Advertisment

বৃহস্পতির আকারের গ্রহকে গিলে খেল হাজারগুণ বড় নক্ষত্র, পৃথিবীর ভবিষ্যত নিয়েও চিন্তায় বিজ্ঞানীরা

পৃথিবীও কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে?

author-image
IE Bangla Tech Desk
New Update
Jupiter-sized planet, star engulfing Jupiter-sized planet, solar system, ZTF SLRN-2020, Massachusetts Institute of Technology, Kishalay De, science news, Indian Express, India news, current affairs"

মহাবিশ্বে প্রতিমুহূর্তে এমন কোটি কোটি ঘটনা ঘটতে থাকে যা মানুষের পক্ষে পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়। গ্রহ, নক্ষত্রমণ্ডলী ও নক্ষত্রের জগতে ঘটে যাওয়া অদ্ভুত জ্যোতির্বিদ্যার ঘটনাগুলো মানুষকে বিভ্রান্ত করে রাখে। প্রথমবারের মতো, বিজ্ঞানীরা চাক্ষুষ করেছেন একটি গ্রহকে পুরোপুরি গ্রাস করেছে একটি স্ফীত নক্ষত্র। বিজ্ঞানীদের দল টেলিস্কোপের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ করেন যে একটি দৈত্যাকার নক্ষত্র, বৃহস্পতির থেকেও আকারে বড় একটি গ্রহকে গ্রাস করছে। বিজ্ঞানীরা এমন বিরল দৃশ্য দেখে শেষমেষ এই সিদ্ধান্তে আসেন এবং বলেন, 'এটাই পৃথিবীর ভবিষ্যত'। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন মাত্র ১০ দিনের মধ্যেই ১০০ গুণ বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল নক্ষত্রটি। এরপরই দ্রুত তার উজ্জ্বলতা কমে যায়। পরে ধীরে ধীরে আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে সে।

Advertisment

৫০০ কোটি বছর পর পৃথিবীকেও ঠিক এভাবে সূর্য গ্রাস করবে। বিজ্ঞানীদের দল আবিষ্কার করেছে আকাশগঙ্গা ছায়াপথের চাকতিতে অবস্থিত এক নক্ষত্রই এই কাণ্ড ঘটিয়েছে। পৃথিবী থেকে দূরত্ব প্রায় ১২ হাজার আলোকবর্ষ। আকিলা নক্ষত্রপুঞ্জের কাছাকাছি যার অবস্থান। বৃহস্পতির থেকে আয়তনে ১০ গুণ বড় এক গ্রহকে গিলে ফেলেছে নক্ষত্রটি। গরম গ্যাসে ভরা একটি বিশাল গ্রহকে গ্রাস করেছে তার থেকে হাজারগুণ বড় নক্ষত্র। ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি (এমআইটি), হার্ভার্ড এবং কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা এই অত্যন্ত বিরল মহাজাগতিক ঘটনাটি পর্যবেক্ষণ করেছেন। ২০২০ সালের মে মাসে প্রথম আবিষ্কৃত এই ঘটনাটি অনুসরণ করে গবেষকদের দল এখন একটি গ্রহের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সেই সঙ্গে বিজ্ঞানীদের দল এখন নতুন করে ভাবতে শুরু করেছে এই গ্রহের মৃত্যুর পর পৃথিবীর মৃত্যুর সম্ভাবনা নিয়ে।

পৃথিবীও কি এভাবে শেষ হয়ে যাবে? ভারতীয় বিজ্ঞানী কিশলয় দে, যিনি বিজ্ঞানীদের দলের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তিনি বলেন, এই বিরল মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের পৃথিবীর মৃত্যুর বিষয়েও একটি সম্ভাবনা তুলে ধরেছে। তিনি আরও বলেন, যে "প্রায় ৫০০ কোটি বছর পর পৃথিবীকেও ঠিক এভাবে সূর্য গ্রাস করবে। শুধু পৃথিবী নয়, আমাদের সৌরজগতের বেশিরভাগ গ্রহইকেই এভাবে গ্রাস করবে।" কিশলয় দে বলেন, সেই সময়ে যদি অন্য কোন গ্রহ আমাদের দিকে তাকিয়ে থাকে, অর্থাৎ পৃথিবীর দিকে, তাহলে প্রায় ১০,০০০ আলোকবর্ষ দূর থেকে পৃথিবীকে সূর্য যে গ্রাস করছে তা দেখা যাবে। তখন সূর্যের উজ্জ্বলতা বহুগুণ বেড়ে যাবে এবং সূর্য থেকে কিছু উপাদান বেরিয়ে আসবে এবং তার পরে চারদিকে শুধু ধুলোবালি ছড়িয়ে পড়বে।

নেচার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি সমীক্ষায়, বিজ্ঞানীরা বর্ণনা করেছেন কিভাবে তারা আকিলা নক্ষত্রপুঞ্জের কাছে প্রায় ১২হাজার আলোকবর্ষ দূরে একটি নক্ষত্রের বিস্ফোরণ পর্যবেক্ষণ করেছেন। এই নক্ষত্রটি অদৃশ্য হওয়ার আগে দশ দিনে ১০০ গুণেরও বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। অবশিষ্ট হিসেবে শুধু পড়ে থাকতে দেখা যায় ধুলো। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, বিশালাকারের ওই নক্ষত্রটি আসলে বার্ধক্যে পৌঁছে গিয়েছিল। ভিতরের জ্বালানি শেষ হতে বসেছিল প্রায়। ফলে ফেঁপে উঠছিল আয়তনে। উজ্জ্বল হয়ে উঠছিল আরও। সেই সময়ই গ্রহটি কাছাকাছি এসে পড়ায় সেটিকে গিলে নেয় ওই নক্ষত্র। একাধিক শক্তিশালী টেলিস্কোপ এবং আমেরিকার মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা-র NEOWISE মহাকাশযান থেকে বিষয়টি ধরা পড়েছে। গবেষণায় যুক্ত ছিলেন MIT-র জ্যোতির্পদার্থবিদ কিশলয় দে।

ভারতীয় বিজ্ঞানী কিশলে দে কে? এই বিরল ঘটনার গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ভারতীয় বিজ্ঞানী কিশলে দে, যিনি ২০১৬ সালে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্স থেকে স্নাতক হন এবং তারপরে তিনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে অ্যাস্ট্রোফিজিক্সে পিএইচডি করেন। কলকাতার বাসিন্দা কিশলয় একজন নাসার আইনস্টাইন পোস্টডক্টরাল ফেলো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্বনামধন্য এমআইটি কলেজে জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করছেন।

Tech News
Advertisment