মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরোর প্রাক্তন শীর্ষ বৈজ্ঞানিক তপন মিশ্রর উদ্যোগে এবার বাংলায় আসতে চলেছে প্রযুক্তিগত বিনিয়োগ। নিজের উদ্যোগে তপনবাবু তৈরী করতে চলেছেন ড্রোন বেস এসএআর বা সিন্থেটিক অ্যাপারেচর রাডার। যেটা কম উচ্চতা থেকেও পরিষ্কার ছবি তুলতে সক্ষম। আগে শুধুমাত্র স্যাটেলাইটের মাধ্যমে এই ছবি তোলা যেত। এই রাডারকে ড্রোনেও জুড়ে দেওয়া যায়। ফলে সেনাবাহিনীর প্রয়োজন যেমন মেটাবে। তেমনই নাগরিক পরিষেবার ক্ষেত্রেও এই রাডারকে অনায়াসে ব্যবহার করা যাবে।
এই ব্যাপারে তপন মিশ্র বলেছেন, 'প্রাথমিকভাবে আমরা একটি ড্রোননির্ভর উচ্চ- রেজলিউশন সম্পন্ন রাডার তৈরি করেছি। অত্যন্ত কম উচ্চতা থেকেও এই রাডার অত্যন্ত পরিষ্কার ছবি তুলতে পারে। এরকম আর কোনও ড্রোন বেসড এসএআর আছে কি না, আমার জানা নেই। কারণ, কম তাপমাত্রায় ঝঞ্ঝাট দেখা যায়। যা ছবি তোলায় সমস্যা তৈরি করে। ছবির মান ঠিক থাকে না। সাধারণত, এসএআরকে কোনও গতিশীল জিনিসের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়। সেটা কোনও যুদ্ধবিমানও হতে পারে। আবার উপগ্রহও হতে পারে।'
তপন মিশ্র নিজের এই সংস্থার নাম কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতার পদার্থবিদ্যা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা শিশির কুমার মিত্রের নামে নামকরণ করেছেন। নাম দিয়েছেন 'শিশির রাডার'। তপনবাবুর ছেলে সৌম্য মিশ্র ও পুত্রবধূ উর্মি ভাম্বানিও আহমেদাবাদে নথিভুক্ত এই নতুন সংস্থা 'শিশির রাডার'-এ কাজ করছেন। তপনবাবুর পরিষ্কার কথা তিনি নতুন কিছু করতে চান। তাঁর কথায়, 'ইসরো যেটা বানাচ্ছে, আমি যদি সেই এসএআর-ই বানাই, তবে লোকে আমার কাছে আসবে কেন? সেই জন্য আমি এমন একটা রাডার তৈরি করলাম, যেটা টানা পরিষ্কার ছবি দেবে। সাধারণ সিন্থেটিক অ্যাপারেচর রাডারের পক্ষে সেটা সম্ভব না। আশা করছি দু'বছরের মধ্যেই এই নতুন রাডার পুরোপুরি তৈরি হয়ে যাবে।'
এত জায়গা থাকতে আহমেদাবাদে কোম্পানিটা নথিভুক্ত করলেন কেন? তপন মিশ্র জানিয়েছেন, ২০১৮-র জুলাইয়ে তিনি আহমেদাবাদের স্পেশ অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ডিরেক্টর পদে বদলি হন। পদাধিকারবলে ছিলেন ইসরো চেয়ারম্যানের পরামর্শদাতা। ২০২১-এর জানুয়ারিতে ওই পদ থেকেই তিনি অবসর নেন। তাই নথিভুক্ত করেছেন। কিন্তু, কোম্পানিটা তিনি কলকাতাতেই চালাবেন। কারণ, কলকাতায় ইতিমধ্যে বিনিয়োগকারীও পেয়ে গেছেন। বেতারতরঙ্গের ইঞ্জিনিয়ারও কলকাতায় যথেষ্ট আছে। গুজরাতে এসব পাওয়া মুশকিল।
ছেলে আর বউমা তাঁকে নতুন সংস্থার কাজে সাহায্য করছে। এতে তাঁর বেশ সুবিধাই হচ্ছে বলে তপনবাবু জানান। ছেলে আইআইটি-কানপুর থেকে পাশ করা ইঞ্জিনিয়ার। নতুন সংস্থায় কাজের অভিজ্ঞতাও আছে। কারা বিনিয়োগ করছে আপনার সংস্থায়? এনিয়ে অবশ্য মুখ খুলতে নারাজ এই বাঙালি বিজ্ঞানী। সেটা অবশ্যই ব্যবসায়িক স্বার্থে। কারণ, ইতিমধ্যেই বহু সংস্থা তাঁর এই নতুন ধরনের এসএআর তৈরির কথা জানতে পেরে গেছে। আর, উত্সাহও দেখাতে শুরু করেছে।
কিন্তু, তাঁর সংস্থার তৈরি এই রাডার কি আদৌ সাধারণ মানুষের কাজে লাগবে? তপনবাবুর দাবি, অবশ্যই লাগবে। স্পষ্ট জানালেন, ' যে সংস্থা শস্যবিমা দেয়, তাদের মহাকাশে উপগ্রহ থেকে ব্যবহৃত রাডারের দরকার পড়ে না। তারা দেখতে চায়, যে খেতের জন্য বিমার টাকা দিচ্ছে, সেখানকার একটা পরিষ্কার আর স্বচ্ছ ছবি। এই রাডার ড্রোন থেকে ব্যবহার করা যায়। যার সাহায্যে বিমা সংস্থাগুলো সেই ছবি সহজেই পেয়ে যাবে। তারপর, জমির ফসল পোকায় খাচ্ছে কি না, তা এই রাডারের সাহায্যে নজর রাখা যাবে। খনি থেকে পরিকাঠামোর কাজ ঠিকঠাক চলছে কি না, সেই ব্যাপারে জানা যাবে। এমনকী, গ্রামীণ কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্পের কাজও ঠিকমতো চলছে কি না, লোক না-পাঠিয়ে স্রেফ ড্রোনে এই রাডার লাগিয়েও সহজে জানা সম্ভব।' আর, এসব কথা মাথায় রেখেই এখন তাঁর নতুন সংস্থার জন্য স্বপ্নের জাল বুনছেন তপন মিশ্র। যে স্বপ্নের উড়ান শুরু হবে কলকাতা থেকে।
Read story in English