চাঁদ ছুঁয়ে সূর্য ধরার লক্ষ্যে পাড়ি দিল 'আদিত্য-এল-১', ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। মুন মিশনের সাফল্যের পর এবার সূর্যের পাড়ায় পাড়ি দিয়েছে ইসরো। সকাল থেকেই ছিল 'আদিত্য-এল ১'- সৌরমিশন নিয়ে টানটান উত্তেজনা। ইসরো প্রধান এস সোমনাথ গতকালই জানিয়েছিলেন, ‘রকেট এবং স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণের জন্য প্রস্তুত। ভারতের প্রথম সৌর মিশন ঘিরে সকাল উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গিয়েছে দেশ জুড়ে।
পৃথিবী থেকে এই দূরত্ব ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে পাড়ি দিল আদিত্য-এল-১। সূচনা হল নতুন অধ্যায়ের। ইসরোকে অভিনন্দন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। চাঁদে সফল অবতরণের পর, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) এখন মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায়ের উন্মোচন করতে চলেছে। এবার চোখ সূর্যের দিকে। ২ রা সেপ্টেম্বর ঠিক সকাল ১১.৫০ মিনিটে সূর্যের উদ্দেশ্যে পাড়ি দেয় ISRO মহাকাশে আদিত্য-এল ১ মিশন। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) ১ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলিতে আদিত্য এল-১ মিশন সম্পর্কে তথ্য প্রদান করেছে এবং কোন প্ল্যাটফর্মে এর উৎক্ষেপণ লাইভ দেখা যাবে তাও জানিয়েছিল।
ভারতের প্রথম সৌর মিশন 'আদিত্য এল-১' শনিবার, ২ সেপ্টেম্বর সকাল ১১.৫০ টায় অন্ধ্র প্রদেশের শ্রীহরিকোটা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়। শনিবার সকাল ১১.২০ থেকে থেকে আদিত্য এল-১-এর লঞ্চ-এর লাইভ স্ট্রিমিং দেখতে সোশ্যাল মিডিয়ায় মানুষের কার্যত ঢল নামে। ইসরোর ইউটিউব চ্যানেল, অফিসিয়াল ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক পেজে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ফের ইতিহাস গড়ল ইসরো। অপেক্ষার অবসান। সূর্যে পাড়ি দেয় ভারতের প্রথম সৌর মিশন ‘আদিত্য-এল- ১’। উৎক্ষেপণের আগে, ISRO বিজ্ঞানীদের একটি দল মিশনের সাফল্য কামনায় গতকালই তিরুপতি মন্দিরে পুজো দেন। আদিত্য মহাকাশযান 'PSLV-C57' রকেটের মাধ্যমে উৎক্ষেপণ করা হয়।
উৎক্ষেপণের পর, ISRO-এর মহাকাশযান এল-১ পয়েন্ট পর্যন্ত। এই যাত্রা শেষ করতে সময় লাগবে ৪ মাস। আসলে পৃথিবী থেকে সূর্যের দূরত্ব প্রায় ১৫০ মিলিয়ন কিলোমিটার। এই দূরত্বের মধ্যে রয়েছে পাঁচটি ল্যাগ্রেঞ্জ পয়েন্ট রয়েছে। এগুলি এল-১, এল-২, এল-৩, এল-৪ এবং এল-৫ পয়েন্ট হিসাবে পরিচিত। এল-১ হল এর প্রথম বিন্দু, যার দূরত্ব পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার। এই পয়েন্ট থেকে ২৪ ঘন্টা সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করা যাবে। এই মিশনে এক সঙ্গে সাতটি পে লোড পাঠানো হচ্ছে মহাকাশে। যার মধ্যে চারটি সূর্যের আলো নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা তথ্য সংগ্রহ করবে। বাকি তিনটি প্লাজমা এবং ম্যাগনেটিক ফিল্ড নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করবে। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণায় ‘আদিত্য-এল- ১’ প্রথম সৌর মিশন।
সৌর করোনা পরীক্ষা করার জন্য এই মিশন। সূর্যের আশেপাশের তাপমাত্রা থেকে শুরু করে সেখানকার পরিবেশ, সমস্ত তথ্য দিতে থাকবে আদিত্য এল ১। পাশাপাশি সূর্যের ঠিক কী প্রভাব পড়বে পৃথিবীতে, তাও পাঠাবে ভারতের এই মহাকাশযান। L1 পয়েন্টে পৌঁছতে আদিত্য এল ১-এর সময় লাগবে চার মাস।
আদিত্য-এল ১ অভিযানে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি) ১,৪৭৫ কেজি ওজনের মহাকাশযান বহন করবে। এই মহাকাশযাটিকে পৃথিবীর চারপাশে একটি উপবৃত্তাকার কক্ষপথে নিয়ে যাওয়া হবে। মহাকাশযানটি সাতটি বৈজ্ঞানিক পেলোড বহন করবে। চাঁদে যে পেলোডগুলো পাঠানো হয়েছে, তার চেয়ে আদিত্য-এল১ এর পেলোড দুই গুণেরও বেশি হালকা। চন্দ্রযান-৩ অভিযানের মতই, সূর্যাভিযানের মহাকাশযানও পৃথিবীর চারপাশে কক্ষপথ এবং গতিবেগ বাড়াবে। এর পাশাপাশি মহাকাশযানের গতিবেগ সূর্যের দিকে গুলতি না হওয়া পর্যন্ত বাড়ানো হবে। যেখানে পৌঁছনোর কথা, সেই এল১ পয়েন্টের দূরত্ব প্রায় চার মাসে অতিক্রম করবে মহাকাশযান। পৌঁছনোর পর এল১ পয়েন্টের চারপাশে একটি শূন্য কক্ষপথে ওই মহাকাশযান প্রবেশ করবে। আর, সেখান থেকেই সূর্যে নজরদারি চালাবে। পাঁচ বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করবে।
যে কোন দুটি মহাকাশীয় বস্তুর মধ্যে এল১ থেকে এল৫ পাঁচটি ল্যাগ্রঞ্জ বিন্দু থাকে। এই পয়েন্ট বা বিন্দুসমান স্থানগুলোকে মহাকাশে পার্কিং স্পট হিসাবে ব্যবহার করা হয়। কারণ, এই সব বিন্দুর মত স্থানগুলোয় মহাকাশীয় বস্তুর মহাকর্ষীয় টান অত্যন্ত কম থাকে। এই টানে মহাকাশীয় বস্তুর চারপাশে ঘোরা যায়। কিন্তু, ওই বস্তুর ওপর আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা থাকে না। যার ফলে, এইজাতীয় বিন্দুতে স্থাপন করা উপগ্রহকে তার আছড়ে পড়া আটকাতে বা অবস্থান বদলানো ঠেকাতে প্রচুর জ্বালানি ব্যয় করতে হবে না।