/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/IMG_1658-lead.jpg)
শিয়ালদা স্টেশন। ফাইল ছবি: শশী ঘোষ
চলতি বছরেই বন্ধ হতে চলেছে গুগলের 'স্টেশন' ওয়াইফাই প্রকল্প, যা বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা যোগায় ভারতের ৪০০-র বেশি রেল স্টেশনে। পাশাপাশি নাইজেরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিনস, মেক্সিকো, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশেও বন্ধ হতে চলেছে এই পরিষেবা।
ভারতে এই প্রকল্প চালু হওয়ার ঘোষণা করা হয় ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর, যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেন ভিউতে গুগলের ক্যাম্পাস পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার পরের বছর জানুয়ারি মাসে প্রথম যে ভারতীয় স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা চালু হয়, তা হলো মুম্বই সেন্ট্রাল। সরকার অধিকৃত সংস্থা (PSU) 'রেলটেল' (Railtel)-এর সঙ্গে এই প্রকল্পে হাত মেলায় গুগল। এছাড়াও এই প্রকল্পের লক্ষ্য ছিল গুগলের ‘Next Billion Users’ (NBU) প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, মূলত তাঁদের জন্য যাঁরা এখনও ইন্টারনেট ব্যবহার করেন না।
কেন 'স্টেশন' ওয়াইফাই বন্ধ করছে গুগল?
গুগলের পেমেন্ট ও NBU বিভাগের ভাইস-প্রেসিডেন্ট সিজার সেনগুপ্ত একটি ব্লগ পোস্টে লিখেছেন, ২০২০ শেষ হওয়ার আগেই বন্ধ হয়ে যাবে পরিষেবা, কারণ আমূল পরিবর্তন এসেছে বাজারে। ব্লগে যা তিনি লেখেন নি, তা হলো এই যে Railtel-এর সঙ্গে গুগলের চুক্তিরও এটাই শেষ বছর। তবে বাজারে পরিবর্তন সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, গত দুবছরে মোবাইল ডেটার দাম অনেকটা কমে যাওয়ায় ভারতে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে, ফলে আর প্রাসঙ্গিক নয় স্টেশন ওয়াইফাই। পরিসংখ্যান দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, গত পাঁচ বছরে শতকরা ৯৫ ভাগ কমেছে মোবাইল ডেটার দাম, এবং ভারতে এখন প্রতি জিবির হিসেবে যে দামে মোবাইল ডেটা পাওয়া যায়, তা পৃথিবীর খুব কম দেশেই সম্ভব।
/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2020/02/wifi.jpg)
তার মানে রেল স্টেশনে কি আর ওয়াইফাই পাওয়া যাবে না?
গুগলের 'স্টেশন' পরিষেবা যেসব স্টেশনে পাওয়া যেত, সেগুলিতে অংশীদার হিসেবে উপস্থিত ছিল Railtel, যা এখনও বিনামূল্যে ওয়াইফাই পরিষেবা প্রদান করবে RailWire প্রকল্পের অধীনে। বর্তমানে দেশে আন্দাজ ৫,১৯০টি স্টেশনে ওয়াইফাই পরিষেবা দেয় Railtel, এবং গুগলের 'স্টেশন' প্রকল্পের আওতায় ৪০০টি স্টেশনেও ভবিষ্যতে তারাই ওয়াইফাইয়ের যোগান দেবে।
এমনিতেও এই প্রকল্পের প্রয়োজনে দেশজুড়ে যে প্রায় ৪৫ হাজার কিমি-র অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্ক তৈরি হয়েছিল, তার মালিকানা Railtel-এর। এই নেটওয়ার্কই ব্যবহার করছিল গুগল।
কেমন চলছিল গুগল 'স্টেশন'? পরিষেবা চালু হওয়ার মাসকয়েক পর, ২০১৬ সালের জুন মাসে গুগল দাবি করে যে ১৯টি স্টেশন মিলিয়ে তাদের পরিষেবা ব্যবহার করছেন ১.৫ মিলিয়ন (১৫ লক্ষ) মানুষ। এর পর ২০১৮ সালে কিছু পরিসংখ্যানের মাধ্যমে গুগল দেখায়, ভারী মাত্রায় ব্যবহৃত হচ্ছে তাদের পরিষেবা। প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, এই পরিষেবার মাধ্যমে প্রায় ৭,১০০ টিবি (টেরাবাইট) ডেটা খরচ করছিলেন আনুমানিক ৭৫ লক্ষ ব্যবহারকারী। ওই সময় আন্দাজ ৩৭০টি রেল স্টেশনে চালু ছিল এই পরিষেবা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, শুধুমাত্র পুনে, এলাহাবাদ, বিজয়ওয়াড়া, এবং বিশাখাপত্তনম স্টেশনেই ১০ হাজার ব্যবহারকারী গড়ে ২ টিবির বেশি ডেটা খরচ করতেন। গল্প শোনা যেতে লাগল যে স্রেফ গুগল স্টেশন ওয়াইফাই ব্যবহার করার জন্যই প্ল্যাটফর্ম টিকিট কেটে স্টেশনে ঢুকে ইউটিউব দেখছেন বা ছবি ডাউনলোড করছেন ব্যবহারকারীরা, এমনকি রোজকার কাজও সারছেন তাঁরা।
কেন রেল স্টেশনে ওয়াইফাই বসাল গুগল?
এর একটা বড় কারণ ছিল নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ এবং ফাইবার নেটওয়ার্কের উপস্থিতি। তাছাড়াও ছিল ভারতীয় রেলের বিপুল যাত্রীসংখ্যার আকর্ষণ। শুধুমাত্র দেশের বৃহত্তম ১০০টি স্টেশনের মধ্যে দিয়েই প্রত্যহ যাতায়াত করেন প্রায় ১ কোটি যাত্রী।
তবে এই সংখ্যক যাত্রী থাকা সত্ত্বেও মোবাইল ডেটা আরও সুলভ হয়ে যাওয়ায় ক্রমশ অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছে 'স্টেশন' ওয়াইফাই পরিষেবা, মনে করছে গুগল। প্রকল্পটি চালু করার সময় গুগল ঘোষণা করে যে তারা সম্ভাব্য ১ কোটি ব্যবহারকারীর লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগোচ্ছে, এবং তাদের ওয়াইফাইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রকারের ডিভাইসে ব্রডব্যান্ড মানের পরিষেবা প্রদান করতে চায়।