দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান! লঞ্চ হল iPhone 13 সিরিজ। লঞ্চ হওয়ার খবরে উত্তাল টেক দুনিয়া। কথামতই গতকাল ১৪ সেপ্টেম্বর, ভারতীয় সময় রাত ১০টা ৩০মিনিটে শুরু হয়েছিল কুপার্টিনোর টেক জায়ান্ট অ্যাপেলের ভার্চুয়াল ইভেন্ট ‘ক্যালিফোর্নিয়া স্ট্রিমিং’। এই ইভেন্টকেই পাখির চোখ করে রেখেছিল লক্ষ লক্ষ iPhone ইউজার।
প্রত্যাশা মতই ইভেন্টে লঞ্চ করা হল iPhone 13 সিরিজের চারটি মডেল। গতবছর iPhone12 সিরিজ লঞ্চেও চারটি মডেল সামনে এনেছিল টেকজায়েন্ট Apple। iPhone 13, iPhone 13 Mini, iPhone 13 Pro, এবং iPhone 13 Pro Max এই চারটি মডেল ভার্চুয়াল এই ইভেন্টের মাধ্যমে সামনে আনা হল। ডিজাইনের দিক থেকেই এই ফোনগুলি আগের সিরিজের ফোনের কাছাকাছিই রয়েছে। তবে পরিবর্তন হয়েছে ফোনের ব্যাটারি, ক্যামেরা, সিনেম্যাটিক ভিডিয়ো রেকর্ডিং মোড এবং ডিসপ্লের নচ ডিজাইন। iPhone 13 সিরিজের চারটি মডেলেই রয়েছে অ্যাপেলের নতুন A15 বায়োনিক চিপ। নতুন এই চারটি মডেল পরিচালিত হবে IOS 15-এর সাহায্যে।
iPhone 13 এবং 13 Mini এই দুটি মডেলেই থাকছে তিনটি স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট। iPhone 13 Mini ফোনের 128GB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ৬৯,৯০০ টাকা। 256GB স্টোরেজ কনফিগারেশনের দাম ৭৯,৯০০ টাকা। আর টপ ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ 512GB স্টোরেজের মডেলের দাম ৯৯,৯০০ টাকা।
iPhone 13 মডেলের 128GB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ৭৯,৯০০ টাকা। 256GB স্টোরেজ কনফিগারেশনের দাম ৮৯,৯০০ টাকা এবং টপ ভ্যারিয়েন্ট অর্থাৎ 512GB স্টোরেজের মডেলের দাম ৯৯,৯০০ টাকা।
অন্যদিকে, iPhone 13 Pro, এবং iPhone 13 Pro Max এই দুটি মডেলেই রয়েছে 1TB পর্যন্ত স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট। iPhone 13 Pro 128GB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ১,১৯,৯০০ টাকা। এবং 256GB স্টোরেজ কনফিগারেশনের দাম ১,২৯,৯০০ টাকা। iPhone 13 Pro ফোনের 512GB স্টোরেজের মডেলের দাম ১,৪৯,৯০০ টাকা। এবং 1TB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট আপনি পেয়ে যাবেন ১,৬৯,৯০০ টাকায়।
অপরদিকে iPhone 13 Pro Max মডেলের 128GB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্টের দাম ১,২৯,৯০০ টাকা। 256GB স্টোরেজ কনফিগারেশনের দাম ১,৩৯,৯০০ টাকা। 512GB স্টোরেজের মডেলের দাম ১,৫৯,৯০০ টাকা। এবং 1TB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট আপনি পেয়ে যাবেন ১,৭৯,৯০০ টাকায়। iPhone 13 Pro Max, 1TB স্টোরেজ ভ্যারিয়েন্ট এই মুহূর্তে ব্র্যান্ডের সবথেকে দামী মডেল।
iPhone 13 Mini তে রয়েছে 5.4-ইঞ্চি স্ক্রিন। Pro মডেলগুলিতে থাকছে 6.1 ইঞ্চি স্ক্রিন। এবং Pro Max মডেলের ডিসপ্লে সাইজ 6.7 ইঞ্চি। iPhone 13 এবং iPhone 13 Mini মডেলের ক্যামেরার ডিজাইনে বেশ পরিবর্তন আনা হয়েছে। Pro মডেলর জন্য একটি নতুন "সিয়েরা ব্লু কালার অপশন" রয়েছে। iPhone 13 Pro এবং 13 Pro Max মডেলে আগের মতোই স্টেইনলেস স্টিল ব্যান্ড রাখা হয়েছে।
বেস মডেলে থাকছে উজ্জ্বল ডিসপ্লে ফিচার। স্ক্রিনটিতে একটি নতুন Super Retina XDR ডিসপ্লে ব্যবহার করা হয়েছে। যা ২৮ শতাংশ উজ্জ্বল। এটি ডলবি ভিশন এবং HDR10 সাপোর্টেড। iPhone 13 সিরিজের চারটি মডেলের ডিসপ্লেতেই থাকছে একটি ছোট নচ। প্রথমবারের মতো, অ্যাপল তাদের ডিসপ্লেতে 120Hz রিফ্রেশ রেটের জন্য "ProMotion" টেকনোলজি নিয়ে এসেছে।
তবে iPhone 13 এবং iPhone 13 Mini মডেলে থাকবে 60Hz ডিসপ্লে। চারটি মডেলেই থাকছে ধুলো এবং জল প্রতিরোধের জন্য একটি IP68 রেটিং রয়েছে। নতুন মডেলগুলিতে থাকছে 5G সাপোর্ট।
ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা সেটআপ সহ বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে iPhone 13 সিরিজ। জুম লেন্স, ওয়াইড লেন্স এবং আল্ট্রা-ওয়াইড অ্যাঙ্গেল সহ দারুন ফটোগ্রাফির অভিজ্ঞতা পাওয়া যাবে নতুন সিরিজের মডেলগুলিতে। Apple iPhone 13 এর ক্যামেরায় বড়সড় সংশোধন ঘটেছে। মিনি ও রেগুলার ভার্সন উভয়ের জন্যই লো লাইট পারফর্ম্যান্স রয়েছে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল ক্যামেরায় সিনেম্যাটিক মোড রয়েছে, যা সাবজেক্ট নড়াচড়া করলেও সেটিকে ফোকাসে রাখবে। ফোকাস সাবজেক্টে থাকবে, অন্যদিকে, বাকি ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার হয়ে যায়। এটি ভিডিও-র জন্য পোর্ট্রেড মোড। অ্যাপেল জানিয়েছে, এতে ব্যবহারকারীদের এমন কনটেন্ট তৈরির সুবিধা দেবে যাতে সিনেমাটিক অনুভূতি দেবে। তা ডলবি ভিশন এইচডিআরে শ্যুট হয়, যা এক স্পেশ্যাল কাস্টম সেন্সরের মাধ্যমে কাজ করতে সক্ষম। ডলবি ভিশনে সিনেমাটিক মোডের শ্যুটিং হয়। এটি 4K 60 FPS-এ ভিডিও ধরতে পারে।
iPhone 13 সিরিজ সেরা ক্যামেরা ফিচারঃ
3x অপটিক্যাল ক্যামেরা সহ 77mm টেলিফোটো লেন্স।
আল্ট্রা-ওয়াইড ক্যামেরাঃ কম আলোতে 92 শতাংশ বুস্ট, f/1.8 অ্যাপারচার, অটো-ফোকাস, 6-এলিমেন্ট লেন্স।
ওয়াইড ক্যামেরাঃ f/1.5 অ্যাপারচার, কম আলোতে 2.2x পর্যন্ত ফটোক্যাপচারের সুবিধা।
Phone 13 Pro এবং iPhone 13 Pro Max মডেলে থাকছে নতুন ম্যাক্রো ফটোগ্রাফি ফিচার। তিনটি লেন্সেই থাকছে উন্নত নাইট মোড ফিচার।
Apple Watch Series 7:
এদিনের এই ইভেন্টেই প্রত্যাশা মতই লঞ্চ হয়েছে Apple Watch Series 7, কোন সন্দেহ নেই যে অ্যাপল ওয়াচ আজ বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় স্মার্টওয়াচ। Apple Watch Series 7 দেখতে অনেকটা আগের 6 সিরিজের মতই।
তবে ডিসপ্লেতে একটি বড় আপগ্রেড আনা হয়েছে। 20 শতাংশ বেশি স্ক্রিন সাইজ থাকছে Apple Watch Series 7-এ। Apple Watch Series 7, 41 মিমি এবং 45 মিমি সাইজে বাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এই সিরিজের ডিসপ্লেতে কোন ক্র্যাক পরবে না বলে সংস্থা জানিয়েছে। Apple Watch Series 7(GPS) এর দাম ২৯,৩০০ টাকার কাছাকাছি। অন্যদিকে Apple Watch Series 7(cellular)এর প্রারম্ভিক দাম ৩৬,৭০০ টাকার কাছাকাছি।
নতুন এন্ট্রি-লেভেল আইপ্যাড, নতুনভাবে ডিজাইন করা আইপ্যাড মিনি(6th Gen) এই ইভেন্টে সামনে আনা হয়েছে। আইপ্যাডটিতে থাকছে A13 প্রসেসর, 12MP ফ্রন্ট-ফেসিং ক্যামেরা, 64GB স্টোরেজের প্রারম্ভিক মুল্য ৩০,৯০০ টাকা।
নতুন আইপ্যাড মিনিও লঞ্চ হয়েছে এই ইভেন্টের হাত ধরেই। এতে 12MP রিয়ার ক্যামেরা এবং স্টেরিও স্পিকার রয়েছে। এছাড়াও এই আইপ্যাডে থাকছে 5G ওয়্যারলেস কানেকশন সাপোর্ট। এই মডেলে থাকছে একটি ছোট বেজেল এবং এই মডেলে কোন হোম বোতাম নেই, পাওয়ার বোতামের ভিতরে টাচ আইডি লাগানো আছে। এটি A15 বায়োনিক চিপসেট দ্বারা চালিত। এন্ট্রি-লেভেল আইপ্যাডের প্রারম্ভিক মুল্য ৪৬,৯০০ টাকা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন