scorecardresearch

পায়ে হেঁটে, ইচ্ছেমত নর্মদা (অষ্টম চরণ)

পিপলগাঁও পৌঁছে গ্রামের লোকেদের দেখানো শর্টকাট রাস্তায় গিয়ে পড়লাম বিপদে। পুরো কর্দমাক্ত রাস্তা। পিছন দিকে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই।

পায়ে হেঁটে, ইচ্ছেমত নর্মদা (অষ্টম চরণ)
রূপমতী মাণ্ডু (ফোটো- লেখক)

(চন্দন বিশ্বাস, মফস্বলের চন্দন বিশ্বাস, সাইক্লিস্ট হিসেবে পরিচিত চন্দন বিশ্বাস তার মুকুটে আরেকটা পালক যোগ করে ফেলেছেন। চন্দন পায়ে হেঁটে নর্মদার তটভূমি অতিক্রম কর ফেলেছেন। তাঁর সাফল্যের কথা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাতেই শুধু নয়, প্রকাশিত হয়েছে অন্যত্রও। সম্বর্ধিতও হচ্ছেন তিনি। তবে চন্দনের যাত্রাপছের বিবরণী এখনও শেষ হয়নি। অনেকটাই বাকি। সে বিবরণী থেকে পাঠক বঞ্চিত হবেন না। এখানে সে লেখা চলতে থাকবে। এবং পাঠকরা এও আশা করতে পারেন, যেহেতু যাত্রা সম্পূর্ণ হয়েছে, ফলে এবার থেকে লেখার আয়তনও বাড়বে।)

সেমালদা থেকে বেরিয়ে যাব মহেশ্বরের দিকে। প্রায় ৬৫ কিলোমিটার, দুদিনের রাস্তা। মহেশ্বর থেকে আমার যাওয়ার প্ল্যান আছে মান্ডবগড় বা বর্তমানে মান্ডু। এবং সেটা বাসে করে। মান্ডু নর্মদা নদীতীরে পড়ে না, কিন্তু নদীতট থেকে মাত্র ৯০ কিলোমিটার। তাই মধ্যপ্রদেশের এই বিখ্যাত কেল্লানগরী যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাত্ৰ দুই কিলোমিটার যাওয়ার পরেই যে গ্রামটি পড়ল তার নাম যোগপুর। সেখানেই একটা ছোট্ট বাঁধা পেলাম। গ্রামের জনগণ সব ঘিরে ধরল। কী ব্যাপার? কোথায় যাচ্ছি? আসলে এই বর্ষাকালে তো কেউ নর্মদা তীর ধরে হাটে না। যারা পরিক্রমা করতে আসেন সেই সময়ও এটা নয় তাই পদে পদে বহুবার এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। আমি উদ্দেশ্য বললাম ভালো করে বুঝিয়ে। তারা তো মহাখুশি অসময়ে আমার মত একজন পুণ্যার্থীকে (?) পেয়ে। শুরু হল খাওয়ানোর ধুম। আর খেতে পারছি না? নো প্রবলেম। খাবারদাবার প্যাক করে দেওয়া হল বেশ খানিকটা। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে মহাদেবের প্রসাদ হিসেবে গাঁজা খাওয়ার জন্য সাধাসাধি করা হল। আমিও সবিনয়ে প্রত্যাখ্যান করলাম। তারা বাকি রাস্তার সম্পর্কে বলে দিল। মহেশ্বর এখনই গিয়ে লাভ নেই। আমি যেন এখান থেকেই মাণ্ডবগড় চলে যাই। কুড়ি কিলোমিটার গেলেই বাসস্ট্যান্ড পাব। তারমানে আমায় এখন কুড়ি কিলোমিটার হাটতে হবে। সেটাও চিন্তা নেই তারাই দলবেঁধে মোটরসাইকেলে করে আমায় নিকটবর্তী বাসস্ট্যান্ড মানাওয়ার পৌঁছে দিলেন। সেইখান থেকে বিকেলের মধ্যে পৌঁছে গেলাম মান্ডু।

অহল্যাবাঈ হোলকারের দুর্গ (ফোটো- লেখক)
দুর্ঘ থেকে নর্মদা (ফোটো- লেখক)
দুর্গে তাঁতের কারখানা (ফোটো- লেখক)

আরও পড়ুন, পায়ে হেঁটে, ইচ্ছেমতো নর্মদা (ষষ্ঠ চরণ)

পাহাড়ের উপরে মান্ডু একটি ঐতিহাসিক শহর। পুরো শহরটাই আসলে একটি ফোর্ট। রাজা হোসাং শাহর রাজত্ব ছিল এইটা। সারা বিকেলবেলাটাই আশ্চর্য হয়ে ঘুরলাম। সন্ধ্যে নাগাদ কিছুই করার নেই। রাত কাটানোর ব্যাবস্থা করেছি একটা রামমন্দিরে। এক ভদ্রলোক বললেন যে আমি যদি পারি তো সানসেট পয়েন্ট ঘুরে আসি। খুব ইচ্ছা ছিল না। যে কোনো পাহাড়ী শহরেই একটা সানসেট পয়েন্ট থাকে এবং তাতে অবধারিত ভাবেই কিছু ছেলেপুলে মদ্যপান করে। আমি মদ্যপানের বিরুদ্ধে নই কিন্তু প্রকাশ্যে বেলেল্লাপনার বিরোধী। তাই ভাবছিলাম যাব কি যাব না? আর কিছু করারও নেই তাই চলেই গেলাম। গিয়ে বুঝলাম না এলে সত্যি একটা অপূর্ব দৃশ্য দেখা হত না।

হোসাং শাহের সমাধি, মাণ্ডু (ফোটো- লেখক)

দুটো দিন মাণ্ডবগড়ে থেকে যেতে ইচ্ছে করলেও ইচ্ছেটাকে দমন করলাম। আমি অন্য একটা মিশনে আছি, সেটাই প্রাধান্য হওয়া উচিৎ। সকালেও মান্ডু খানিক ঘুরে দুপুরে আবার রওনা দিলাম মহেশ্বরের উদ্দেশ্যে। মহেশ্বরও একটি ঐতিহাসিক শহর। বিখ্যাত হোলকার সাম্রাজ্যের রাজধানী এটাই। অহল্যা বাই হোলকারের দুর্গ এখানেই। কোনও আশ্রমে না থেকে আজ বেছে নিলাম একটি হোটেল। আমার অভিযানে আজকেই প্রথম হোটেলে থাকা। ঘুরে নিলাম অহল্যা বাই হোলকারের দুর্গটিও। মাহেশ্বরী শাড়ির উৎপত্তি কিন্তু এই মহেশ্বর। দুর্গের মধ্যে সেই প্রাচীন তাঁতের কারখানা এখনও বিদ্যমান। হোলকার রাজবংশ কিন্তু ভারতের স্বাধীনতার পরেও রাজত্ব করেছে। ১৯৬২ সালে এই রাজত্বের অবসান ঘটে।

হোলকার রাজপরিবার (ফোটো- লেখক)

মহেশ্বর থেকে মণ্ডলেশ্বর হয়ে ধারেশ্বরের দিকে হাঁটলাম। কোথায় থাকব কিছু ঠিক করিনি। পিপলগাঁও পৌঁছে গ্রামের লোকেদের দেখানো শর্টকাট রাস্তায় গিয়ে পড়লাম বিপদে। পুরো কর্দমাক্ত রাস্তা। পিছন দিকে যাওয়ারও কোনো উপায় নেই। প্রায় সারা শরীরে কাদা মেখে পৌছালাম ধারেশ্বর। একটাই মন্দির। কিন্তু আশেপাশের প্রায় চারপাচঁটি গ্রামের লোক মন্দিরে উপস্থিত। শ্রাবণ মাস উপলক্ষে তারা আপাতত মন্দিরেই অবস্থান করছেন। তারা সাগ্রহে আমার উপস্থিতি মেনে নিলেন এবং আমি আসাতে খুব খুশী। প্রথমেই পেট ভরে খাইয়ে দিলেন। তারপর বলীরাম কেভোট নামের এক ভদ্রলোক আমাকে আড়ালে ডেকে বললেন,- ‘এখানে এত লোকের মাঝে আপনার রাতে থাকতে অসুবিধা হবে, চলুন আপনাকে ভালো এক নির্জন আশ্রমে নিয়ে যাই। সেখানে আপনার ভালো লাগবে কারণ সেই আশ্রমের প্রধান বাবাজী বাঙালী।’

যোগপুরে গ্রামবাসীদের সঙ্গে

বাড়ির বাইরে এসে সাধারণত আমার বাঙালী বলে আলাদা কোনও প্রেম আসে না। কিন্তু তাও ‘নির্জনে থাকতে পারব’ এই লোভে পড়ে রাজী হলাম।

Stay updated with the latest news headlines and all the latest Travel news download Indian Express Bengali App.

Web Title: Narmada travelogue chandan biswas