ভারত চাঁদ, মঙ্গল এবং শুক্রে অনায়াসেই তার মিশন চালাতে পারে। তবে তার জন্য মহাকাশ খাতের বিনিয়োগ বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন ইসরো প্রধান।
আগামী দিনে ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) এর পরিকল্পনার বিষয়ে খোলামেলা, ইসরো প্রধান এস সোমানাথ। তিনি এক প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ‘ভারতের মহাকাশ খাতে আরও অনেক কিছু অর্জন করার ক্ষমতা রয়েছে। তবে মহাকাশ খাতে বিনিয়োগের আরও বেশি প্রয়োজন রয়েছে।
ইসরো প্রধান সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন “ভারতের চাঁদ, মঙ্গল এবং শুক্রে অনায়াসেই লক্ষ্যভেদ করতে পারে। আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে হবে। আমাদের আরও বিনিয়োগের প্রয়োজন এবং এর মাধ্যমে পুরো দেশের অগ্রগতি সম্ভব, এটাই আমাদের লক্ষ্য,” । তিনি আরও যোগ করেছেন, "প্রধানমন্ত্রী মোদী আমাদের যে দৃষ্টিভঙ্গি রেখে নিয়ে আগামীদিনে কাজ চালিয়ে যেতে বলেছেন, আমরা তা পূরণ করতে পুরোপুরি প্রস্তুত’।
শনিবার, প্রধানমন্ত্রী মোদী ইসরো বিজ্ঞানীদের শ্রদ্ধা জানাতে গ্রিস থেকে সরাসরি বেঙ্গালুরুতে নেমেই ইসরোর দফতরে হাজির হন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
সেখানে পৌঁছে ইসরোর বিজ্ঞানীদের অভিনন্দন জানান তিনি। এরপরই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ইসরো প্রধান সোমনাথ বলেন, ‘আমাদের মহাকাশ খাতকে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতির স্বার্থে আরও প্রসারিত করা উচিত এবং এটাই ইসরোর উদ্দেশ্য’।
ভারত বুধবার ইতিহাস রচনা করেছে। তৃতীয় মুন মিশন চন্দ্রযান-৩-এর ল্যান্ডার মডিউল (LM) চন্দ্রপৃষ্ঠে সফট ল্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে ভারত পৃথিবীর একমাত্র দেশ হিসাবে নিজেকে প্রমাণ করেছে। এর আগে কোন দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে পৌঁছাতে পারেনি।
এদিকে চন্দ্রযান-৩ নিয়েও বিরাট আপডেট দিয়েছে ইসরো। মুন মিশনের তিনটি লক্ষ্যের মধ্যে দুটি অর্জন করেছে চন্দ্রযান ৩, ISRO জানিয়েছে – এখন তৃতীয়টির কাজ চলছে। আপডেট করা তথ্যে বলা হয়েছে যে চন্দ্রযান-৩ মিশনের সমস্ত পেলোড স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে।
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) শনিবার জানিয়েছে যে চন্দ্রযান -৩ মিশনের তিনটি উদ্দেশ্যের মধ্যে দুটি ইতিমধ্যেই পূরণ করেছে। তৃতীয় লক্ষ্যভেদে পরীক্ষা চালাচ্ছে চন্দ্রযান-৩
লক্ষ্যভেদে অপরাজেয় চন্দ্রযান-৩, মিশন নিয়ে বিরাট আপডেট ইসরোর
ISRO তার X হ্যান্ডেলে যে তথ্য পোস্ট করেছে তাতে লেখা হয়েছে, "চন্দ্রযান-৩ তিনটি লক্ষ্যের মধ্যে দুটি অর্জন করেছে। তৃতীয় উদ্দেশ্যের আওতায় বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। সমস্ত পেলোড স্বাভাবিকভাবে কাজ করছে”।
অন্যদিকে, শনিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করেছেন যে চন্দ্রযান-৩-এর 'নরম অবতরণ'-এর তারিখ, ২৩ আগস্ট, এখন থেকে ‘জাতীয় মহাকাশ দিবস’ হিসেবে পালিত হবে এবং ল্যান্ডার 'বিক্রম' যে স্থানে অবতরণ করেছে সেই স্থান'শিব শক্তি' পয়েন্ট হিসাবে পরিচিত হবে। তিনি আরও ঘোষণা করেছেন যে চাঁদের যে জায়গাটি্তে২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ তার পায়ের ছাপ রেখেছিল সেটি এখন 'তিরাঙ্গা' পয়েন্ট হিসাবে পরিচিত হবে।
পরপর অভিযান
অভিযান সফল হওয়ায় ভারত প্রথম দেশ হিসেবে চন্দ্রের দক্ষিণ মেরুতে মহাকাশযান অবতরণ করাল। আর, চাঁদে সফল অভিযান চালানো গেশগুলোর তালিকায় সামগ্রিকভাবে চতুর্থ স্থান অধিকার করল। ইসরোর পরবর্তী অভিযানগুলোর অন্যতম হল- গগনায়ন, লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন, আদিত্য এল-১, মঙ্গলায়ন ২, শুক্র মিশন।
মিশন গগনায়ন
রাশিয়া-আমেরিকার মতো মহাকাশে মানুষ পাঠাবে ভারত। ২০১৮-র ১৫ অগস্ট, স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে ‘গগনায়ন’ প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। তিন ধাপে এই অভিযান কার্যকর হবে। প্রথম দুই ধাপে মানববিহীন মহাকাশযান যাবে। তার মধ্যে প্রথম ধাপে সাফল্য পেলে, দ্বিতীয় ধাপে মহাকাশযানে রোবট যাবে। রোবটের নাম ‘ব্যোম মিত্র’। শেষ ধাপে যেতে পারেন তিন মহাকাশচারী। ২০২৪-এর গোড়ায় এই অভিযান শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
মিশন লুনার পোলার এক্সপ্লোরেশন
জাপানের সহযোগিতায় হতে চলেছে এই চন্দ্রাভিযান। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি বা জাক্সা এবং ইসরোর মিলিত উদ্যোগে অভিযান হবে। এজন্য রোভার এবং ল্যান্ডার তৈরি হচ্ছে দুই দেশের সহযোগিতায়। নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রযুক্তি এবং যন্ত্রাংশও ব্যবহৃত হবে। চাঁদে জলের খোঁজ, যান চলাচল এবং রাত্রিযাপন সম্ভব কি না, তা জানা এই প্রকল্পের লক্ষ্য।
মিশন আদিত্য এল-১
চাঁদের পাশাপাশি, সূর্য নিয়েও গবেষণা করতে চায় ইসরো। এজন্য আদিত্য-এল ১ স্যাটেলাইট পাঠাবে ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা। যা সূর্যের ল্যাগরানগিয়ান পয়েন্ট-১ এর কাছে কক্ষপথে অবস্থান করবে। করোনার বাড়াবাড়িতে প্রকল্পটি পিছিয়ে যায়। তার আগেই ৩৭৮.৫৩ কোটি টাকা এই প্রকল্পে খরচ হয়েছে।
মিশন মঙ্গলায়ন-২
ফের মঙ্গলে মহাকাশযান পাঠাতে চায় ইসরো। এবারের মহাকাশযানে হাইপারস্পেকট্রাল ক্যামেরা এবং র্যাডার থাকবে। অবশ্য, কবে অভিযানের কাজ শুরু হবে, তা এখনও অজানা।
মিশন শুক্র
মঙ্গলের পর শুক্র গ্রহেও অভিযান চালাবে ইসরো। প্রকল্পের সম্ভাব্য নাম শুক্রযান। প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালে এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল। পরে, তা পিছিয়ে ২০৩১ সাল করা হয়েছে।