Advertisment

দেবতার ঘরে

এছাড়া তপোবনের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা এখানকার হনুমানদের কাণ্ডকারখানা। সপরিবারে, সপ্রেমে, সবান্ধবে চারপাশে বিরাজিত তারা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Deoghar Travelogue

ট্রেন যখন জসিডি পৌঁছলো, বৈশাখের সূর্য তখন মাথার উপর

আমাদের পরিবারের একটা বড় অংশ দীর্ঘদিন গিরিডিবাসী। শৈশবে মাঝে মাঝেই যাওয়া হতো সেখানে। গিরিডি তখনও বিহারের মধ্যে । বিহার-ঝাড়খণ্ড ভাগাভাগি হয়নি। গিরিডি তখন বাঙালির স্বাস্থ্য উদ্ধারের প্রিয় জায়গা। সেখানকার জল-হাওয়ার  গুণ এমন যে, কঠিন অসুখ সেরে যাওয়ার পর ডাক্তাররাও বিশ্রামের জন্য ওদিকটায় যাওয়ারই পরামর্শ দিতেন। গিরিডির সঙ্গেই শোনা যেত মধুপুর ও দেওঘরের নাম। স্বাস্থ্যকর জল-হাওয়া ছাড়াও এই অঞ্চলের প্রতি বাঙালির আকর্ষণের অন্য কারণ ছিল এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রচুর প্রবাসী বাঙালির বসবাস তো ছিলই। বহুল পরিমানে পর্যটকও আসতেন। উঁচুনিচু টিলা, নদী, জঙ্গল ---সব মিলিয়ে নয়নাভিরাম ছিল অঞ্চলটি।

Advertisment

আরও পড়ুন, ভুলবো না ওখরে

গিরিডি গেলেই খুব শুনতাম দেওঘরের নাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, দারুণ জল-হাওয়া ছাড়াও এখানে রয়েছে বাবা বিশ্বনাথের মন্দির। বহুবার শুনেও সেই সময় যাওয়া হয়ে ওঠেনি। আমাকে আমার চরম শত্রুও ধার্মিক বদনাম দিতে পারবে না। ভক্তিমার্গে আমার বিচরণ প্রায় নেই বললেই চলে। তবে, দেওঘরের মন্দিরের মহিমা অন্যত্র। দেবতার ঘর, সেই থেকেই নাম দেওঘর।  এর একটা প্রাচীন ইতিহাস আছে। উল্লেখ আছে পুরাণেও। আর এর বাইরে প্রকৃতির আকর্ষণ তো আছেই।

Deoghar Travelogue প্রকৃতির আকর্ষণ তো আছেই

গিরিডি বহুবার গেলেও দেওঘর যাওয়া হয়নি। চাকরিজীবনে ছুটির ওপর নির্ভর করে যাবতীয় ভ্রমণ পরিকল্পনা করতে হয়।  খবরের কাগজে ফিচার সেকশনে কাজ করলে ও পাতার দায়িত্বে থাকলে একটা সুবিধা পাওয়া যায়। পাতাটা আগাম তৈরি করে দিয়ে সেই হিসেবে ছুটি নেওয়া যায়।  সেবার পয়লা বৈশাখের ছুটিটা এমন ভাবেই পড়েছিল । একটা দিন ছুটি নিলেই কাছেপিঠে কোথাও ঘুরে আসা যাবে।

এর-তার সঙ্গে আলোচনা করছি। যাদের পায়ের তলায় সর্ষে, তাদের এমন আলোচনার লোক জুটেও যায়। সেভাবেই আমার এক পরিচিত ভাইয়ের সঙ্গে কথায় কথায় উঠে এলো দেওঘরের নাম। আমার হারানো শৈশব যেন ডাক দিলো। তাহলে এবার দেওঘরেই যাওয়া যাক। ট্রেনের টিকিট কেটে এক সকালে উঠে বসলাম হাওড়া-নিউ দিল্লী দুরন্ত এক্সপ্রেসে। এ ট্রেন জসিডি পর্যন্ত যাবে। সেখান থেকে গাড়ি বা অটো রিকশ করে দেওঘর। থাকার বুকিং হয়েছে যোগানন্দ সৎসঙ্গ আশ্রমের গেস্ট হাউসে । ব্যাবস্থা সেই ভাইটিই করে দিয়েছে।

ট্রেন যখন জসিডি পৌঁছলো, বৈশাখের সূর্য তখন মাথার উপর। স্টেশন থেকে বেরিয়ে একটি দোকানে জিজ্ঞেস করতেই অটো স্ট্যান্ড দেখিয়ে দিলেন দোকানের মালিক। বললেন, আশ্রম পর্যন্ত যাওয়ার জন্য গাড়ির কোনও দরকার নেই, অটোতে দিব্যি পৌঁছে যাবেন।  উপযাচক হয়ে একটি অটোও ঠিক করে দিলেন। বহু বছর রাস্তাঘাটে একা চলাফেরা করে দেখেছি, বেশির ভাগ মানুষই সহমর্মী।

অটো কিছুটা পথ চললো বাজার অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে। এখন এই পুরো এলাকাটাই ঝাড়খন্ড। বিহার-ঝাড়খণ্ডের জীবন সংস্কৃতিতে তেমন কিছু ফারাক নেই। না থাকাই স্বাভাবিক। সমাজজীবন গড়ে ওঠার পিছনে ভৌগোলিক গুরুত্ব অসীম। বেড়া দিয়ে মানুষকে বিচ্ছিন্ন করা যায়।  কিন্তু প্রকৃতি তো  বিভাজনের পথে হাঁটে না। আর এই কারণেই দেখলাম এই এলাকার মানুষের জীবনযাপনে বড় কোনও পরিবর্তন ঘটেনি । এভাবেই দুপাশের দোকানপাট, মানুষজনের ব্যস্ততা, বার্তা বিনিময় দেখতে দেখতে আরও একটু এগোলাম।

আরও পড়ুন, খোশবাগ, বর্ণময় মুর্শিদাবাদের এক বেদনামুখর গাথাকাব্য

বাজার ছাড়াতেই দুদিকের দৃশ্যপট বদলে গেল।

শান্ত, নির্জন প্রকৃতি। গাছপালা আর আগের মতো নেই। ছড়িয়ে ছিটিয়ে কিছু এদিকওদিক। খালবিল আপাতত প্রায় শুকনো। দূরে কয়েকটি টিলা। ওপরে খোলা আকাশ। পিচের রাস্তা চলে গেছে তার নিচ দিয়ে।  পথের মাঝে মাঝে বাঁক, অটো ঘুরছে সেই মতোই।  যেতে যেতে হিন্দি-বাংলা মিশিয়ে কথা বলছে ড্রাইভার ভাই। রাস্তা আগের থেকে অনেক ভালো হয়েছে বলে খুশি সে। তবে যে পরিমান গাছ কাটা পড়েছে তাতে, তার সিকিভাগও লাগানো হয়নি, এটা একটা বড় আক্ষেপ। এছাড়া জঙ্গল কেটে সাফ করার যে চোরাকারবার  চক্র, তা এখানেও সক্রিয়। সাধারণ মানুষকে সারা দেশেই ক্ষমতায় থাকা লোকজন গুরুত্ব দেয় না বললেই চলে। পাঁচ বছরে একবার ভোট দেওয়া ছাড়া তারা প্রায় গুরুত্বহীন। অথচ অধিকাংশ সাধারণ মানুষই কিন্তু সমাজ সচেতন। বিশেষত প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ প্রকৃতিকে এখনও যথেষ্ট মূল্য দেয়।

deoghar travelogue জঙ্গল কেটে সাফ করার যে চোরাকারবার  চক্র, তা এখানেও সক্রিয়

আশ্রম গেস্টহাউসে যখন পৌছলাম, তখন একদিকে প্রবল খিদে, অন্যদিকে গরমে প্রাণ ওষ্ঠাগত। দেওঘরের বৈশাখ ছড়াতে শুরু করেছে তাপপ্রবাহ। ভাগ্য ভালো থাকার ঘরটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এমনিতে বাহুল্যবর্জিত। তবে পরিচ্ছন্ন। দ্রুত স্নান করে আশ্রমের ভিতরকার ডাইনিং হলে গেলাম। নিরামিষ খেতে হবে আগেই জানতাম। এও শুনেছিলাম আমার ওই দেওঘরের খবরদাতা ভাইটির কাছে যে এখানকার প্রতিটি রান্না এতই উপাদেয় যে আমি নাকি আমিষ না খাওয়ার দুঃখ ভুলে যাবে। কথাটি সর্বৈব সত্য। আজও মুখে লেগে আছে দেওঘরের সেই আশ্রমের রান্নার স্বাদ।

