করোনার সংক্রমণ থেকে সুরক্ষা পেতে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে টিকাকে। বর্তমানে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া অতিসংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিরুদ্ধে টিকা কতটা সুরক্ষা দিতে পারে, সেটা নিয়েও চলছে আলোচনা। এর মধ্যেই মার্কিন ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান মডার্না জানিয়েছে, তাদের উদ্ভাবিত টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ৬ মাস পরও করোনা থেকে ৯৩ শতাংশ সুরক্ষা দিতে সক্ষম। মডার্নার পক্ষে থেকে এই তথ্য জানানো হয়েছে। এর আগে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে মডার্না জানিয়েছিল, তাদের উদ্ভাবিত করোনার টিকা ৯৪ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারে। তবে গবেষণায় যে তথ্য উঠে এসেছে তা মডার্নার দাবিকেই মান্যতা দিয়েছে। কী বলছে গবেষণা? গবেষণায় বলা হয়েছে, সব বয়সের মানুষের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলেছে, বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষ, যাঁদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা অনেক বেশি তাঁদের শরীরেরও এই ভ্যাকসিনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব নজরে এসেছে।
মডার্নার কোভিড ১৯ ভ্যাকসিন মানব শরীরে এক দীর্ঘস্থায়ী রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করছে। এবং মানব শরীরে এই ভ্যাকসিনের কার্যকারিতার মেয়াদ কমপক্ষে ছয় মাস। করোনা সম্পর্কিত একটি গবেষণার রিপোর্ট রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরীতে বুস্টার শটের প্রয়োজনীয়তার তত্ত্বকে মান্যতা দিল না। জার্নাল সায়েন্সে প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে যে, ছয় মাসের এই সময়টি গুরুত্বপূর্ণ কারণ এই সময়কালের মধ্যেই কোভিডের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি মানবদেহে সৃষ্টি হয়। মডার্না তার কোভিড ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের শরীরে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সন্ধান পেয়েছে। এই ট্রায়ালের রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা জানিয়েছেন ভ্যাকসিন নেওয়া লোকেদের শরীরে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সময়কাল আরও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, সব বয়সের মানুষের মধ্যেই রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডির সন্ধান মিলেছে, বিশেষ করে সত্তরোর্ধ্ব বয়স্ক মানুষ, যাদের কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি তাদের শরীরেরও এই ভ্যাকসিনের উল্লেখযোগ্য প্রভাব নজরে এসেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের লা জোলা ইনস্টিটিউট ফর ইমিউনোলজির (এলজেআই) অধ্যাপক শেন ক্রোটি বলেন, “মডার্নার কোভিড ভ্যাকসিন মানবদেহে করোনার বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরী করতে বিশেষ কার্যকরী এবং এই ভ্যাকসিনের মেয়াদকাল ৬ মাসেরও বেশি হতে পারে”। গবেষকরা তাদের এই গবেষণায় কোভিড থেকে সেরে ওঠা রোগীদের সঙ্গে যারা প্রথম ধাপের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের সময় মডার্না ভ্যাকসিনের ২৫ মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছিলেন তাদের একটি তুলনা গবেষণায় তুলে ধরেছেন।
গবেষণাপত্রের প্রথম লেখক জোসে ম্যাটিউস ট্রিভিনো বলেন, “আমরা দেখতে চেয়েছিলাম যে ডোজের এক চতুর্থাংশ রোগের বিরুদ্ধে কোন ইমিউনিটি তৈরি করতে সক্ষম কিনা,"। ট্রিভিনো বলেন, "আমরা মডার্না ফেজ ওয়ান ট্রায়ালে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে নমুনা গ্রহণের সুযোগ পেয়েছিলাম যারা ২৮ দিনের ব্যবধানে ভ্যাকসিনের দুটি ২৫-মাইক্রোগ্রাম ডোজ পেয়েছিলেন।" অতিমারি পরিস্থিতিতে মার্কিন প্রশাসনের তরফে (এফডিএ) জরুরি ভিত্তিক মডার্নার টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। যদিও গবেষকরা তখন জানতেন না যে এই ছোট ডোজটি স্ট্যান্ডার্ড ডোজের মতো কার্যকর কিনা, তবে এই গবেষণায় দেখা গেছে যে ছোট ডোজটি সেল এবং রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টিবডি তৈরিতে কার্যকর ভুমিকা নিয়েছে।
মডার্নার এই ডোজ যা আমাদের শরীরে গেলে কোষগুলিকে শেখায় কী ভাবে প্রোটিন তৈরি করতে হবে। প্রোটিনের একাংশ তৈরি হলেও শরীরের প্রতিরোধ শক্তি কাজ করা শুরু করে। ২৮ দিনের ব্যবধানে দুটি টিকা নিতে হবে যে কোনও ব্যক্তিকে। এখনও পর্যন্ত যা প্রমাণ মিলেছে, তাতে আলফা কিংবা বিটা প্রজাতির ক্ষেত্রে মডার্নার কার্যকারিতা কোনও রকম হেরফের হয়নি। তবে ডেল্টা সহ আরও নতুন প্রজাতির উপরও কার্যকর এই প্রতিষেধক। এলজেআই গবেষণা সহকারী অধ্যাপক ড্যানিয়েলা উইস্কোপ বলেন এই গবেষণায় তারা সন্তুষ্ট, করোনা ভাইরাস ঠেকাতে এই টিকার কার্যকারিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিক্রিয়া তুলনীয়। এটি উচ্চতর নয় এবং আবার খুব কমও নয়”। গবেষকরা দেখেছেন যে ক্রস- রিঅ্যাক্টিভ"টি-সেলের’ মানুষদের ওপর এই ভ্যাকসিনের প্রভাব তুলনামুলকভাবে বেশি। গবেষকদের মতে "যদি আপনার এই ইমিউনিটি রিঅ্যাক্টিভিটি থাকে, তাহলে ভ্যাকসিনের দুটি ডোজ আপনার ইমিউনিটি সিস্টেম ভাইরাসের বিরুদ্ধে দ্রুত কাজ করতে পারে”।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন