্ট বেশি, কিন্তু সেখানেও কোনও কোনও সংস্থা ব্যবহারকারীর ডেটা পেতে পারে। এসব থেকে ভারতের পরিকল্পিত পরিস্থিতি পৃথক হবে।
২০১৭ সালে সুপ্রিম কোর্ট গোপনীয়তাকে সার্বজনীন মানবাধিকারের আওতায় বলে জানিয়েছিল। এ বছরেই ভারতের সংসদে ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা বিল নিয়ে নতুন করে বিতর্ক হবে, যাতে এ দেশে ব্যবসা করার জন্য বিভিন্ন সংস্থাগুলির উপর নতুন নিয়মাবলী জারি করা হবে।
ব্যবহারকারীদের উৎসাহ দান
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ৫টির বেশি অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটরকে অস্থায়ী লাইসেন্স দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে মুকেশ আম্বানির রিলায়েন্স গোষ্ঠীর অংশ জিও ইনফর্মেশন সলিউশনস এবং ভারতের বৃহত্তর ব্যাঙ্কগুলির কনসর্টিয়ামের তৈরি এনইএসএল অ্যাসেট ডেটা। এর মধ্যে অনেকের ট্রায়াল দেওয়ার কাজও সারা।
একই সঙ্গে সহমতি সংস্থা নতুন ব্যবস্থার সঙ্গে মানিয়ে নেবার জন্য আর্থিক সংস্থাগুলিকে বুঝিয়ে চলেছে। এ মাসেই পরের দিকে অ্যাপ বানানোর জন্য টেক স্টার্ট আপগুলির সঙ্গে বসার কথা রয়েছে। ইতিমধ্যেই স্টেট ব্যাঙ্ক, আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, কোটাক মাহিন্দ্রা ব্যাঙ্ক ও অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক সিস্টেম পরীক্ষা করছে। পিছিয়ে নেই দেশের অগ্রণী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিও।
তবে মানুষ যাতে এ ব্যবস্থার সুযোগ নেন তাও দেখতে হবে। ভারতের ক্রেডিট রেটিং সিস্টেম অপেক্ষাকৃত নতুন এবং জনসংখ্যার অতি অল্প অংশ এর আওতায় পড়ে। ঋণের জন্য আবেদন করতে যে পরিমাণ পেপারওয়ার্ক ও নথিপত্রের প্রয়োজন তাতে ছোট ঋণগ্রহীতা ও সম্ভাব্য ঋণদাতা দুপক্ষই উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। অ্যাকাউন্ট এগ্রিগেটর এ সমস্যার সুরাহা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।