কোভিড থেকে সেরে উঠেছেন? পরবর্তী ৬ মাস সময়কালে আপনার শরীরে দেখা দিতে পারে একাধিক সমস্যা। সম্প্রতি এক গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশি সংখ্যক রোগীরা কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তী ছয়মাস নানান সমস্যায় ভোগেন। যেগুলি লং কোভিড এফেক্ট নামেও বর্নণা করা যায়। এই সকল উপসর্গের মধ্যে রয়েছে ক্লান্তি, মাথাঘোরা, বুক ধড়পড় করা, হাফিয়ে যাওয়া অথবা বুকে ব্যথার মতো একধিক উপসর্গ। সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমনই এক তথ্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পেন স্টেট কলেজ অফ মেডিসিনের গবেষকরা তাদের গবেষণায় তুলে ধরেছেন কোভিড পরবর্তী ৬ মাস সময়কালে কোভিড আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে নানান ধরনের উপসর্গ দেখা দিতে পারে। তাঁদের প্রতি বাড়তি যত্নের কথাও তুলে ধরা হয়েছে গবেষণায়। এব্যাপারে সরকারি এবং বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে। কোভিড পরবর্তী তাদের অসুস্থতার সময় আক্রান্ত অনেক রোগী ক্লান্তি, শ্বাস নিতে অসুবিধা, বুকে ব্যথা, গাঁটে ব্যথা এবং স্বাদ বা গন্ধ হারানোর মতো উপসর্গ অনুভব করে। এই সকল উপসর্গকে খুব হালকা ভাবে না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এই গবেষণায়।
JAMA নেটওয়ার্ক ওপেন জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় মোট ৫৭ টি রিপোর্ট পর্যালোচনা করা হয়েছে। যার মধ্যে ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে মার্চ ২০২১ পর্যন্ত কোভিড -১৯ রোগে আক্রান্ত ২৫০,৩৫১ টিকাহীন প্রাপ্তবয়স্ক এবং শিশুদের তথ্যও অন্তর্ভুক্ত ছিল। গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড -১৯ রোগে আক্রান্তদের মধ্যে ৭৯ শতাংশ রোগীদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়েছিল। তাদের মধ্যে সকলেই উন্নত দেশের বাসিন্দা। এবং বেশিরভাগ ছিলেন মধ্যবয়সী এবং রোগীদের মধ্যে প্রায় ৫৬ শতাংশই পুরুষ।
গবেষকরা তাদের এই গবেষণায়এক মাসের (স্বল্পমেয়াদী), দুই থেকে পাঁচ মাস (মধ্যবর্তী-মেয়াদী) এবং ছয় বা তার বেশি মাস (দীর্ঘমেয়াদী) তিনটি ব্যবধানে কোভিড-পরবর্তী রোগীদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন। অধিকাংশ কোভিড রোগী কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর প্রায় ছয়মাস নানান ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে প্রতি ২ জন কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে ১ জন পোস্ট কভিড বা লং কোভিড সংক্রান্ত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। এবং সেই মেয়াদকাল একমাস থেকে ছয়মাস সময়কাল পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের মধ্যে প্রায় এক চতুর্থাংশের বেশি রোগীর শ্বাস- নেওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। অর্ধেকের বেশি রোগী ওজন হ্রাস, ক্লান্তি, জ্বর বা ব্যথার সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন। প্রতি চারজনের মধ্যে একজন রোগী স্মৃতি সংক্রান্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। অনেকের ক্ষেত্রে ওজন হ্রাসের ঘটনাও ঘটেছে। বুকে ব্যথা এবং বুক ধড়ফড়ানি সকলের ক্ষেত্রেই প্রায় দেখা গেছে। অন্যান্য উপসর্গের মধ্যে ছিল পেট ব্যথা, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, গাঁটে ব্যাথা ইত্যাদি।
পেন স্টেট থেকে গবেষণার সহ-প্রধান গবেষক ভারনন চিনচিলি দাবি করেছেন, ‘এই ফলাফলগুলি নিশ্চিত করে যে লং কোভিডে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কোভিডে আক্রান্তের প্রায় অর্ধেক এবং একমাস থেকে ছয়মাস কাল ব্যাপী স্থায়ী হতে পারে এই লং কোভিড এফেক্ট। তিনি আরও বলেছেন, যদিও পূর্ববর্তী গবেষণায় রোগীদের মধ্যে দীর্ঘ কোভিডের উপসর্গের বিস্তার পরীক্ষা করা হয়েছে, এই গবেষণায় উচ্চ, মধ্যম এবং নিম্ন আয়ের দেশের মানুষ সহ একটি বৃহত্তর জনসংখ্যা পরীক্ষা করা হয়েছে এবং আরও অনেক উপসর্গ পরীক্ষা করা হয়েছে,"
গবেষকরা উল্লেখ করেছেন কোভিডে আক্রান্ত রোগীরা অনেক সময় লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিকে সেভাবে গুরুত্ব দেন না, যা অচিরেই বিপদ ডেকে আনতে পারে। SARS-CoV-2 ভাইরাল মুলত অনেক ক্ষেত্রেই স্নায়ুতন্ত্রের ওপর আঘাত হানে তার ফলেই রোগীদের স্বাদ বা গন্ধের সমস্যা, স্মৃতিশক্তি হ্রাস এবং মনোযোগ হ্রাস ইত্যাদি নানবিধ সমস্যার সৃষ্টি করে শরীরে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন