সামাজিকমাধ্যম ফেসবুক বিভ্রাটে একদিনে সাত কোটি গ্রাহক পেয়েছে মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রাম। সোমবার (৪ অক্টোবর) প্রায় ছয় ঘণ্টা বন্ধ ছিল হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামের মতো সকল ফেসবুকের মেসেজিং অ্যাপগুলি। আর তাতেই এক দিনে সর্বোচ্চ নতুন গ্রাহকের রেকর্ড গড়েছে টেলিগ্রাম। বিরাট ক্ষতির মুখে মার্ক জুকারবার্গ।
মঙ্গলবার (৬ অক্টোবর) টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল ডুরোভ এমন তথ্য দিয়েছেন। রয়টার্সের খবর অনুযায়ী, ত্রুটিপূর্ণ কনফিগারেশন পরিবর্তনে হোয়াটসঅ্যাপ, ইনস্টাগ্রাম ও ফেসবুক মেসেঞ্জারে ছয় ঘণ্টা ধরে ঢুকতে পারেনি অন্তত সাড়ে ৩০০ কোটি ইউজার।
টেলিগ্রাম চ্যানেলে ডুরোভ লিখেছেন, ‘বিশালতার দিক থেকে দৈনিক গ্রাহক বাড়ার সংখ্যা সাধারণ নিয়মকে ছাড়িয়ে গেছে। একদিনে অন্যান্য প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা সাত কোটি শরণার্থীকে স্বাগত জানিয়েছি’।
তিনি বলেন, একই সময়ে বহু গ্রাহক সাইন-আপ করায় যুক্তরাষ্ট্রের কিছু ব্যবহারকারী টেলিগ্রামের ধীর গতি পেয়েছেন। কিন্তু অধিকাংশ মানুষের জন্য সেবার গতি স্বাভাবিকই ছিল। স্বভাবতই এই খবরে খুশির হাওয়া টেলিগ্রাম সংস্থায়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যান্টিট্রাস্ট প্রধান মারগ্রেথ ভেস্টাগের বলেন, ফেসবুকের এই বিভ্রাট বলে দিচ্ছে, কেবল কয়েকটি বড় বড় সামাজিকমাধ্যমের ওপর নির্ভর করলেই চলবে না। বাজারে আরও অনেক প্রতিদ্বন্দ্বী দরকার।
টেলিগ্রামের নতুন ব্যবহারকারীদের উদ্দেশে ডুরোভ বলেন, বৃহত্তম স্বাধীন প্ল্যাটফর্ম টেলিগ্রামে স্বাগত। অন্যরা যেখানে ব্যর্থ হয়, সেখানে আমরা ব্যর্থ হব না।
দ্য ভার্জের খবরে বলা হয়েছে, হোয়াটসঅ্যাপের ২০০ কোটি ব্যবহারকারীর ওপর টেলিগ্রামের নজর আছে অনেক দিন ধরেই। বছর খানেক আগে, ফেসবুক মালিকানাধীন মেসেজিং অ্যাপ থেকে ব্যবহারকারীদের নিজেদের প্ল্যাটফর্মে টানার প্রক্রিয়া সহজ করতে হোয়াটসঅ্যাপের চ্যাট হিস্ট্রি টেলিগ্রামে নিয়ে আসার ফিচার চালু করেছিল প্রতিষ্ঠানটি।
যতক্ষণ ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রাম বন্ধ ছিল, ততক্ষণ বিশ্বব্যাপী মানুষ টেলিগ্রাম ব্যবহার করতে শুরু করেন। টেলিগ্রাম অ্যাপটি তৈরি হওয়ার পর অনেকে টেলিগ্রামকে বেছে নিয়েছিল ব্যক্তিগত যোগাযোগ, তথ্য এবং সংবাদ আদান প্রদানের মাধ্যম হিসাবে।
কোটি কোটি মানুষ উপকৃত হয়েছিলেন টেলিগ্রাম ব্যবহার করে। টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল দূলভ মঙ্গলবার জানান, ফেসবুক বন্ধ হওয়ার পর এই অ্যাপটি ব্যবহার করে উপকৃত হয়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। টেলিগ্রাম আজও সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ইরানের একটি জনপ্রিয় ম্যাসেঞ্জার সাইট যা ব্যক্তিগত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে আজও ব্যবহৃত হয়।
ফেসবুক বন্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রায় ৭০ মিলিয়ন মানুষ টেলিগ্রাম ব্যবহার করেছেন বলে জানা গেছে। টেলিগ্রামের প্রতিষ্ঠাতা পাভেল নতুন ব্যবহারকারীদের এই নতুন ম্যাসেজিং প্লাটফর্মে স্বাগত জানিয়েছেন।
টেলিগ্রাম এমন একটি অ্যাপ যা বিনামূল্যে ডাউনলোড করা যায়। আমেরিকার মনিটরিং ফার্ম সেন্সর টাওয়ারের মতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫তম স্থানে থাকা টেলিগ্রাম বর্তমানে পঞ্চম স্থানে চলে এসেছে। পাভেল জানান, ২০১৩ সালে এই নেটওয়ার্কটি তৈরি হলেও বিভিন্ন সময় এটিকে বন্ধ করার চেষ্টা হয়েছিল। প্রতিষ্ঠার জন্মলগ্নে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন সক্রিয় ব্যবহারকারী ছিল টেলিগ্রামের।
পরবর্তীকালে হোয়াটসঅ্যাপ আসার পর এর ব্যবহার অনেক কমে যায়। এরপর টেলিগ্রামের একাধিক পরিবর্তন আনা হয়। সিগনাল বা হোয়াটসঅ্যাপের মতো এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন সুবিধা না থাকলেও ভিডিও কল এবং লাইভ স্ট্রিমিং সহজ করার ফিচার এনে গ্রাহক আকৃষ্ট করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে টেলিগ্রাম কর্তৃপক্ষ।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসে টেলিগ্রামের নিয়মিত ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৫০ কোটি ছুঁয়েছে। এই হিসাব বিবেচনায় নিলে ফেসবুক বিভ্রাটের দৌলতে এক দিনেই টেলিগ্রাম ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে মাসিক ব্যবহারকারী সংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন