প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক Facebook, WhatsApp এবং Instagram। সোমবার রাতে আচমকাই স্তব্ধ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলি। সমস্যার সম্মুখীন হন ভারত সহ গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর পরিষেবা শুরু আগে ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতিও দেন সংস্থার CEO Mark Zuckerberg।
তিনি পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পর কিছু সময় আগে একটি ফেসবুক পোস্টের মাধ্যমে ক্ষমা চেয়ে নেন তিনি। Facebook গতকাল রাত্রের বিভ্রাটের জন্য ‘কনফিগারেশনে ত্রূটিপুর্ণ পরিবর্তন'কে দায়ী করা হয়েছে। যার ফলে বিপাকে পড়েছিলেন ভারত-সহ বিশ্বের কোটি কোটি ইউজার। ত্রূটিপুর্ণ কনফিগারেশন পরিবর্তনের মাশুল গুনতে হয়, প্রায় সাড়ে তিন কোটি ইউজারদের।
যদিও সংস্থার তরফে এখনও পর্যন্ত বেশ কিছু প্রশ্নের সদুত্তর মেলেনি, এই কনফিগারেশনের পরিবর্তন কে বা কারা করেছিল? কেন করা হয়েছিল অথবা তা কি বিশেষ উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল কিনা? এটি পরিকল্পনা করা হয়েছিল কিনা? যদিও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন ফেসবুক কর্মী সংবাদ সংস্থা রয়টার্স্ কে জানান, ইন্টারনেট ট্রাফিক সিস্টেমের রুটের অভ্যন্তরীণ ভুলের কারণে এই বিভ্রাট ঘটেছে। সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, গতকালের ৬ ঘন্টার বিভ্রাটের কারণ একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল বা পরিকল্পনা মাফিক ভুলত্রুটি, দুই’ই হতে পারে। নাশকতার বিষয়কে একেবারেই উড়িয়ে দিতে নারাজ, সাইবার নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা।
যদিও ফেসবুকের তরফে একটি ব্লগ পোস্টে জানানো হয়েছে, মুলত কনফিগারেশন সেটিংসের ত্রূটির কারণেই এই মারাত্মক বিপর্যয় ঘটেছে। যার ফলে প্রায় ৬ ঘন্টা বন্ধ হয়ে যায় Facebook, WhatsApp এবং Instagram পরিষেবা। এখনও পর্যন্ত গতকালের বিভ্রাট ছিল ফেসবুকের এযাবৎকালীন বড় বিভ্রাট, তার জন্য ড্যামেজ কন্ট্রোলে নামতে হয়, সংস্থার CEO Mark Zuckerberg-কে।
মাত্র সাড়ে ছয় ঘণ্টায় প্রায় ৭ বিলিয়ন ডলার অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় প্রায় ৫,২২,০৭, ৭৫,০০,০০০ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন Mark Zuckerberg। স্ট্যান্ডার্ড মিডিয়া ইনডেক্সের অনুমান অনুসারে Google-এর পরে Facebook বিশ্বের অন্যতম সেরা অনলাইন বিজনেস প্লাটফর্ম। গতকালের বিভ্রাটের জেরে প্রতি ঘণ্টায় 545,000 U.S ডলারের ক্ষতির সম্মুখীন হয় ফেসবুক।
ফেসবুকের টেকনিক্যাল আধিকারিক, মাইক শ্রোফার টুইট করে বলেন, ‘প্রতিটি ছোট এবং বড় ব্যবসা, পরিবার এবং ব্যক্তি যারা আমাদের উপর নির্ভর করে তাদের জন্য আমি দুঃখিত’। হার্ভার্ডের বার্কম্যান ক্লেইন সেন্টার ফর ইন্টারনেট অ্যান্ড সোসাইটির পরিচালক জোনাথন জিট্রেন টুইট করে লিখেছেন, ‘ এ যেন গাড়ির চাবি বন্ধ করে দিয়েছে ফেসবুক,’। নেটফ্লিক্স তার নতুন হিট শো "স্কুইড গেম"-এর একটি মিম এই প্রসঙ্গে শেয়ার করেছে, যেটির শিরোনাম ছিল "যখন ইনস্টাগ্রাম এবং ফেসবুক ডাউন হয়", তখন কেবল টুইটার তার চরিত্রকে ধরে রেখেছে’। বিভ্রাট শুরু হওয়ার পরপরই, ফেসবুক স্বীকার করে যে ব্যবহারকারীদের অ্যাপস অ্যাক্সেস করতে সমস্যা হচ্ছে কিন্তু সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়নি বা কতজন ব্যবহারকারী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তা জানায়নি।
