শ্রুতি ধাপোলা
নোকিয়া একই সঙ্গে ৩টি নতুন ফোন নিয়ে হাজির হয়েছে কিছুদিন আগে। দুটি ফোনের পাশাপাশি বাজারে এসেছে কোম্পানীর বাজেট হ্যান্ডসেট নোকিয়া সিক্সও। ১৬৯৯৯ টাকা দামের এই ফোনটিতে রয়েছে ৩ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি স্টোরেজ। নোকিয়ার মোবাইল বাজারে ফিরে আসার পর এদেশে বেশ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই নোকিয়ার তৈরী ফোনগুলিকে বাজারসেরাও মনে করেন। এবছর প্রকাশিত নতুন নোকিয়া সিক্স রিভিউ করার কারণও অনেকটা তাই।
কয়েকদিন ব্যবহারের পর আপনার জন্য রইল নোকিয়ার এই নতুন ফোনের বিভিন্ন খুঁটিনাটির ইতিবৃত্ত।
নোকিয়া সিক্সের ভালগুলি কী কী ?
১) গতবছরের ভার্সনটির তুলনায় এবারের নোকিয়া সিক্সের ডিজাইন আরও ভাল। ফোনটি যথেস্ট শক্তপোক্তও। নোকিয়ার এই নতুন ফোনটি হনর নাইন লাইট এবং রেডমি ৫ নোট প্রোর পাশাপাশি রাখলে বোঝা যায় নোকিয়ার এই ফোনটি কত নিখুঁত ভাবে তৈরি করা হয়েছে। ফোনটির ম্যাট ব্ল্যাক ফিনিশ, ক্যামেরা এবং ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেখলে বেশ দামী ফোন ভেবে অনেকেই ঘাবড়ে যেতে পারেন।
২) নতুন এই ফোনটিতে ১৮ঃ৯ অ্যাসপেক্ট রেশিওর ডিসপ্লে না থাকলেও স্ক্রীনটি যথেস্ট উন্নতমানের। স্ক্রীনে সমস্ত রঙ আসে যথাযথ ভাবে তবে কালো রঙের ক্ষেত্রে তা আরও একটু যথাযথ হলে ভাল লাগত। ইউটিউব দেখা হোক বা গেম খেলা, নোকিয়া সিক্সের ডিসপ্লে দেখে আপনার প্রান জুড়োবে বলেই আমাদের ধারণা।
৩) রিভিউ ফোনটিতে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন ৬৩৬ প্রসেসরের সঙ্গে ছিল ৩ জিবি র্যাম এবং ৩২ জিবি ইন্টারনাল স্টোরেজ। মাল্টিটাস্কিং এই ফোনে কোন সমস্যাই নয়। আমরা অ্যাস্পহল্ট এইঠ, মডার্ন কমব্যাট ফাইভের মত গেম খেলে এবং ব্রাউজারে অসংখ্য ট্যাব খুলে রাখার পরও কোন পারফর্মেন্সের সমস্যা দেখতে পাইনি। ফোনটিতে জিপিএস অথবা দীর্ঘ সময় ধরে ভিডিও দেখলেও গরম হবার কোন সমস্যা আমরা খুঁজে পাইনি।
৪) নতুন নোকিয়া সিক্সেও রয়েছে একটি ১৬ মেগাপিক্সলের ব্যাক এবং ৮ মেগাপিক্সেলের। কিন্তু নতুন ফোনটির ক্যামেরা লেন্সদুটি তৈরী করেছেন জেইস অপটিক্স। ভাল ছবি তুলবার জন্য ফোনে দেওয়া প্রো মোড এবং বোথি ফিচার দুটির সেভাবে কোন উপযোগিতা নেই। তবুও এই ফোনটির ক্যামেরার গুনমান একই দামের বাজারচলতি ফোনগুলির চাইতে কয়েকগুন ভাল। এতে তোলা ছবিগুলিতে রঙ আসে যথাযথ। তবে অন্যান্য ফোন ক্যামেরার মতই নোকিয়া সিক্সেও কম আলোয় তোলা ছবির মান প্রশ্নাতীত নয়।
৫) এই ফোনটির আরেকটি সেরা ফীচার হল এর ব্যাটারি। ফোনটিতে দেওয়া ইউএসবি-সি পোর্ট দিয়ে ব্যাটারীটি ফুল চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় দু'ঘন্টা। পিসি মার্ক টেস্টে নোকিয়া সিস্কের ব্যাটারি স্কোর মোট ছয় ঘন্টা উনষাট মিনিট যা একই দামেরঅনেক ফোনের চাইতে অনেকগুন ভাল। একবার ফুল চার্জ করলে ফোনটির ব্যাটারি প্রায় একদিন থাকে।
৬) নোকিয়া সিক্সের আরেকটি ভাল দিক হল, ফোনটি অ্যান্ড্রয়েড ৮.১ ওরিও অপারেটিং সিস্টেমে চলে। নোকিয়ার অন্যান্য ফোনের মতই এটিও অ্যান্ড্রয়েডের আগামী দুটি আপডেট পি এবং ও পাবে অনেক ফোনের চেয়ে অনেক আগেই।
কী ভাল নয়?
১) নোকিয়া সিক্সের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরটি এর ব্যাক ক্যামেরার ঠিক নিচেই লাগানো হয়েছে। ফলে অনেক সময়ই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর খুঁজতে গিয়ে ফ্ল্যাশের ওপর হাত পড়ে যেতে পারে।
২) অন্যান্য অনেক ফোনের মতই নোকিয়া সিক্সের কম আলোয় তোলা ছবির মান বেশ সাদামাটা। এছাড়াও ছবি তোলার সময় ফোনটির শাটার ল্যাগ সমস্যাও রয়েছে। আশা করা যায় কোম্পানী তাঁদের আগামী সফটয়্যারে এই সমস্যাগুলি ঠিক করে দেবেন।
১) নোকিয়া সিক্সের আরেকটি সমস্যা হল কম স্টোরেজ। গত বছরের নোকিয়া সিক্সের একটি ৪ জিবি র্যাম/ ৬৪ জিবি ভার্সন পরে কোম্পানী প্রকাশ করেছিল। বাজারের অন্যান্য প্রতিদ্বন্দীদের ফোনগুলির মতই নোকিয়ারও উচিৎ বেশ কয়েকটি র্যাম ভার্সনে ফোন বের করা।
আমাদের মতামত
নোকিয়া সিক্স ফোনটির বেশ কয়েকটি ভাল দিক আছে। ফোনটির ডিজাইন বেশ সুন্দর, ইন্টারফেসও ব্যবহার করার ক্ষেত্রে বেশ উপযোগী। পাশাপাশি এর উন্নত মানের ক্যামেরা এবং ভাল ব্যাটারী লাইফের কথা বিবেচনা করলে ফোনটি দাম অনুযায়ী যথেষ্টই ভাল।
আপনার বাজেট পনের হাজারের একটু বেশী হলে কিনে ফেলুন নোকিয়া সিক্স। আর যদি বাজেট হয় পনের হাজারেরও কম, সেক্ষেত্রে দেখতে পারেন হনর নাইন লাইট কিংবা রেডমি নোট ফাইভ প্রো।