শুধু খাবারের গুণমান নয়, সমস্ত প্রক্রিয়াটিই অত্যন্ত সুন্দর। একটি পৃথক অঞ্চলে রান্না ও খাওয়ার ব্যাবস্থা। ঢুকতে হবে জুতো খুলে। প্রত্যেকটি কর্মী অত্যন্ত পরিচ্ছন্ন। পরিচ্ছন্নতা সর্বত্র। বাসনকোসন থেকে শাকসবজি ও মসলাপাতি। কুপন  কিনে নিতে হবে প্রথমেই। তারপর খেতে বসা। মাটিতে আসন পেতে এবং টেবিল-চেয়ার-- দুরকম বন্দোবস্তই আছে। শালপাতার প্লেট আর মাটির গ্লাস। সব মিলিয়ে দারুণ এক পেটপুজোর স্মৃতি রয়ে গেছে আজও।

একটু বিশ্রাম। তারপর রোদ পড়তেই পড়তেই বেরিয়ে পড়লাম। রিকশায় যাওয়া যায় এত কাছে নওলাখা মন্দির। কলকাতার বিখ্যাত পাথুরিয়াঘাটা রাজবাড়ির রানী চারুশীলা দেবী প্রতিষ্ঠিত এই মন্দির নির্মাণে খরচ হয়েছিল নয় লক্ষ টাকা। সেকালের পক্ষে অঙ্কটা কত ভাবুন একবার ! যাই হোক ওই অঙ্ক থেকেই নাম নওলাখা মন্দির। রানী রাধাকৃষ্ণের ভক্ত ছিলেন। ১৯৪০-এ প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরে অধিষ্ঠিত রাধাকৃষ্ণের যুগল মূর্তি বড় সুন্দর। দেখে আমার মতো অধার্মিকও মুগ্ধ। কথিত আছে স্বামী ও ছেলেকে চিরকালের মতো হারিয়ে মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত চারুশীলা দেবী কোনও একজন তপস্বীর সংস্পর্শে আসেন। তাঁরই পরামর্শে এই মন্দির স্থাপনা ও শান্তিলাভ। মন্দিরটি আজও অতি যত্নে রক্ষনাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বহু দূর থেকে ভক্ত ও পর্যটকদের আগমন হয়। স্থাপত্যকলার সুন্দর নিদর্শন মেলে, ডিজাইনে বেলুর মঠের আদল। মন্দির ঘুরে দেখতে দেখতেই চোখ গেল আকাশে। দাঁড়িয়েছিলাম মন্দিরের অলিন্দে। সে এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য। একদিকে পশ্চিমে অস্ত যাচ্ছে দিনমনি। উল্টো মানে পূর্ব আকাশে চাঁদের উঁকি। প্রকৃতির এটাই কাণ্ড, যে কোনও মুহূর্তে ম্যাজিক দেখাতে পারে।

deoghar travelogue পূর্ব আকাশে চাঁদের উঁকি

রাতের খাওয়া গেস্টহাউস সংলগ্ন ডাইনিং রুমে। এখানে শুধু গেস্টহাউসের অতিথিদের খাওয়ার ব্যাবস্থা। প্রাতরাশও এখানেই। আগের দিন নওলাখা মন্দির থেকে ফিরে আশ্রমের মন্দিরে বসেছিলাম। সান্ধ্য আরতির সেই মুহূর্তটুকুও বড় মনোরম এক আবেশে ভরিয়ে রেখেছিল। পরের দিন ঘুম ভাঙলো মন্দিরের প্রভাতী পুজোর ঘন্টাধ্বনিতে । বাইরে আসতেই ফুলের শোভা। কাল তেমন দেখার সুযোগ হয়নি। হেঁটে হেঁটে পুরোটা দেখতে অনেকটা সময় লাগলো। এক বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ধর্ম যখন কর্মের পথ ধরে চলে, তখন সত্যি সেটা কুর্ণিশযোগ্য হয়। ফুলের বাগান, শাকসবজির চাষ, বিদ্যালয় , লাইব্রেরি সব মিলিয়ে  প্রচুর কাজ। সুনিয়ন্ত্রিত ও সুসংগঠিত।আর সবেতেই উপকৃত হচ্ছেন অগণিত সাধারণ মানুষ। ভালো লাগার রেশ নিয়েই প্রাতরাশ খেলাম।খেয়েই বেরিয়ে পড়লাম তপোবন ও ত্রিকূট পাহাড়ের উদ্দেশ্যে। বেশি বেলায় ঘোরাঘুরি অসম্ভব, সূর্যের এমন তাপ, বলেছিলেন গেস্টহাউসের এক কর্মী।

অটো ড্রাইভার ছেলেটি বেশ ভালো। আশ্রমের অতিথিদের সঙ্গে এদিকওদিক গিয়ে বাংলাটাও দিব্যি বলতে শিখে গেছে। ঝকঝকে পিচ বাঁধানো পথ দিয়ে প্রথমে তপোবন। রামসীতার পরম ভক্ত হনুমান। তাঁর সেই ভক্তির দৃষ্টান্তস্বরূপ পাহাড়ের উপরে এই মন্দির। অটো ড্রাইভার আমায় পরিচয় করালো একজন পাণ্ডার সঙ্গে। ধর্মস্থানের কারবারীদের সম্পর্কে আমার ধারণাই বদলে দিয়েছিলেন এই মানুষটি। তপোবনের নিয়ম হলো উঠতে হবে সিঁড়ি দিয়ে, নামা পাহাড়ের পাথুরে পথে। সে এক অসাধ্যসাধন! মানে আমার মতো পৃথুলা, আনফিট মহিলাদের জন্য তো অবশ্যই। সেই আমি প্রচুর ( কয়েকশ হবে/ গুণে উঠতে পারিনি) সিঁড়ি বেয়ে, গোপন কুঠুরির পথ দিয়ে ( সে পথও একজন মোটা মানুষের পক্ষে পার করা অসম্ভব ), আরও কী কী কাণ্ড করে মূল জায়গায় পৌঁছে আবার পাথুরে পথে নামা। ওঠার সময় নিজের বৃহৎ শরীরটিকে সংকুচিত করে দুটি পাথরের মধ্য দিয়ে গলিপথ পার করা ছিল সর্বকালের সেরা চ্যালেঞ্জ। আর নামার সময় ধরার কিছু নেই, পড়লেই কয়েক হাজার ফুট নিচে এবং গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে যাওয়া। এর কোনওটাই হলো না ওই হাড়পাঁজর বের করা পান্ডা ভদ্রলোকের জন্য। পরম মমতায় হাত ধরে সমতলে নামতে সাহায্য করেছিলেন তিনি আমায়। আমার অসাধ্যসাধনের পুরো কৃতিত্ব আমি তাঁকেই দেব। এছাড়া তপোবনের দুর্দান্ত অভিজ্ঞতা এখানকার হনুমানদের কাণ্ডকারখানা। সপরিবারে, সপ্রেমে, সবান্ধবে চারপাশে বিরাজিত তারা। ফলফলাদির কিছুটা তাদের না দিলে বেশ রেগে যান তেনারা, সেটাও খেয়াল রাখার বিষয়।

তপোবন থেকে ত্রিকূট পাহাড় যাব। তার আগে পথের কথা কিছুটা বলি। সময়টা পলাশ আর কৃষ্ণচূড়ার। পথের ধারে বড় বড় গাছে তাদের শোভা দেখে দাঁড়িয়ে পড়তেই হলো। আমাদের শহরের গাছগুলির কি যে দৈন্যদশা। এখানে দাঁড়িয়ে সেটা একটু বিশেষ ভাবে উপলব্ধ হয়। রোদের আভায় ঝলমলে হয়ে উঠেছে রক্তরাঙা ফুলের দল। থোকাভরা ফুল মৃদু বাতাসে দুলছে। প্রকৃতির এই রূপসী অহংকার দেখতে দেখতে পথে ঘুরে বেড়ানো দেওঘরের অন্যতম না ভোলা ছবি, যা চিরদিন থাকবে মনের ক্যানভাসে।

একদিনের পক্ষে একটা তপোবনই যথেষ্ট। ত্রিকূট পর্বতের পাদদেশে পর্যন্ত গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। যাওয়ার পথটি খুব সুন্দর। প্রাচীন বেশ কিছু গাছ রয়েছে পথের দুধারে। পর্বতের আশেপাশে প্রচুর গাছ। আর এখানেও হনুমান বাবাজিরা বিপুলসংখ্যক। ব্যস্ত হয়ে এদিকওদিক বিচরণ করছে তারা। ত্রিকূট পর্বতে ওঠা আর হলো না। ট্রেকিং-এ সক্ষম না হলে এটা সম্ভব না। অতএব বিশ্রাম, আখের রস পান ও হনুদের মজাদার কান্ড দেখে ফিরে এলাম আশ্রমে।

deoghar temple পুজোটাও দিলাম, রীতিমতো যুদ্ধ করে

পরের দিন বিশ্বনাথ ধাম দর্শন। আশ্রম থেকে খুব দূরে নয়। রিকশা ঠিক করে দিল আশ্রম থেকেই। রাতভোরে  রিকশাচালক ভাই চলে এলো। আমি স্বভাব পাপীতাপি, দেখি কি অভিজ্ঞতা হয় এমন এক মনোভাব নিয়ে পৌঁছে গেলাম মন্দিরে। তারপর প্রচুর নিয়মকানুন। পান্ডাকে বলা ছিল আশ্রম থেকেই। তিনি দেখা মাত্রই আমাকে নিয়ে পড়লেন। ' পুজো কি দিতেই হবে?' আমার এহেন প্রশ্নে তিনি প্রায় অজ্ঞান হয়ে যান আর কি! দেখলাম বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। তারপর যা সব হলো , সেটা সব ধর্মস্থানে সবার সঙ্গেই হয়। হ্যাঁ, পুজোটাও দিলাম, রীতিমতো যুদ্ধ করে। পান্ডা বললেন, আমার নাকি প্রচুর পুণ্য হলো। আমি নিশ্চিন্ত এই ভেবে যে এই ফিক্সড ডিপোজিটে কিছুদিন তো অন্তত চলবে! এই সবই গতানুগতিক কথা।

আমার যেটা অপরূপ অনুভূতি, সেটা মন্দিরের চাতালে বসে সূর্যোদয় দেখা। একটু একটু করে প্রভাত হচ্ছে। বসে আছি শতাব্দী প্রাচীন এক মন্দিরে। কত মানুষ এসেছে, গেছে। কত রাজা-মহারাজা, জমিদার, দেশবিদেশের পর্যটক আর অগণিত সাধারণ মানুষ পা রেখেছে এখানে ! পুরান আর ইতিহাস মিলেমিশে একাকার এখানে।  অপূর্ব এই আবেশ নিয়েই গেস্টহাউসে ফেরা।

সন্ধ্যায় মন্দিরের ঘন্টা বাজে। প্রদীপ জ্বলে উঠছে একে একে। যেমন আকাশের তারারা ফুটছে একটি একটি করে। এক কোণে চাঁদের অপরূপ আলোর ছটা। কি অনাস্বাদিত এক অনুভূতি ! প্রকৃতির মাঝেই যে ঈশ্বরের ঘর, আরও একবার অনুভব করি। কাল ভোরে ট্রেন। ফিরবো কাজের শহরে। সঙ্গে অফুরান স্মৃতির মণিমুক্তো। পাঠকের সুবিধার্থে জানাই, দেওঘরে প্রচুর ভালো হোটেল আছে। আছে বিভিন্ন সংস্থার হলিডে হোম। এছাড়া রামকৃষ্ণ মিশন ও ভারত সেবাশ্রমের গেস্টহাউসেও থাকতে পারেন। হলিডে হোম ও গেস্টহাউসের ক্ষেত্রে আগাম বুকিং করে গেলে ভালো। যাওয়া-আসায় তেমন সময় লাগে না। জল-হাওয়া চমৎকার। দেবমহিমা ছেড়েই দিলাম। প্রকৃতি এখনও বড় মনোরম দেওঘরে। একবার গিয়ে দেখতেই পারেন।

travelogue
Advertisment