রবিবারই সংস্থার বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন এক কর্মী। ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই আবার ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ রইল (Facebook whatsapp global Outage) ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপ ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল সাইটগুলো। জোড়া ধাক্কার জেরে ক্ষতির মুখোমুখি হলেন মার্ক জুকারবার্গ (Mark Zuckerberg)। তথ্য বলছে, এই ঘটনার ধাক্কায় ৭ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে জুকারবার্গের। আর এর জেরেই এক ধাক্কায় বিশ্বের ধনী ব্যক্তিদের তালিকা জুকারবার্গের নাম বেশ কয়েক ধাপ নেমে গিয়েছে। ব্লুমবার্গ বিলিয়নার ইনডেক্সের তালিকা অনুযায়ী, জুকারবার্গ এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে রয়েছেন পাঁচ নম্বরে।
কী ভাবে এই পতন? তথ্য বলছে, প্রথম ধাক্কাটা আসে সেপ্টেম্বর মাসের ১৩ তারিখ। ওই দিন ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে (Wall Street Journal on Facebook) একগুচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সেখানে দেখানো হয়, কী ভাবে ইনস্টাগ্রামে প্রচারিত অপতথ্য কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে। পাশাপাশি তুলে দেওয়া হয় কী ভাবে দিল্লির দাঙ্গা-সহ বহু ঘটনায় অপদার্থের চাষ হয়েছে এই ফেসবুকেই। ক্ষতটা শুকানোর আগে সোমবারই ফেসবুকের বিরুদ্ধে মুখ খুললেন সংস্থার এক কর্মী।
প্রত্যুত্তরে ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অফ গ্লোবাল অ্যাফেয়ার নিক ক্লেগ বলেন, "আমরা বেশ কয়েকটি দুরূহ সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এর মধ্যে শুধুই পণ্যগত সমস্যা নয়, এমনকি রাজনৈতিক মেরুকরণের সমস্যাও রয়েছে।"
প্রায় ৬ ঘণ্টারও বেশি সময় বন্ধ থাকার পর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক Facebook, WhatsApp এবং Instagram। সোমবার রাতে আচমকাই স্তব্ধ জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া মাধ্যমগুলি। সমস্যার সম্মুখীন হন ভারত সহ গোটা বিশ্বের কোটি কোটি মানুষ। এত দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর পরিষেবা শুরু আগে ফেসবুকে ক্ষমা চেয়ে একটি বিবৃতিও দেন সংস্থার CEO Mark Zuckerberg।
তিনি লিখেছেন, "বিশ্বজুড়ে যে সব ব্যবসায়ীদের ব্যবসা আমাদের উপর নির্ভরশীল, তাঁদের কাছে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা আমাদের অ্যাপ ও তার পরিষেবা যত দ্রুত সম্ভব আবারও স্বাভাবিক করতে আমরা প্রচণ্ড চেষ্টা করেছি। এখন খুশির সঙ্গে আমরা জানাচ্ছি যে সব কিছু এখন স্বাভাবিক আমরা এখন অনলাইন। এমন কঠিন সময়ে আমাদের সঙ্গে থাকার জন্য ধন্যবাদ।' এর সঙ্গেই তিনি লেখেন, 'ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ এবং মেসেঞ্জার এখন অনলাইন। আজকের এই সমস্যার জন্য আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আমি জানি আপনি গোটা দুনিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য আমাদের পরিষেবার উপর কতটা ভরসা করেন।'
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন