পৃথিবীর বাইরে সুদূর মহাকাশের অসীম রহস্য উদঘাটনের দৌড়ে দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে ভারত। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) প্রধান এস সোমনাথ বলেছেন, ভারত আগামী দিনে প্রতি মাসে মহাকাশ ভ্রমণ চালিয়ে যাবে।
রবিবার তামিলনাড়ুর মাদুরাইতে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলার সময়, এস সোমনাথ বলেছিলেন ভারতের হাইভোল্টেজ সৌর মিশন, আদিত্য এল -১, নিরাপদে পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে এল -১ পয়েন্টে পৌঁছানো স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। একই সঙ্গে তিনি বলেন যে মহাকাশে মানুষকে পাঠানোর উচ্চাকাঙ্ক্ষী মিশন 'গগনযান'-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ ২১ অক্টোবরই হতে চলেছে।
আদিত্য এল-১ জানুয়ারির মাঝামাঝি এল-১ পয়েন্টে পৌঁছাবে
ভারতের প্রথম সৌর মিশন, আদিত্য-এল১ মহাকাশযানটি মসৃণভাবে অগ্রসর হচ্ছে এবং জানুয়ারির মাঝামাঝি নাগাদ ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট-১ (এল-১) এ পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে, বলেই জানিয়েছেন এস সোমনাথ। তিনি বলেন, “এটি খুব ভালো কাজ করছে। পৃথিবী থেকে এল-১ পয়েন্টে যেতে প্রায় ১১০ দিন সময় লাগবে। তাই জানুয়ারির মাঝামাঝি এটি এল-১ পয়েন্টে পৌঁছাবে বলেই আশা”।
২১ অক্টোবর গগনযান মিশনের জন্য পরীক্ষামূলক ফ্লাইট
ইসরো প্রধান 'গগনযান' মিশন নিয়েও কথা বলেছেন। তিনি বলেন, "গগনযান মিশনের জন্য পরীক্ষামূলক অনুশীলন আগামী ২১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে। ISRO প্রধান জানিয়েছে পরীক্ষামূলক যান টিভি-D1 চলতি মাসে পরীক্ষা করা হবে, যা গগনযান প্রোগ্রামের অধীনে চারটি পরীক্ষামূলক মিশনের মধ্যে একটি। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো) আরও এক কৃতিত্ব অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে। চলতি মাসের শেষে মিশনের ‘ক্রু এস্কেপ সিস্টেম’ পরীক্ষা করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর।
আগামী বছর শুরু হবে গগনযান মিশন। এর আগে যাবতিয় প্রস্তুতি সেরে রাখতে চলেছে ইসরো। এর মধ্যে, প্রথম যানবাহন পরীক্ষামূলক মিশন হবে TV-D1, দ্বিতীয়টি TV-D2 মিশন এবং তৃতীয় পরীক্ষা হবে LVM3-G1। এটি একটি মানবহীন মিশন।
চাঁদে ভারতের সফল অবতরণের পর এখন গগনযান মিশনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরো। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, শীঘ্রই গগনযান মিশনের জন্য মনুষ্যবিহীন ফ্লাইট পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। ২৫ অক্টোবর গগনযান মিশনের প্রস্তুতিতে বড় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা।
প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই হাইভোল্টেজ মিশন আগামী বছর চালু হবে। এর আগে ইসরো তার এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে গগনযান মিশনের জন্য মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান পরীক্ষা শুরুর কাজ প্রায় শেষের পথ। স্ক্রু এস্কেপ সিস্টেমের কর্মক্ষমতা প্রদর্শনকারী ফ্লাইট টেস্ট ভেহিকল অ্যাবর্ট মিশন-১ (টিভি-ডি১) এর প্রস্তুতি চলছে। এর মধ্যে, তিনটি পরীক্ষামূলক মিশন পরিচালিত হবে। প্রথমটি TV-D1, দ্বিতীয়টি TV-D2 মিশন এবং তৃতীয় পরীক্ষা হবে LVM3-G1।
এস সোমনাথ আরও বলেন, যে মিশন গগনযানের চূড়ান্ত লঞ্চের আগে, প্রতি মাসে কমপক্ষে একটি করে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পর্ব চলবে। তিনি বলেন, "প্রতি মাসে আমাদের অন্তত একটি উৎক্ষেপণের লক্ষ্য থাকবে। জানুয়ারির আগে, ৪-৫টি উৎক্ষেপণ পর্ব চলবে বলেই জানান তিনি। "
গগনযান মিশন কি?
মিশন গগনযান হল ভারতের হাইভোল্টেজ মহাকাশ মিশন যেখানে মহাকাশচারীদের পৃথিবী থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে মহাকাশে পাঠানো হবে। এরপর এটিকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে এনে বঙ্গোপসাগরের অবতরণ করার পরিকল্পনা রয়েছে। এটি চূড়ান্তভাবে আগামী বছরের শেষের দিকে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে, মহাকাশচারীদের নিরাপদে প্রত্যাবর্তনের জন্য অনেক পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ পরিচালনা করা হবে। ২৩ আগস্ট, ISRO চন্দ্রযান-৩ সফলভাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।
বর্তমানে, সূর্যের বাইরের স্তর নিরীক্ষণের জন্য ISRO-এর আরেকটি উচ্চাভিলাষী মিশন, আদিত্য এল-১ লঞ্চ করেছে যা তার লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছে। পৃথিবী থেকে ১৫ লাখ কিলোমিটার দূরে এল-১ পয়েন্টে স্থাপন করে সূর্যকে নিরীক্ষণ করবে ইসরো। এল-১ বিন্দুতে অন্য কোনো মহাজাগতিক বস্তুর ছায়া নেই, যার কারণে সূর্যের আলো মহাকাশযানের উপর ২৪ ঘন্টা পড়বে এবং সূর্যের বাইরের স্তর অধ্যয়ন করা সহজ হবে। এর জন্য আদিত্য এল-১-এ সাতটি পেলোড স্থাপন করা হয়েছে যা দেশীয়ভাবে তৈরি করা হয়েছে।