বন্ধ করুন, এবং চালু করুন আপনার স্মার্টফোন। সহজেই পাবেন হ্যাকিং থেকে রক্ষা। একটিমাত্র সহজ পদক্ষেপ যা আপনার ফোনকে হ্যাকারদের থেকে বাঁচাতে পারে। এই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে NSA-এর তরফে। সম্প্রতি ইজরায়েলি পেগাগাস স্পাইওয়ারকে হাতিয়ার করে ফোন হ্যাকিং-এর যে মারাত্মক অভিযোগ উঠেছে তার প্রেক্ষিতে আপনার স্মার্টফোনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ এবং সুরক্ষিত রাখতে সপ্তাহে একবার করে অন্তত আপনার ফোনটি রিবুট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে NSA-এর তরফে।
এর মাধ্যমে সহজেই সুরক্ষিত থাকবে স্মার্টফোন হ্যাকারদের থেকে। এই তথ্য সামনে এনেছে মার্কিন সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ অ্যাঙ্গাস কিং যিনি সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির একজন সদস্য। তিনি তাঁর সেলফোনকে কীভাবে হ্যাকারদের থেকে নিরাপদ রাখবেন সে বিষয়ে তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আধিকারিকদের থেকে এই বছর কিছু তথ্য পান। যা তাঁর সেলফোনকে সম্পূর্ণ নিরাপদ রাখতে বিশেষ সাহায্য করেছে। মুলত স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত রাখার জন্য তিনি প্রধান দুটি উপায়ের কথা বলেছেন।
১- আপনি আপনার ফোনটি অফ করুন।
২- আপনার ফোন অফ করার পর পুনরায় সেটি অন করুন।
মাত্র এই দুটি সহজ উপায় মেনে চলতে পারলে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকবে আপনার স্মার্টফোন।
ব্যাপক ডিজিটাল নিরাপত্তাহীনতার সময়ে, দেখা যাচ্ছে যে সবচেয়ে প্রাচীন এবং সহজ কম্পিউটার ফিক্স পদ্ধতি সহজেই হ্যাকারদের তথ্য চুরি করা বন্ধ করতে পারে। এই পদ্ধতির ব্যবহার করে যে উন্নত হ্যাকিং সিস্টেম থেকে স্মার্টফোনগুলি সহজেই রক্ষা পাবে তেমনটা না বলা গেলেও এটি নিশ্চিত ভাবেই বলা যাবে যে এই সামান্য প্রসেস ব্যবহার করলে সহজেই আপনার ফোন থেকে তথ্য এবং ডেটা চুরি করা প্রায় সম্ভব নয়। তার জন্য হ্যাকারদের অনেক বেশি উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
নিল জিরিং, ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সির বা এনএসএ (NSA) ডিজিটাল নিরাপত্তা বিভাগের টেকনিক্যাল ডিরেক্টর। তিনি বলেন, হ্যাকারদের জন্য ডেটা চুরি করাকে আরও ব্যয়বহুল করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এনএসএ (NSA) হ্যাকিং প্রতিরোধের জন্য প্রতি সপ্তাহে একটি সেলফোন রিস্টার্ট বা রিবুট করার পরামর্শ দিয়েছিল। এই সুপারিশটি মোবাইল ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য একটি গাইডের অংশ হিসাবে গত বছর সংস্থাটি তার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছিল।
আরও পড়ুন স্মার্টফোনে Pegasus-এর হানা! জানেন কী সর্বনাশ করতে পারে আপনার?
