বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে বাইরে বেরিয়ে আকাশের দিকে তাকাতেই মাথায় হাত। আকাশের কোথাও কোনও নীল বা সাদা নেই। পুরোটাই ধূসর, কোথাও একটু বেশি গাঢ়, কোথাও হালকা। গাড়িতে বসে রওনা দিতে দিতে শুরু হয়ে গেল ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। অথচ এমনটা হওয়ার কথা ছিল না। সময়টা অক্টোবরের প্রায় শেষ। চলেছি কালিম্পং অঞ্চলের একটি পর্যটন কেন্দ্রে। সঙ্গে এক বন্ধু ও তার মেয়ে। আমাদের তিনজনের এই ইউনিটের প্রথম উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ। পরে আরও কয়েকবার হয়েছে। আমি সাধারণত পাহাড়ে একা বেড়াতেই ভালোবাসি, তবে পছন্দের সহযাত্রী পেলে মজা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আমাদের এই ইউনিটের ক্ষেত্রে এটা বারবারই প্রমাণিত হয়েছে। যাই হোক পাহাড়ের এই ছোট্ট জনপদে আমি অনেকবার এসেছি। ওদের প্রথমবার। তিনজনই খুব চনমনে। কিন্তু ওই যে, মানুষ ভাবে এক, হয় আর।
প্রথম হতাশাজনক খবরটা দিলেন ড্রাইভার ভাই। পাহাড়ে বিপুল বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক জায়গাতেই ধ্বস নেমেছে এবং রাস্তা বন্ধ। আমাদের তিনজনের মুখ একসঙ্গে আকাশের মতোই ভার হয়ে গেল। যাই হোক, বেড়াতে এসে মুড অফ করে লাভ নেই। দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলা দরকার। আর পেটেও ছুঁচো দৌড়োচ্ছে। একটা হোটেলে ঢুকে লাঞ্চের অর্ডার দিতে না দিতেই হোম স্টে'র মালিকের ফোন। কালিঝোরার কাছে বিশাল ধ্বস, পথ পুরোপুরি বন্ধ। তবে রাস্তা থেকে পাথরের চাঁই, উপড়ে পড়া গাছ ইত্যাদি সরানোর চেষ্টা চলছে। কিছু পরে রাস্তা ঠিক হলেও হতে পারে।
এই 'হলেও হতে পারে'র ওপর ভরসা করেই লাঞ্চ শেষে রওনা দিলাম আমরা। পাগলের মতো বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। ওয়াইপার চালিয়েও গাড়ির সামনের কাচের জল সরানো যাচ্ছে না। অক্টোবরের শেষে এমন বর্ষণ, ভাবাই যায় না। আমার মনের কথার অনুরণনেই বোধহয় আমার বন্ধু বলে উঠল, "পাহাড়ের কথা কিছুই বলা যায় না বুঝলে?" ঠিকই তাই। বৃষ্টি যেন না থামার প্রতিজ্ঞা নিয়েছে! বরং উত্তরোত্তর বাড়ছে তার তেজ। আমরা প্রচুর চেষ্টা করেও গন্তব্যে পৌঁছতে পারলাম না। তিস্তার পাড় ধরে বেশ খানিকটা এগিয়ে আবার পিছিয়ে আসতে হলো। করোনেশন ব্রিজের কাছে এসে থামল আমাদের গাড়ি। এবার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। পাহাড়ে বেড়াতে এসে শিলিগুড়িতে হোটেল বাস? ভাবতেই কান্না পেয়ে গেল। একবার শেষ চেষ্টা করি। ফোন করলাম চেনা ট্রাভেল এজেন্টকে। তারপর ওদেরই বদান্যতায় ঠিক হলো নতুন গন্তব্য। চললাম ডুয়ার্স।
আরও পড়ুন: গ্রামের নাম দাওয়াই পানি
বাতাবাড়ি অঞ্চলের একটি রিসর্টে আপাতত চেক ইন। বাকি পরিকল্পনা পরে হবে। করোনেশন ব্রিজ পার হয়ে ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে আমাদের গাড়ি চলছে। বৃষ্টির দাপট কমে নি এতটুকু। ফলে গাড়ির গতি কিছু শ্লথ। সে হোক। আমরা তিন পাগল 'বেড়ানো পার্টি' এরই মধ্যে চাঙ্গা হয়ে উঠেছি। পর পর বেশ কয়েকটি নদী পার হলাম। শুরু হয়েছে দ্য গ্রেট তিস্তার আনুকূল্যে। এবার একের পর এক নদীর সঙ্গে দেখা - লীস, ঘিস, চেল, মাল, নেওড়া, কুর্তি, মূর্তি। সবাই বেশ হৃষ্টপুষ্ট। কে বলবে এটা শরতের শেষ। সব জল থইথই। এমন ফুঁসছে, যেন সুযোগ পেলেই পথের ওপর উপচে পড়বে, ভাসিয়ে নিয়ে যাবে সব।
পাহাড়ের যে ছোট্ট জনপদটিতে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল, তা বড়ই মনোরম। যাওয়া হলো না বলে আক্ষেপ হতেই পারত। কিন্তু হলো না। নদী সব ভুলিয়ে দিল। তারপরের কটা দিন দারুণ রঙ্গিন। বিস্তারে যাওয়ার আগে আমাদের পৌঁছনোর বৃত্তান্ত। চালসা মোড় থেকে আমাদের গাড়ি ডানদিকে ঘুরল। দু'পাশে জঙ্গল আর চা বাগান রেখে চওড়া জাতীয় সড়ক সোজা চলে গেছে। কথামতো ঠিকানা খুঁজে আমরা পৌঁছে গেলাম বাতাবাড়ির নির্দিষ্ট রিসর্টে। উত্তরবঙ্গে বেড়াতে এসে কোনও রিসর্টে থাকবো, এটা আমার একেবারেই না পসন্দ। এবারেরটা নিরুপায় হয়েই। কিন্তু রিসর্টের গেটের ভিতর ঢুকেই ভাবনার গতিপ্রকৃতি পুরো ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেল। এই জায়গাটা একেবারেই তথাকথিত রিসর্টের মতো নয়। প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখেই এর পরিকল্পনা ও আনুষঙ্গিক আয়োজন।
মন আরও একটু ভালো হয়ে গেল রিসর্টের মালকিনের সঙ্গে দেখা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। কলকাতার এই তরুণী এত দূরে এত সুন্দর এক পর্যটন আবাস তৈরি করেছেন, এমন নিপুণ হাতে চালাচ্ছেন, ভালো তো লাগবেই। নিয়মমতো চেক ইন, ফ্রেশ হওয়া ইত্যাদি সেরে বসলাম ওদের ডাইনিং হলে। নাহ, এটাও মোটেই চির চেনা ডাইনিং হল নয়। আধখোলা, মাথার ওপর প্যাগোডার মতো চালওয়ালা এমন ডাইনিং স্পেসের অভিজ্ঞতা এই প্রথম। বৃষ্টি একটু ধরেছে ততক্ষণে। চা আর পকোড়া ভক্ষণে জমে গেল বৃষ্টিভেজা শরৎসন্ধ্যা।
হালকা ডিনার সেরে যে যার বিছানায় যাব। তাপমাত্রা কমেছে বৃষ্টির কারণে। তার আগে পরের দিনগুলির এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়ানোর পরিকল্পনা। তবে বৃষ্টি না কমলে সব মাটি। বেড়াতে এসে ঘরবন্দি থাকা মোটেই সুখকর হয় না। ডিনারে ডাল, আলু ভাজা আর মাছের ঝোল খেলাম অতীব তৃপ্তি সহকারে। নির্ভেজাল বাঙালি রান্না। আর দারুণ সুস্বাদু। রিসর্টের মালকিন দেখলাম যথার্থই দশভূজা। রান্নার লোকটিকে নির্দেশ দেওয়া থেকে আমরা পরের তিন দিন কোথায় কোথায় যাব, সবই গুছিয়ে দিলেন তিনি।
আরও পড়ুন: কালিম্পঙে ভিড় না করে চিবো-তে ফুলের জলসা দেখে আসুন
পরের দিনটা এলো এক ঝকঝকে সকাল নিয়ে। দ্রুত ব্রেকফাস্ট সেরে বেরিয়ে পড়লাম। গরুবাথান হয়ে চেল নদী, তারপর ঝান্ডি যাব। চালসা মোড় থেকে বাঁদিকে কিছুটা যাওয়ার পর আর একটা মোড়। এখান থেকে আবার বাঁদিকে কোনাকুনি একটা অপেক্ষাকৃত সরু পথ। এই পথ দিয়ে একটুখানি যাওয়ার পরই হঠাৎ চোখ ধাঁধানো সবুজ। চওড়া পিচের রাস্তায় উঠলো আমাদের গাড়ি। দু'দিকে জঙ্গল, চা বাগান রেখে সোজা চলল তারপর। এই অঞ্চলটাই গরুবাথান। ওহ, চা বাগানের এমন শোভা ! উত্তরবঙ্গে বহুবার এসেছি, চা বাগানও কম দেখিনি। কিন্তু এমনটা চোখে পড়েনি।
বেশ খানিকটা যাওয়ার পর কানে এলো জল-কলরব। ড্রাইভার ভাই বললেন, চেল এসে গেছে। একটা বেশ শক্তপোক্ত লোহার সাঁকো পেরিয়ে গাড়ি থামলো। চেল এখান থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে। রীতিমতো গর্জন করে নিজের অস্তিত্ব জানান দিলো সে। পাহাড়ী নদী এমনিতেই খরস্রোতা। তার মধ্যে সদ্য বৃষ্টির জল পেয়েছে, চেল এককথায় এখন আপন বেগে পাগলপারা। কোথাও বাধাহীন তার গতি। কোথাও বিশাল বিশাল বোল্ডারে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কিছুটা শ্লথ। অনেক দূরে দূরে পাহাড়শ্রেণী। ওখানেই কোথাও চেল ফেলে এসেছে তার জন্মস্থান। কিছুক্ষণ কাটালাম চেলের পাড়ে। পাশেই এক ছোট্ট চায়ের স্টল, কেক-বিস্কুটও আছে। বাইরে রঙ্গিন ছাতার নিচে চেয়ার পাতা। সেখানে বসে চা-পান ও টুকরো বিশ্রাম সেরে আবার রওনা। এবার যাব ঝান্ডি।
যে পথে এসেছি, তার ঠিক উল্টো দিকে এবার আমাদের যাত্রা। আদতে এই পুরো অঞ্চলটাই একটা উপত্যকা। স্বাভাবিক ভাবেই চারপাশে সবুজের সমারোহ। অনেকটা পথ সমতলে চললো গাড়ি। চোখের আরাম হলো সবুজের আভায়। তারপর শুরু হলো চড়াই। রাস্তা মাঝে মাঝেই বেশ খারাপ। তা হোক, ওপর থেকে নিচের চা বাগান, গাছপালা, গ্রামের ঘরবাড়ি সব যেন পটে আঁকা ছবি। ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকে সেই সব অনুষঙ্গ। অনেকটা ওপরে উঠে এসেছি আমরা। বদলে গেছে চারপাশের দৃশ্যপট। পাইনের ছায়া ঘন হয়েছে। প্রাচীন গাছেরা গম্ভীর ভ্রুকুটি নিয়ে দেখছে আমাদের। ঝান্ডি বড় সুন্দর। সেই সৌন্দর্য দেখতে দেখতেই মেঘ-কুয়াশার চাদর এসে ঢেকে দেয় সব। হালকা বৃষ্টিও শুরু হয়। এবার নিচে নামার পালা। পেট জানান দিচ্ছে লাঞ্চের সময় হয়ে গেছে। গাড়ি উৎরাইয়ের পথ ধরে। আমরা পথের বাঁকে বাঁকে জমে থাকা রহস্যময় সৌন্দর্য ঝুলিতে পুরে নিই শেষবারের মতো।
লাঞ্চে দুর্দান্ত বোরোলির মাখা মাখা ঝোল। এই মাছটা উত্তরবঙ্গেই শুধু পাওয়া যায়। সঙ্গে সবজি, ডাল, ভাজা আর দারুণ এক চাটনি ছিল। এবার কিছুক্ষণ বিশ্রাম। বিকেলে কাছাকাছি ঘোরা। আকাশ এখন পরিষ্কার। মূর্তি নদীর দিকটায় গেলাম। শেষ বিকেলের সূর্য রং ছড়িয়েছে আকাশ জুড়ে। মূর্তির জলে তারই ছায়া। প্রচুর লোকজন এদিক ওদিক ঘুরছে। নদীর বেশির ভাগ অংশেই চড়া পড়েছে। গভীর নয়, মোটামুটি হাঁটু জল । তার ওপর দিয়ে নিশ্চিন্তে পার হচ্ছে মানুষ, গরুর পাল। পাড়ে বসে আড্ডায় ব্যস্ত একদল তরুণ-তরুণী। মূর্তির ব্রিজের ওপর পর্যন্ত ছুটে আসছে তাদের প্রাণময় কোলাহল।
আরও পড়ুন: চুইখিম গেছেন? বড় প্রাণময় তার হাতছানি
সন্ধ্যায় রিসর্টে ফিরতেই চমক। রুপোর থালার মতো চাঁদ উঠেছে পূব আকাশে। সূর্য অস্তে গেলেও দিনের আলো মুছে যায়নি। তারই মধ্যে এই অপরূপ চন্দ্র দর্শন। এরপর কফি ও স্ন্যাকস সহযোগে সান্ধ্য আড্ডা জমে ওঠে আমাদের। রাত নামে চরাচর জুড়ে। পাখির দল ঘরে ফেরে। স্তব্ধতা ভেঙে হাইওয়ে দিয়ে গাড়ি যাতায়াত করে। ডিনারে রুটি আর চিকেন, সঙ্গে উষ্ণ আপ্যায়ন। ক্লান্ত চোখে ঘুম নামতে দেরি হয় না। কানে বাজে চেল নদীর কলতান।
এবারের ট্রিপটা কার্যকারণে পুরো নদীরই দখলে। পাহাড়, জঙ্গল এবং চা বাগানও ছিল। তবে, মুখ্য ভূমিকায় অবশ্যই নদী। পরের দিন সকাল সকাল বেরিয়ে পড়লাম। পর পর যাওয়া হলো সামসিং, লালিগুরাস, সুনতালে খোলা, রকি আইল্যান্ড। সামসিং মূলত চা বাগান। সে এক অনির্বচনীয় মায়াময় সবুজের দেশ। চালসা মোড় থেকে কিছু দূর সমতলে যাওয়ার পর পথ পাহাড়মুখী, গাড়ি চলছে। শুধুই চড়াই। আর পথের ধারে ধারে প্রাচীন বৃক্ষরাজি। একদল বাচ্চা স্কুলে যাচ্ছে। পাশ কাটিয়ে কাজের পথে মানুষজন। সকালের ব্যস্ত জীবনের ছবি দেখতে দেখতে কখন ঢুকে পড়েছি চা বাগানের এলাকায়। দু'দিকে বাগান, মাঝে পথ গিয়েছে এঁকেবেঁকে। পৌছলাম লালিগুরাস ভিউ পয়েন্টে। অনেকটা ওপর থেকে নিচে বহতা মূর্তির সঙ্গে দেখা। আগে নিচে একেবারে নদীর কাছে গাড়ি নিয়ে যাওয়া যেত। কিছুদিন আগেই মারাত্মক এক দুর্ঘটনা হয়। ফলে এখন অনুমতি নেই নিচে যাওয়ার। জায়গাটা শান্ত, নির্জন। চারপাশে উঁচু উঁচু পাহাড়। সব মিলিয়ে না ভোলা এক ল্যান্ডস্কেপ।
কিছুক্ষণ কাটিয়ে চললাম সুনতালে খোলা। 'খোলা' অর্থাৎ নদী। বেশি চওড়া নয়, তবে দারুণ খরস্রোতা। 'সুনতালে' মানে কমলালেবু। নদীর কাছে পৌঁছনোর আগেই কমলার বাগান। অবস্থা খুবই খারাপ। গাছগুলি অযত্নে শীর্ণ। দেখে মন খারাপ হয়ে গেল। এবার রকি আইল্যান্ড। এখানেও নদী। আর এখানেও মূর্তি। এখানে তিনি প্রায় উৎসের কাছাকাছি। ফলে প্রবল গর্জনে আছড়ে পড়ছে জলরাশি। কেন যে এর নামের মধ্যে আইল্যান্ড শব্দটি এল, তা কেউ বলতে পারল না। তবে বিশাল বড় বড় বোল্ডার, তার থেকেই রকি, বোঝাই যায়। জায়গাটা বেশ জমজমাট। প্রচুর টুরিস্ট। ফলে বেশ কয়েকটি দোকানপাটও গড়ে উঠেছে। ফটো সেশনের লোভ সামলানো দায়, প্রকৃতি এখানে এতটাই আকর্ষণীয়। সেই সব পাট চুকিয়ে গাড়িতে উঠে রওনা দিতে দিতে দুপুর গড়াল। আজ আমাদের টিয়াবনে লাঞ্চ।
টিয়াবন রিসর্ট জাতীয় সড়কের ওপরেই, আমরা যেখানটায় আছি, অর্থাৎ বাতাবাড়ির একটু আগেই টিয়াবন। গাছগাছালি দিয়ে ঘেরা এই রিসর্টে বহু বছর আগে আমি একবার একাই এসেছিলাম। সে গল্প পরে কখনও বলা যাবে। এখন যেটা বলার, আজ আমাদের বাইরেই কোথাও লাঞ্চ করার প্ল্যান ছিল। ড্রাইভার ভাই নিয়ে গেলেন টিয়াবনে। এখানে রিসর্টের ভিতরেই রেস্তোরাঁ, যেখানে বাইরে থেকেও খেতে যাওয়া যায়। ছিমছাম ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। মেনুতেও পাক্কা বাঙালিয়ানা। রান্না বেশ ভালো। অতএব তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে ধীরে সুস্থে টিয়াবনের ভিতর গাছপালাদের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফেরার জন্য গাড়িতে উঠি আমরা।
খুবই ক্লান্ত ছিলাম, বলাই বাহুল্য। অসময়, তাই না ঘুমিয়ে খানিকটা আলস্যে কাটিয়ে ঘরের বাইরে আসি। আজ দেখছি রিসর্ট একেবারে ভর্তি। লোকজন ঘোরাফেরা করছে। ডাইনিং-এর জায়গাটিও খালি নেই। অতএব ঘরের লাগোয়া বারান্দায় বসে চা পান। এটাও বেশ সুন্দর অভিজ্ঞতা। সূর্য অস্তে যাচ্ছে দেখতে পাচ্ছি এখান থেকেই। সূর্য গেলেন। চাঁদ উঠলেন। পাখিরা ব্যস্ত ঘরে ফেরায়। প্রকৃতির এইসব অনুষঙ্গ প্রাণ ভরে টেনে নিই বুকে। সন্ধ্যাটা এলোমেলো আড্ডায় কাটলো। কাল ভোরে জঙ্গল সাফারি। ডিনারের শেষে তাই দ্রুত চললাম ঘুমের দেশে।
উত্তরবঙ্গে এসে লোকজন নাকি রাস্তাঘাটে হাতি, লেপার্ড এসব দেখতে পান। আমার ভাগ্যে তেমনটা কখনও ঘটে নি। দেখা যাক, জঙ্গলে তেনারা দর্শন দেন কিনা। গরুমারা খুব কাছে, যেতে খুব একটা সময় লাগার কথা নয়। তবু, প্রায় রাতভোরে উঠে তৈরি হয়ে রওনা দিলাম আমরা। কারণ সকাল সকালই নাকি দেখা মেলে জীবজন্তুদের। জঙ্গল সাফারির নিয়মকানুন সংক্রান্ত বিষয়গুলি রিসর্ট থেকেই করে দেওয়া হয়েছে। জঙ্গলের প্রবেশপথে গিয়ে গাড়ি বদল। এটাই নিয়ম, গাড়িতে আমাদের সঙ্গে একজন বনকর্মীও উঠলেন।
দুঃখের বিষয়, যাদের জন্য এত ঘটাপটা, তারা দর্শনে অধরাই রইল। বিশাল অঞ্চল জুড়ে আমাদের গাড়ি কয়েকবার চক্কর কাটার পর একখানি ময়ূরের দর্শন ছাড়া ভাগ্যে আর কিছুই জুটল না। যদিও একেবারে কিছুই না বললে অন্যায় হবে। আমার তো গাছপালা দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। এখানে প্রকৃতি অকৃপণ বিলাসে সাজিয়েছে তাদের। কত রকমের যে গাছ। জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে সেই সব গাছেদের সঙ্গে স্বল্পায়ু সখ্যতা করে রিসর্টে ফিরি। আমাদের ফেরা আজই। প্যাকিং প্রায় শেষ। ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করি। আজ দুর্দান্ত আলুপরোটা, সঙ্গে আচার। গাড়ি রেডি। ভালো লাগা মুহূর্তগুলি স্মৃতিতে নিয়ে রওনা দিই আমরা। জাতীয় সড়ক ধরে জঙ্গল দু’পাশে রেখে চললো গাড়ি। প্রথমে এয়ারপোর্ট। সেখান থেকে কলকাতা।
কীভাবে যাবেন: এনজেপি স্টেশন/শিলিগুড়ি তেনজিং নোরগে বাস স্ট্যান্ড/বাগডোগরা এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি গাড়িতে যেতে পারেন। ভাড়া ২,২০০ টাকা (এনজেপি ও শিলিগুড়ি থেকে), বাগডোগরা থেকে ২,৬০০ টাকা। নিউ মাল জংশন থেকে ৮০০ টাকা (শিয়ালদহ থেকে কাঞ্চনকন্যা এক্সপ্রেস যায়)
কোথায় থাকবেন: দুয়ারসিনি রিসর্ট
খরচাপাতি: থাকা-খাওয়া দিনপ্রতি জনপ্রতি ১,২০০ টাকা। আলাদাভাবে ঘর ভাড়া ১,৪০০ টাকা (ডাবল বেড, এক্সট্রা বেড নিতে পারেন বাড়তি টাকা দিয়ে)। খাওয়ার খরচ ৫০০ টাকা দিনপ্রতি জনপ্রতি (বেড টি থেকে ডিনার)। সাইট সিয়িং-এর খরচ আলাদা। জঙ্গল সাফারি করতে চাইলেও পৃথক বাজেট রাখুন। অন্যান্য হোটেল ও রিসর্টের ক্ষেত্রে খরচ উনিশ-বিশ
যোগাযোগ: 9831380779
মনে রাখুন: টর্চ , ফার্স্ট এড বক্স, ন্যূনতম প্রয়োজনীয় ওষুধ সঙ্গে রাখুন