ডিসেম্বর মানেই তল্পিতল্পা বেঁধে শীতের আমেজ গায়ে মেখে বাঙালি বেরিয়ে পড়ে তাঁর পছন্দের ডেস্টিনেশনে। সেই পছন্দের তালিকায় বরাবরই আলাদা জায়গা জুড়ে রয়েছে পড়শি দেশ নেপাল। কিন্তু এবার সেই সাধের ডেস্টিনেশন নিয়েই মাথায় হাত বাঙালির। দু’বছর আগের ডিসেম্বরেও চরম নোট ভোগান্তি পোহাতে হয়েছিল পর্যটকদের। দু’বছর পর সেই নোটবন্দির স্মৃতিই ফিরল। ভারতীয় ২০০, ৫০০ ও ২ হাজার টাকার নোটের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নেপাল সরকার। যার জেরে মাথায় হাত এ শহরের ট্যুর অপারেটরদের।
ভারতীয় নোটে নিষেধাজ্ঞার জেরে নেপালে ঘুরতে যাওয়ার আগে বিপাকে পড়েছেন এ রাজ্যের বহু পর্যটকই। এহেন সিদ্ধান্তে কার্যত হতাশ বহু ট্যুর অপারেটরাও। সেই হতাশার সুরই শোনা গেল কলকাতার অন্যতম নামী ট্যুর অপারেটর কোম্পানি ‘চলো যাই’-এর এক কর্মীর গলায়। জয়ন্ত সান্যাল নামে ওই সংস্থার কর্মী দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বললেন, ‘‘বড় সমস্যা হয়ে গেল। আমাদের সামনেই নেপাল ট্যুর রয়েছে। আগামী ২৫ ডিসেম্বর প্রায় ৫৫ জনের একটা দলকে নিয়ে আমরা নেপাল যাচ্ছি। কিন্তু নেপাল সরকারের এমন সিদ্ধান্তে আমরা এই ট্যুর নিয়ে চিন্তায় রয়েছি।’’
নেপাল ট্যুর বাতিলও করতে পারে চলো যাই। এ প্রসঙ্গে জয়ন্তবাবু বললেন, ‘‘এত একশো টাকার নোট নিয়ে তো যাওয়া সম্ভব নয়। জানি না কীভাবে পারব। পর্যটকদেরও তো অনেক সমস্যা হবে। নেপালে আমাদের এজেন্টদের সঙ্গে কথা বলছি। নেপালের দূতাবাসের সঙ্গেও কথা বলছি। দেখি কতটা সহযোগিতা পেতে পারি ওঁদের থেকে। সেরকম সহযোগিতা না পেলে ট্যুর বাতিল করে দেব। বহু পর্যটকও আমাদের ফোন করে জিজ্ঞেস করছেন ট্যুরের ব্যাপারে। ট্যুর বাতিল হলে ক্ষতি হবে।’’
আরও পড়ুন, ভারতীয় টাকায় নিষেধাজ্ঞা নেপালের
তবে নেপালে ভারতীয় নোট নিষেধাজ্ঞার জেরে তাঁদের পর্যটকদের খুব একটা সমস্যা হবে না বলেই মত এ শহরের আরেক নামী ট্যুর অপারেটর সংস্থা কুণ্ডু স্পেশালের। এপ্রিল মাসে নেপাল ট্যুরে বেরোচ্ছে ওই সংস্থা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুণ্ডু স্পেশালের এক কর্মী বললেন, ‘‘আমরা ট্যুরের আগে বলেই দিই যাতে পর্যটকরা কম মূল্যের নোট নিয়ে যান। ৫০০, ২ হাজারের নোট নিতে বারণ করি। আশা করছি আমাদের পর্যটকদের খুব একটা সমস্যা হবে না। আমরা সবরকম ব্যবস্থা করব।’’
যাঁরা নিজেরা নেপাল ঘুরতে যাবেন, নোটবন্দির জেরে তাঁরা চরম সমস্যায় পড়তে পারেন বলেই মনে করছে শহরের ওই দুই ট্যুর অপারেটর সংস্থা। তাঁদের মতে, ‘‘যাঁরা নিজেরা নেপাল যাবেন, তাঁদের হয়তো অনেক সমস্যা হতে পারে।’’
পর্যটনের মরশুমে নেপাল সরকারের এই সিদ্ধান্তে বড় ক্ষতির মুখে পড়তে হতে পারে ট্যুর অপারেটরদের। একথা মানছেন এ শহরের বহু ট্যুর অপারেটরই। সৌরভ মুখোপাধ্যায় নামের এক ট্যুর অপারেটর বললেন, ‘‘পর্যটকরা খুব সমস্যায় পড়বেন। নোট নিষেধাজ্ঞার জেরে বহু পর্যটকই নেপাল যেতে চাইবেন না। নেপালের বদলে অন্যত্র যাবেন। ফলে নেপালে পর্যটক সংখ্যা কমবে। যেসব ট্যুর অপারেটরদের নেপাল সফর রয়েছে, তাঁদের অনেক ক্ষতি হবে। তাছাড়া বিদেশি মুদ্রা বদলানোর যে জটিলতা, সেই পথে অনেকেই হাঁটতে চাইবেন না।’’
আরও পড়ুন, কলকাতার দোরগোড়ায় শীত, অ্যানাকোন্ডা না এলেও ভিড় টানছে চিড়িয়াখানা
নেপাল সরকারের হঠকারী সিদ্ধান্তে পর্যটকরা ট্যুর বাতিল করলে ক্ষতি হবে বলেই মত ট্যুর অপারেটর দীপায়ন কুমার সাহার। তিনি বললেন, ‘‘দু’বছর আগে এ দেশে নোট বাতিলের জেরে মারাত্মক সমস্যা হয়েছিল। সবার কাছে তো আর অত খুচরো থাকে না। এর জেরে অনেক পর্যটকই ট্যুর বাতিল করতে পারেন। সেক্ষেত্রে আমাদের ক্ষতি হবে।’’
আরেক ট্যুর অপারেটর বিদ্যুৎ বরণ দাসের মতে, ‘‘যেসব পর্যটক ইতিমধ্যেই ওখানে রয়েছেন, তাঁরা তো ব্যাপক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। যাঁরা যাবেন তাঁদেরও সমস্যা হবে। নেপালে ভারতীয় টাকার চাহিদা রয়েছে। ওদের মুদ্রা দিতে গেলেও ওঁরা ভারতীয় টাকা চান। সেক্ষেত্রে তো সমস্যা হবেই।’’