সেলফোন সবসময় সকলের ব্যবহার করা প্রাথমিক ডিভাইসগুলির মধ্যে একটি। খুব অল্প সংখ্যক মানুষ আছে যারা তাদের সেলফোনটি মাঝেমধ্যে অফ রাখেন। প্রচুর পরিমানে ডেটা, ব্যক্তিগত তথ্য, কন্টাক্ট, মেসেজ থাকে সেলফোনে। তাই হ্যাকারদের প্রথম পছন্দ হিসাবে বারবারই সেলফোন উঠে এসেছে। সেলফোনের মাধ্যমে কোনও ব্যক্তির বর্তমান লোকেশন সহজেই নির্ধারণ করা যেতে পারে, এছাড়াও হ্যাকাররা খুব সহজেই সেলফোনের ক্যামেরা, মাইক্রোফোন চালু করতে পারে খুব সহজেই।
প্রতিবছর ঠিক কতজন মানুষের ফোন হ্যাক হয় তার সঠিক পরিসংখ্যান নিশ্চিত ভাবে বলা সম্ভব নয়। কিন্তু বিশ্বব্যাপী গণমাধ্যম সংস্থার একটি সাম্প্রতিক যৌথ তদন্তে দেখা গেছে, যে এক হাজারেরও বেশি সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং রাজনীতিকরা ইজরায়েলি হ্যাকিং সংস্থা NSO-এর পেগাসাস স্পাইওয়ারের স্বীকার হয়েছেন। এটি ফ্রান্স, ভারত, হাঙ্গেরি এবং অন্যান্য দেশে এক রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছে। মুলত হোয়াটসঅ্যাপ বা মেসেজের মাধ্যমে পাঠানো কোন নির্দিষ্ট লিঙ্কের মাধ্যমে এই স্পাইওয়ার ফোনে প্রবেশ করানো হয়ে থাকে। আর তা একবার ফোনে প্রবেশ হলে সেলফোনটি কার্যত হ্যাকারদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়। এবং সহজেই ডেটা, ব্যক্তিগত তথ্য, কন্টাক্ট, মেসেজ চুরি হতে পারে।
কিন্তু জিরিং বলেন, অ্যাপল এবং গুগলের মতো ফোন নির্মাতাদের এই ধরনের কাজগুলি বন্ধ করার জন্য শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে এবং তা আরও উন্নত করার কাজ চলছে, ফলে হ্যাকিং করা বিষয়টি খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। জিরিং-এর মতে, সেলফোন যদি সপ্তাহে একবার রিস্টার্ট করা যায় তাহলে ফোন হ্যাকিং বিষয়টি হ্যাকারদের কাছে খুবই কঠিন হয়ে পরে। যেহেতু খুব স্বল্প সংখ্যক মানুষ তাঁদের ফোন রিস্টার্ট করে থাকেন, তাই হ্যাকাররা খুব সহজেই সেই সব ফোন থেকে ডেটা, মেসেজ, কন্টাক্ট লিস্ট-সহ যাবতীয় বিষয়গুলি হ্যাক করে নিতে পারেন। হ্যাকিং সরঞ্জামগুলির জন্য বর্তমানে একটি বড় বাজার বিশ্বে রয়েছে যা ফোনে প্রবেশ করতে পারে খুব সহজেই। জেরোডিয়াম এবং ক্রাউডফেন্সের মতো কিছু কোম্পানি প্রকাশ্যে এমন হ্যাকের জন্য লক্ষ লক্ষ ডলার অফার করে যার মাধ্যমে কোন নির্দিষ্ট ফোন হ্যাকিং করতে বিশেষ কোন লিঙ্কের বা মেসেজের প্রয়োজন পড়বে না।
কোম্পানিগুলি সরকার এবং আইন সংস্থার কাছে হ্যাকিং পরিষেবা বিক্রি করে সরাসরি। যা সাপ্রতিক কালে বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা যায়। হ্যাকিং সংস্থাগুলির মধ্যে সবচেয়ে সুপরিচিত হল ইজরায়েল ভিত্তিক এনএসও গ্রুপ। তাদের হ্যাকিং প্রোগ্রামিং বিশ্বব্যাপী নেতা, সাংবাদিক এবং আইনজীবীদের ফোনে প্রবেশের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বলে বিশ্ব-মিডিয়ার যৌথ তদন্তে সামনে এসেছে।
ফেসবুক তার মেসেজিং প্লাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপে প্রায় ১৪০০ ব্যবহারকারীকে টার্গেট করার জন্য এনএসও গ্রুপের বিরুদ্ধে আদালতে এর আগে মামলাও দায়ের করে। এনএসও গ্রুপ তাদের এক বিবৃতিতে জানায় যে মুলত সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য তারা “যাচাইকৃত সরকারী সংস্থার" কাছে তারা তাদের এই প্রোগ্রামিং বিক্রি করে।
মোবাইল ডিজিটাল সিকিউরিটির জন্য NSA-এর তরফ থেকী যে গাইডলাইন প্রকাজেকরা হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, মাঝে মধ্যে শুধুমাত্র “রিস্টার্ট”-অপশন হ্যাকারদের থেকে স্মার্টফোনকে সম্পূর্ণ ভাবেই নিরাপদ এবং সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করবে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন