মঙ্গলরহস্য উন্মোচনে অনেক দিন ধরেই কোমড় বেঁধে নেমেছে নাসা। গতকাল উৎক্ষেপণ করা নয়া মঙ্গলযান ‘মার্স ইনসাইট’ এবার লাল গ্রহে ল্যান্ড করল। কয়েকবছর আগে পাঠানো কিউরিয়োসিটির সফলতার মত এবারেও আশার আলো দেখছেন নাসার বিজ্ঞানীরা। আজও বহু প্রশ্নের উত্তর পান নি বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। গ্রহের জন্ম থেকে ভবিষ্যত, প্রাণের সন্ধান, দিন রাতের হিসাব নিকাশ সমস্ত কিছুর অনুসন্ধান করতেই দ্বিতীয় পদক্ষেপে নাসা।
পৃথিবীর পর মঙ্গলকে নিয়েই ভাবনা চিন্তায় বিজ্ঞানীরা, লাল গ্রহে প্রাণের সঞ্চার ঘটতে পারে এমন আশাতেই রয়েছেন তাঁরা। মঙ্গলের চৌহদ্দিতে পৌঁছনোর পর মঙ্গলের অভ্যন্তরীণ পরিবেশ সম্পর্কে জানান দেবে ইনসাইট। শুধু তাই নয়, ১৬ ফিট (৫ মিটার) গর্ত করে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা, মঙ্গলে হওয়া ভুমিকম্প, ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য পাঠাতে থাকবে। বিজ্ঞানীদের সন্দেহ দানা বেঁধেছে মঙ্গল গ্রহের ভিন্নতা নিয়ে। পৃথিবীর তুলনায় মঙ্গলের ভূতাত্ত্বিক সক্রিয়তা প্রায় দ্বিগুণ কম। ‘মার্স ইনসাইট’ জানান দেবে সৌরজগতের পাথুরে গ্রহগুলির থেকে মঙ্গল এত ভিন্ন কেমন করে।
আরও পড়ুন: দুষণ থেকে বাঁচতে প্রযুক্তি ভরসা
নাসার জেট প্রোপালসন ল্যাবের বিজ্ঞানী তথা ‘মার্স ইনসাইট’-এর অন্যতম কর্মকর্তা ব্রুস বেনারড্ট বলেন, "সীসা গলিয়ে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট তাপমাত্রা রয়েছে শুক্র গ্রহে। সূর্যের নিকটবর্তী হওয়ার কারণে বুধের তাপমাত্রা এমনিতেই বেশি থাকে। সেই তুলনায় মঙ্গলগ্রহ বেশ ঠান্ডা। আমরা জানতে চাই এই তারতম্যের কারণ।"
প্রোপালসন ল্যাবের বিজ্ঞানী রব গ্রোভার বলেন, "এবার পরীক্ষা নিরীক্ষার ফলাফল যথেষ্ট সঠিক, তা নিয়ে সন্দেহ নেই, কাজেই সফলভাবেই পৌঁছবে নয়া মঙ্গল যান।" তবে অবতরণের সময় বায়ুস্তরের সঙ্গে প্রবল সংঘর্ষে তৈরি হয়েছে উচ্চ তাপমাত্রা। যেখানে যানটির ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা থাকে। এখন পর্যন্ত মঙ্গলের কক্ষপথে পৌছনোর জন্য ৪৩ বার আন্তর্জাতিক উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে ব্যর্থ হয়েছে ২৫ টি যান। বহু ক্ষেত্রে নামার সময় মঙ্গলের মাটিতে ভেঙে পড়েছে। এমন নিদর্শনও আছে, মহাকাশযান উৎক্ষেপণের পরে তার আর খোঁজ মেলেনি।
দুই দিনেরও কম সময়ে নাসার ইনসাইট অবতরণ করেছে মঙ্গলে। প্রতি ঘন্টায় ১৯,৮০০ কিলোমিটার অতিক্রম করেছে। তবে কক্ষপথে পৌঁছলে তার গতি হ্রাস পায়। সাত মিনিটে পৌঁছে যায় মহকাশে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন একদিন অবতরণের সময় যে সমস্যা হত, সেই সমস্যা যাতে আর না হয় তার দিকে খেয়াল রেখেই তৈরি করা হয়েছে এই যান। ল্যান্ডিং সফল হওয়ার ফলে ইনসাইট মঙ্গলের গভীর অভ্যন্তরীণ অধ্যয়নরত প্রথম মহাকাশযান হবে। বিশ্বজুড়ে মানুষ ঘটনাটি ইউটিউব সহ নাসা টেলিভিশন, সংস্থার ওয়েবসাইট এবং সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে লাইভ দেখেছেন।