ডিজিটাল ইন্ডিয়ার চক্করে ভারতের রেল স্টেশন, রাস্তাঘাট সর্বত্র ওয়াইফাই বসানোর ধুম পড়েছে। পরিকল্পনার শুরুতে ভাবা হয়েছিল রণে বনে জলে জঙ্গলে যেখানে খুশি আপনি ওয়াইফাই ব্যবহার করে পাবেন ইন্টারনেট পরিষেবা। কিন্তু আমজনতার জন্য যে বিনামুল্যে এই পরিষেবা আনা হল, তাতে কোনো কৌতূহলই নেই তাদের। সবাই নিজের ফোনের ফোর জি ব্যবহার করতেই বেশি আগ্রহী। এদিকে ফাইল বন্দী হয়ে পড়ে আছে এখনও প্রায় আড়াই লাখ গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পাঁচ হাজার রেলওয়েতে ফ্রি ওয়াইফাই বসানোর পরিকল্পনার নথিপত্র।
২০১৬ সাল থেকে সূচনা ফ্রি ওয়াইফাই পরিকল্পনার। তবে বর্তমানে প্রকল্পের কাজ এগোলেও তাতে সেরকম আগ্রহ নেই ব্যবহারকারীদের। টেলিকম পরিষেবায় স্থির ব্রডব্যান্ডের ট্রেন্ড বোধহয় শেষের দিকে। বাড়িতে বা যেকোনো কর্মক্ষেত্রে খুবই প্রয়োজনীয় ব্রডব্যন্ড সংযোগের জন্য ওয়াইফাই। স্মার্টফোনের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সে কারণে সরকারি ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক পরিষেবা দেওয়ার উদ্যোগ 'যথাযথ' বলে জানানো হয়েছে ওপেনসিগনাল রিপোর্টে। অন্যদিকে ভারতে ফোর জি নেটওয়ার্কের চাহিদা নিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ মোবাইল নেটওয়ার্ক পরিষেবা। তবে ভারতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ওয়াইফাই ব্যবহারকারীও রয়েছেন, যাঁদের ওপর ভর করেই ইন্টারনেটের গতি এবং ব্রডব্যান্ড সংখ্যা বাড়ানোর কথা ভাবছেন সরকার।
ভারতের ৪০০টি রেল স্টেশনে নিখরচায় ইন্টারনেট পরিষেবার ব্যবস্থা রয়েছে। তবে তা ঠিক কোন কাজে লাগে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ নানা রকমের মনোরঞ্জন ও সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্যই ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন। সেই মনোরঞ্জনের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে পর্নোগ্রাফি। বেশ কয়েকটি গবেষণায় দেখা গেছে, সারা ভারতে বিনামূল্যে রেলের ওয়াইফাই পরিষেবা ব্যবহার করে পর্ন সাইটে উঁকিঝঁকি দেওয়ার অভ্যেস সবচেয়ে বেশি পাটনা স্টেশনে।
৯০ দিনের একটি সমীক্ষা করে দেখা গেছে ভোডাফোনের ২০ শতাংশ, এবং এয়ারটেলের ১৭ শতাংশ গ্রাহক ব্যবহার করেন বিনামূল্যের ওয়াইফাই। অন্যদিকে ওয়াইফাইয়ের খুব একটা তোয়াক্কা করেন না জিও এবং আইডিয়া ব্যবহারকারীরা। এর একটা কারণ সম্ভবত এই যে সীমিত এলাকার মধ্যে বন্দী ফ্রী ওয়াইফাই। এলাকা ছেড়ে বেড়িয়ে গেলে সেই সংযোগ থেকে আপনি বঞ্চিত। ইউরোপের অধিকাংশ দেশে একটি পরিষেবা থেকেই সাবসক্রাইব করেন সকলে। গোটা দেশে ওই একটি ওয়াইফাই কানেকশনই রয়েছে। কিন্তু ভারতের পক্ষে তা খুবই ব্যায়বহুল। এছাড়া রয়েছে একাধিক টেলিকম পরিষেবা। অচিরেই ব্রডব্র্যান্ডে থাবা বসাতে চলেছে JioFiber। তবে বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন JioFiber এলে চাহিদা বাড়তে পারে ফ্রি ওয়াইফাইয়ের।