গত রবিবার মাঝ রাত। সারা দেশ অধীর অপেক্ষায় তাকিয়ে ছিল ইসরোর দিকে। পৃথিবীর মাটি ছেড়ে চাঁদের পথে পাড়ি দেবে জিএসএলভি এমকে ৩ রকেট। কিন্তু উৎক্ষেপণের ঠিক ৫৬ মিনিট ২৪ সেকেন্ড আগে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বাতিল হয়ে যায় অভিযান। তবে যান্ত্রিক গোলযোগের কারণ অবশ্য তখন জানা যায়নি। সানডে এক্সপ্রেসের কাছে খবর, শেষ মুহূর্তে রকেটের ট্যাঙ্কে হিলিয়ামের চাপ অস্বাভাবিক রকম কমে যায়।
আগামী সোমবার দুপুরে চাঁদের পথে পাড়ি দেবে দ্বিতীয় ভারতীয় মহাকাশযান।
মহাশূন্যের রহস্য ওপর ওপর জেনেই খুশি থাকেনি ভারত। রহস্যের গভীরে পৌঁছে গিয়েছে বছরের পর বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে। জিএসএলভি এমকে-৩-এর গল্পটাও পাড় করেছে তিন দশকের ইতিহাস। ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করতে কম ঝক্কি পোয়াতে হয়নি ইসরোকে। এবার প্রশ্ন হল, ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি কী? খুব কম তাপমাত্রায় পদার্থের আচরণকে কাজে লাগানোর প্রযুক্তিকেই বলে ক্রায়োজেনিক প্রযুক্তি। জিএসএলভি এমকে-৩ রকেটের জন্য এই প্রযুক্তিই চাই। কিন্তু নয়ের দশকে মার্কিন মুলুকের কাছে হাত পাতলে ফিরিয়ে দিল তারা। এখন উপায়? দেশেই তৈরি হল সেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি।
ফের চাঁদে যাচ্ছে ভারত, কী খুঁজবে চন্দ্রযান-২?
রকেটে ব্যবহৃত সব জ্বালানীর মধ্যে হাইড্রোজেনই সবচেয়ে বেশি বল (থ্রাস্ট) প্রয়োগ করতে পারে। পৃথিবীর মাটি ছেড়ে যাওয়ার জন্য এই থ্রাস্ট খুব দরকার। কিন্তু হাইড্রোজেন বায়বীয় অবস্থায় ব্যবহার করাও বেশ কঠিন। অতএব তরল হাইড্রোজেন ব্যবহার করা হল। হাইড্রোজেন ( – ২৫০) ডিগ্রি সেলসিয়াস উষ্ণতায় তরল হয়। আর জ্বালানী পোড়াতে শুধু হাইড্রোজেন হলেও চলে না, অক্সিজেনও দরকার। অক্সিজেনের গলনাঙ্ক (-৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। এবার এত কম তাপমাত্রায় রকেটের মধ্যে থাকা অন্যান্য পদার্থের অবস্থারও বেশ খানিকটা পরিবর্তন হয়। সব মিলিয়ে ব্যাপারটা বেশ জটিল।
" width="759" height="422" allowfullscreen="allowfullscreen" data-mce-fragment="1">
কিন্তু গত সপ্তাহে ইসরোর বিজ্ঞানীরা চন্দ্রযানের যান্ত্রিক ত্রুটি সম্পর্কে তেমন কোনও দিশা দেখাতে পারেননি। "একটি হিলিয়াম ট্যাঙ্কের চাপ কমতে শুরু করেছিল। ক্রায়োজেনিক ফুয়েল ভরার সময় এই ঘটনা প্রথম পরিলক্ষিত হয়। জ্বালানীর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের অনেক অনেক কম থাকায় আশেপাশের পরিবেশের তাপমাত্রাও কমতে শুরু করেছিল", জানালেন চন্দ্রযান অভিযানের সঙ্গে যুক্ত এক বিজ্ঞানী। বললেন, "জ্বালানী ট্যাঙ্কের খুব কাছাকাছিই ছিল হিলিয়াম ট্যাঙ্ক। একটা ফোলানো বেলুন যদি বরফের কাছাকাছি নিয়ে আসা যায়, বেলুনটা কিন্তু ফেটে যাবে। চন্দ্রযানের ক্ষেত্রেও একই রকম হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু সে সময় বিজ্ঞানীরা হিলিয়াম ট্যাঙ্কের চাপ কমে যাওয়ার আসল কারণ নিয়ে নিশ্চিত ছিলেন না, দু'রকম সম্ভাবনার কথা ভাবছিলেন। এক- জ্বালানী ভরার চাপে এরকমটা হতে পারে। দুই, হিলিয়াম চেম্বারে ছিদ্র হয়ে যেতে পারে। তবে ছিদ্র যদি না হয়, তবে সমস্যা তেমন গুরুতর নয় বলেও জানিয়েছিলেন ইসরোর গবেষকরা।
হিলিয়ামের চাপ কমে যাওয়ার ফলেও যে সমস্যা হত, তাতেও অভিযান বিফল হত না। কিন্তু ১০০ কোটির টাকার এক প্রকল্পে এতটা ঝুঁকি নিতে চাননি বিজ্ঞানীরা।
Read the full story in English