Astronaut Shubhanshu Shukla Axiom-4 Mission Update: মহাকাশে মেথি-মুগের বীজ নিয়ে শুভাংশু শুক্লা, জানুন কেন, কী গবেষণা করবেন ভারতীয় মহাকাশচারী!
ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের (ISS) উদ্দেশ্যে ইতিমধ্যেই মহাকাশে পাড়ি দিয়েছেন। এই ঐতিহাসিক অভিযানে তার কাঁধে রয়েছে সাতটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক গবেষণার দায়িত্ব। এর মধ্যে একটি বিশেষ গবেষণা হচ্ছে ফসলের বীজ নিয়ে, যা ভবিষ্যতের মহাকাশ কৃষি সংক্রান্ত ক্ষেত্রে বড় পদক্ষেপের সূচনা করতে পারে।
ভারতীয় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা আজ পৌঁছাচ্ছেন আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এ। কিন্তু এখানকার দিন-রাত্রির অভিজ্ঞতা একেবারেই ভিন্ন। এখানে একদিনে শুধু একবার নয়, মোট ১৬ বার দিন ও রাত হয়! কারণ, ISS পৃথিবীকে প্রতি ৯০ মিনিটে একবার করে প্রদক্ষিণ করে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন হল পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে অবস্থিত এক বিশাল ভ্রাম্যমাণ গবেষণাগার।
মহাকাশের উদ্দেশ্যে যাত্রার সময় বায়ুসেনার গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা বলেন, "নমস্কার, প্রিয় দেশবাসী! কী দুর্দান্ত যাত্রা! আমরা ৪১ বছর পর আবার মহাকাশে। আমি এখন পৃথিবীকে প্রতি সেকেন্ডে ৭.৫ কিমি বেগে প্রদক্ষিণ করছি। আমার কাঁধে তিরঙ্গা আমাকে মনে করিয়ে দিচ্ছে, আমি আপনাদের সকলের প্রতিনিধিত্ব করছি। এই যাত্রা শুধু ISS-এ নয়, এটি ভারতের হিউম্যান স্পেস প্রোগ্রামেরও সূচনা। আসুন, সবাই মিলে গড়ে তুলি সেই ভবিষ্যৎ! জয় হিন্দ! জয় ভারত!"
মহাকাশে কেন নিয়ে যাওয়া হল মেথি ও মুগ?
শুভাংশু শুক্লা মেথি ও মুগ সহ ছয় প্রজাতির ফসলের বীজ নিয়ে গেছেন মহাকাশে। লক্ষ্য, মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব এই বীজগুলির জেনেটিক গঠনে কোনও পরিবর্তন ঘটায় কি না, তা বিশ্লেষণ করা। এই গবেষণার মাধ্যমে জানা যাবে মহাকাশে কৃষিকাজ আদৌ সম্ভব কিনা এবং ভবিষ্যতের দীর্ঘমেয়াদি মহাকাশ অভিযানে খাদ্য নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করা যাবে। এই প্রকল্পের সঙ্গেই যুক্ত রয়েছে ভারতের বহু গবেষণা সংস্থা এবং এটি NASA ও ISRO-র যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত হচ্ছে। পাশাপাশি 'মাসপেশিতে' মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব নিয়েও গবেষণায় অংশ নেবেন তিনি।
এই গবেষণায় দেখা হবে মহাকাশে দীর্ঘ সময় থাকলে শরীরের মাসপেশির উপর কী প্রভাব পড়ে। যেমনটা দেখা গিয়েছিল মহাকাশচারী সুনীতা উইলিয়ামসের ক্ষেত্রেও, যিনি প্রায় ৯.৫ মাস মহাকাশে থাকার পর পেশির দুর্বলতা অনুভব করেন। ভারতীয় Institute of Stem Cell Science and Regenerative Medicine এই গবেষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতে এমন চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করতে চায় যা মহাকাশচারী বা বয়স্ক মানুষদের উপকারে আসবে।
ছেলের এই সাফল্যে শুভাংশুর মা আশা শুক্লা বলেন, “আমরা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না... আমরা কোনও ভয় পাচ্ছি না... আমরা গর্বিত, খুব খুশি।” বাবা শম্ভু দয়াল শুক্লাও বলেন, “এটি শুধু লখনউ নয়, সমগ্র দেশের গর্ব।”
স্ত্রীর উদ্দেশ্যে আবেগঘন বার্তা
মহাকাশে পা রাখার আগে স্ত্রী কামনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে শুভাংশু ইনস্টাগ্রামে লেখেন, “এই মিশন সম্ভব হত না যদি তুমি না থাকতে।” বিদায় মুহূর্তের একটি হৃদয়স্পর্শী ছবিও শেয়ার করেন তিনি।
আজ আইএসএস-এ পৌঁছবেন শুভাংশু শুক্লা
NASA জানিয়েছে, আজ ২৬ জুন ভারতীয় সময় বিকেল ৪:৩০ নাগাদ ড্রাগন মহাকাশযানটি আইএসএস-এর ‘হারমনি মডিউল’-এ সংযুক্ত হবে। শুভাংশু এই অভিযানে পাইলটের দায়িত্বে রয়েছেন এবং ডকিং-এর সময় মহাকাশযানের কক্ষপথ, গতি ও গঠন পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব তার কাঁধে। এই ১৪ দিনের মিশনে Axiom-4 এর চার সদস্য প্রায় ৬০টি ভিন্ন গবেষণা করবেন। শুভাংশু শুক্লার দায়িত্বে রয়েছে তার মধ্যে সাতটি। NASA এবং ISRO যৌথভাবে এই গবেষণাগুলি তদারকি করছে।
১৯৮৪ সালের রাকেশ শর্মার পর, শুভাংশুই প্রথম ভারতীয় যিনি ব্যক্তিগত সংস্থার অংশীদারিত্বে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পৌঁছাতে চলেছেন। এই ঐতিহাসিক অভিযানে ভারতবাসীর গর্ব এবং আবেগ একসঙ্গে মিশে গেছে।
মহাকাশে ‘দিন’ মাত্র কয়েক মিনিটের!
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন প্রতি ৯০ মিনিটে একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। যার মানে, শুভাংশু শুক্লা এবং তার সঙ্গীরা এক দিনে প্রায় ১৬ বার সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত দেখবেন! এই কারণে, মহাকাশে দিন ও রাতের যে ধারণা আমাদের পৃথিবীতে আছে, সেটা সেখানে সম্পূর্ণ ভিন্ন।