সালটা ১৯৮৪ সালের ৩ এপ্রিল, রাশিয়ার মহাকাশযানে চেপে মহাকাশের উদ্দেশে রওনা দিয়ে নজির গড়েছিলেন ভারতীয় মহাকাশচারী রাকেশ শর্মা। তিনিই ছিলেন প্রথম ভারতীয় মহাকাশচারী। তার পর পেরিয়ে গিয়েছে তিনদশকের বেশি সময়। ফের ইতিহাস গড়ার পথে এগোচ্ছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। সম্পুর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি মহাকাশযানে চেপে ভারতীয় মহাকাশচারীদের মহাকাশে পাঠানোর কথা ঘোষণা করেছে ইসরো। 'মিশন ‘গগনযান'-এর প্রস্তুতি চলছে জোর কদমে। শুধু মহাকাশে পাঠানোই নয়, ভারতীয় মহাকাশচারী কল্পনা চাওলার পরিণতির কথা মাথায় রেখে ভারতীয় মহাকাশচারীদের কী ভাবে নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে হবে, সেই ব্যবস্থাতেও কোন রকমের ঘাটতি রাখতে চাইছে না ইসরো।
এই মিশনের উদ্দেশ্য হল মানব মিশনের পরিকল্পনা করার জন্য উন্নত প্রযুক্তির সক্ষমতা পরীক্ষা করা, মহাকাশে চিকিৎসা, বায়োস্পেটিয়াল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং পরীক্ষা চালানো, মহাকাশে যানবাহন উৎক্ষেপণ করা এবং অবতরণ করা, একটি স্পেস স্টেশন তৈরি করা এবং সহযোগিতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করা। উড্ডয়নের সময় বা উড্ডয়নের পর রকেটে কোনো প্রযুক্তিগত ত্রুটি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে রকেটটি বিস্ফোরিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ রকেটে কয়েক হাজার টন অত্যন্ত দাহ্য জ্বালানী থাকে। এমন সময়ে মহাকাশযানে নভোচারীদের নিরাপত্তার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।
এ পর্যন্ত ভারতসহ বিভিন্ন দেশের নভোচারীরা মহাকাশে ভ্রমণ করেছেন। রাশিয়া, আমেরিকা এবং চিন একমাত্র তিনটি দেশ যারা তাদের নিজস্ব রকেটের সাহায্যে মহাকাশে মহাকাশচারী পাঠিয়েছে। এবার চতুর্থ দেশ হিসেবে এই সারিতে বসবে ভারত। গগনযান মিশনে মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর পাশাপাশি ভবিষ্যতে একটি মহাকাশ স্টেশন স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। গগনযান মিশনে মোট দুটি মনুষ্যবিহীন ফ্লাইট থাকবে, যার পরে ভারতীয় ব্যক্তিরা মহাকাশে ভ্রমণের সুযোগ পাবেন।আগামী বছর শুরু হবে গগনযান মিশন। এর আগে যাবতিয় প্রস্তুতি সেরে রাখতে চলেছে ইসরো। এর মধ্যে, প্রথম যানবাহন পরীক্ষামূলক মিশন হবে TV-D1, দ্বিতীয়টি TV-D2 মিশন এবং তৃতীয় পরীক্ষা হবে LVM3-G1। এটি একটি মানবহীন মিশন।
চাঁদে ভারতের সফল অবতরণের পর এখন গগনযান মিশনের প্রস্তুতি শুরু করেছে ইসরো। ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো) জানিয়েছে, শীঘ্রই গগনযান মিশনের জন্য মনুষ্যবিহীন ফ্লাইট পরীক্ষা শুরু হতে চলেছে। প্রায় ৯০০ কোটি টাকা ব্যয়ের এই হাইভোল্টেজ মিশন আগামী বছর চালু হবে। এর আগে ইসরো তার এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়েছে গগনযান মিশনের জন্য মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান পরীক্ষা শুরুর কাজ প্রায় শেষের পথ। ইসরো এই মিশনের জন্য চারজন মহাকাশচারীকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এটিই হবে ভারতের প্রথম মানববাহী মহাকাশ অভিযান। এই মিশনের আওতায় তিনজন নভোশ্চারীকে ৪০০ কিলোমিটার কক্ষপথে পাঠানো হবে এবং নিরাপদে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা হবে। বর্তমানে গগনযান মিশনের চূড়ান্ত পর্যায়ে পরীক্ষা চলছে। মহাকাশচারীদের নিরাপত্তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
মহাকাশে কোনও দুর্ঘটনার হাত থেকে ভারতীয় মহাকাশচারীদের বাঁচাতে ক্রু এস্কেপ সিস্টেম (সিইএস)-এর উপর ভরসা রাখছে ইসরো। মহাকাশে কোনও জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হলে দেশে তৈরি এই উন্নত প্রযুক্তিই দেশের মহাকাশযাত্রীদের প্রাণ রক্ষা করবে বলে দাবি ইসরোর।‘ক্রু এস্কেপ সিস্টেম’ অনেক বেশি উন্নত এবং স্বয়ংক্রিয়। এই সিস্টেমে রকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকা একটি প্রকোষ্ঠের মধ্যে থাকবেন মহাকাশচারীরা। কম্পিউটারে কোনও বিপদ চিহ্নিত করা গেলে সঙ্গে সঙ্গে প্যারাস্যুটের সাহায্যে মহাকাশচারীদের নিয়ে নিরাপদে অবতরণ করবে সমুদ্রে।
এই প্রযুক্তি যাতে যে কোনও উচ্চতায় নিখুঁত ভাবে কাজ করতে পারে সেই দিকেও নজর রাখা হয়েছে। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ISRO) একটি ক্রু মডিউল সিস্টেমের পরীক্ষা করবে, যা নিশ্চিত করবে যে ক্রু মডিউলটি যেন মহাকাশ মিশনের পরে জলে উল্টে না যায়। মিশন ডিরেক্টর এস শিবকুমার বলেছেন, মিশন পরিকল্পনা এবং মিশন ডিজাইন এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
শিবকুমার বলেছেন যে টিভি ডি 1 মিশনে ক্রু মডিউল এবং ক্রু এস্কেপ সিস্টেমের প্রথম পরীক্ষাটি সফল বলে বিবেচিত যদিও "তিনটি উপাদান - পরীক্ষার যান, ক্রু এস্কেপ সিস্টেম এবং ক্রু মডিউল নতুন। তিনি বলেন, পরের বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যেই মিশনের কন্ট্রোল সিস্টেম সহ ক্রু মডিউল ক্রু সিট সিস্টেম এবং সাসপেনশন সিস্টেম, আপরাইটিং সিস্টেম ইত্যাদি পরীক্ষা করা হবে। “আমরা কিছু মৌলিক তথ্য তৈরি করার চেষ্টা করেছি। সমস্ত প্যারাসুট এবং ক্রু এস্কেপ সিস্টেম গগনযানের জন্য নতুনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে,”এমনটাই জানিয়েছে ডি শিবকুমার । সেই সঙ্গে পরের বছর নির্ধারিত দ্বিতীয় টেস্ট মিশনের (TV-D2) সময় ক্রু আসন, নিয়ন্ত্রণ এবং ভাসমান ব্যবস্থা সংক্রান্ত খুঁটিনাটি নানান বিষয়ে পরীক্ষা চালাবে ইসরো।