Advertisment

পেডং ছাড়িয়ে, মুদুম পার হয়ে কাগে

প্রত্যন্ত গ্রাম। উচ্চতা মোটামুটি ৪৫০০ ফুট। বর্ষা বাদ দিয়ে যে কোনও সময় যেতে পারেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন অক্টোবর থেকে জানুয়ারি।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
North Bengal remote village kaage

ধাপে ধাপে চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, বিভিন্ন ধরণের ডাল

পেডং বাজার ছাড়িয়ে একটু যেতেই চারপাশটা হঠাৎ খুব নির্জন হয়ে গেল। এদিকটা জনবসতি বেশ কম। প্রকৃতিতেও তার ছোঁয়া। এক অপার নির্জনতা চরাচর জুড়ে। রাস্তা অত্যন্ত রুক্ষ। অনেক পরে পরে অল্প কিছু ঘরবাড়ি নিয়ে একেকটি গ্রাম। সে হোক, পাহাড়ের  ধাপে ধাপে ফসলের ক্ষেত দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। রুক্ষ পাথুরে জমিতে সবুজের উৎসব। অক্টোবরের মাঝামাঝি। আকাশ ঝকঝকে। গাড়ি চলেছে প্রবল ঝাঁকুনি দিয়ে, রাস্তা এতটাই পাথুরে। মাঝে মাঝে বড় বড় বোল্ডার। ড্রাইভার ভাই নিপুণ কৌশলে সেই সব কাটিয়ে চলেছে।

Advertisment

এবারের গন্তব্য কাগে, উত্তরবঙ্গের ছোট্ট এক পাহাড়ি গ্রাম। কালিম্পঙ হয়ে আলগরা। তারপর পেডং, সেখান থেকে এই কাগের পথে। দূরত্ব পেডং থেকে খুব বেশি নয়। রাস্তা খারাপ বলে সময় বেশি লাগে। এলাকার লোকজন অবশ্য হেঁটেই দূর দূর পথ চলে যায়। তারা এতেই অভ্যস্ত। নিরুপায়ও বটে। আবার এই কারণেই ওদের আলাদা করে কোনও ফিটনেস রুটিন মেনে চলতে হয় না। জীবনযাপন থেকেই ফিটনেস মন্ত্র উচ্চারিত হয়।

আরও পড়ুন, ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন? একবার দেখতে পারেন এই জায়গাগুলো

কিছুদূর যাওয়ার পর গরম লাগতে শুরু করে। পাহাড়ে রোদ উঠলে এটাই নিয়ম। পথের পুরোটাই রোদ মাখানো। গ্রামজীবন, প্রকৃতি দেখতে দেখতে আর একটু এগোতেই জলধারার উচ্ছ্বাস কানে আসে। ড্রাইভার ভাই জানায়, এটা মুদুম নদী। পাহাড়ী নদী মানেই খরস্রোতা। মুদুমকে দেখে সেটা ভালোই বোঝা যাচ্ছিল। শুনলাম, তার উৎসমুখ খুব দূরে নয়। সামান্য আগে তার ঝর্ণা থেকে নদীতে গতি পাওয়া। ফলে এখনও কিছুটা দুর্দম সে। বর্ষায় পুরোপুরি বাঁধনহারা হয়ে পড়ে মুদুম। তখন তাকে এড়িয়ে চলাই শ্রেয় মনে করে এলাকাবাসী, জানায় ড্রাইভার ভাই।

মুদুম পার হয়ে কিছুদূর যেতেই ঘরবাড়ির আভাস চোখে পড়ে। গন্তব্যে পৌঁছে গেছি। গাড়ি থেকে নামি প্রবল উৎসাহে। আর নেমেই উৎসাহের বেলুন ফুস। কাগে-তে একটাই হোম স্টে। সেই হোম স্টে এখন আমার সামনে। সামনে, কিন্তু সামনে নয়। রাস্তা থেকে অনেকটা নেমে, বাড়িটার মূল অংশে পৌঁছোতে হবে। আর সেই নামার পথটা একেবারে খাড়াই । ওদের ভাষায় সিঁড়ি, আসলে একটি-দুটি ইট বা পাথরের টুকরো পাতা। ড্রাইভার ভাই তিড়িং তিড়িং করে সেখান দিয়ে হাসতে হাসতে নেমে গেল। প্রতিক্রিয়াটা আমার মুখ দেখেই, বুঝলাম সেটা। সে হাসুক। আমি কি করে নামি ?

মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ি প্রায়। রেগেমেগে ফোন করি পূর্ণজিকে। প্রসঙ্গত, উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন অচেনা ও কম চেনা জায়গা পূর্ণজির কল্যাণেই আবিষ্কার করার সুযোগ হয়েছে আমার। পূর্ণ তামাং। ওঁর নিজের বাড়ি ও হোম স্টে পেডং-এ। কয়েকবার  আসাযাওয়ার ফলে সম্পর্কে লেগেছে আত্মীয়তার রং। কাগেও ওঁর সূত্রেই আসা। আমার টেনশনে হইচই করা ফোন পেয়ে উনি প্রথমে খুব হাসলেন।  তারপর কিছু গাইড করলেন ড্রাইভারকে। শেষে এই হলো, আমার সঙ্গে কলকাতা থেকে এক ভাই গেছিল। সেই ভাই, ড্রাইভার ও হোম স্টে মালিকের দুই ছেলে--চারজন মিলে নামালো আমায় ! দু'জন হাত ধরে, দু'জন আগুপিছু গার্ড দিয়ে।

ততক্ষণে চারপাশের লোকজন মুখ লুকিয়ে হাসছে। গন্তব্যে পৌঁছে আমিও হাসি। কৃতজ্ঞও হই। তারপরের কদিন শুধুই মুগ্ধ হওয়া। হোম স্টে-তে পৌঁছে রুটিন কাজকর্ম, মানে ফ্রেশ হওয়া ইত্যাদি সেরে বাইরে আসি। অতিথিদের জন্য নির্দিষ্ট তিনটি ঘর। তারই দুটি ঘরে আমরা। কিছুটা দূরে হোম স্টে মালিকের বাড়ি। মাঝে সুন্দর এক খোলা বাঁধানো জায়গা। যেখানে রঙ্গিন ছাতার নিচে বসার ব্যবস্থা। খাওয়াদাওয়াও এখানেই। সামনে সারি সারি পাহাড়। দূরে যারা, তারা রুখু চেহারায়। কাছের দল সবুজে ঢাকা। পাহাড়ের ধাপে ধাপে চাষ হচ্ছে ধান, ভুট্টা, বিভিন্ন ধরণের ডাল। প্রচুর ফলের গাছও আছে, যার মধ্যে চেনা কলা, পেয়ারা। কমলালেবুর চাষও করেন কেউ কেউ। যদিও সেটা ব্যক্তিগত স্তরেই। ফুলঝাড়ুর গাছও আছে। এটা এদিককার মানুষের রোজগারের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক। ঝাড়ু বানিয়ে কাছাকাছি হাট বা বাজারে বিক্রি করা।



কাগে অল্প কয়েক ঘরের ছোট গ্রাম। চাষবাস, ডেয়ারি, পোলট্রি --- মোটামুটি এটাই এখানকার মানুষের জীবিকা। সামান্য সংখ্যক সরকারি চাকরিতে বহাল। বন বিভাগ, পুলিশ এবং সেনাবাহিনীতেও আছেন কিছু মানুষ। গ্রামবাসী সাধারণভাবে শিক্ষাসচেতন। তাই গ্রামে সেভাবে সুযোগ না থাকলেও ছেলেমেয়েরা পেডং, কালিম্পং, লাভা, এমনকী শিলিগুড়িতে গিয়েও পড়াশোনা করছে। যদিও এ সুযোগ এখনও অনেকেরই আয়ত্তের বাইরে।

North Bengal remote village kaage এখান থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়

ব্রেকফাস্টে জমিয়ে পুরি আর আলুর তরকারি খেলাম। চর্বি বেড়ে যাবার ভয় যাক চুলোর দুয়ারে। বাড়ির গরুর দুধের ঘি-এ ভাজা পুরি আর ক্ষেতের আলুর সবজি। খাবারের স্বাদ এমন যে লুব্ধ না হয়ে পারা যায় না। একটু পরেই গৃহকর্ত্রী, হোম স্টে-র মালকিন এলেন আলাপ করতে। সঙ্গে ঝুড়িতে গাছের পেয়ারা। ইয়া বড় সাইজ তার। কথায় কথায় জানা গেল ওঁদের নিজেদেরই রয়েছে চাষের জমি,গরু-ছাগল-মুরগি এবং নানা ফলের গাছ। যে কদিন ছিলাম, খাবার টেবিলে বরাবর পেয়েছি সেই সব উদ্ভুত তাজা খাবারের সম্ভার। স্বাদ ও পুষ্টিগুণের কথা আর কী বলবো ! প্রসঙ্গত, পাহাড়ের আর সব অঞ্চলের মতো এখানেও কৃষিক্ষেত্রে জৈব সার ব্যবহৃত হয়।

গৃহকর্ত্রী ছোটখাটো চেহারার মিষ্টি হাসিমাখা মুখের মহিলা। ব্যক্তিত্বে আকর্ষণীয়।স্বামী ভদ্রলোকটি আমাদের সঙ্গে আড্ডায় যোগ দিলেন একটু পরেই। বললেন, উনি কিছু নন, সমস্ত রাজ্যপাট চালান তাঁর স্ত্রী। জমিজমা, গরুছাগলদের তত্ত্বাবধান থেকে অতিথিদের দেখভাল। সেদিন লাঞ্চেই ভদ্রমহিলার রান্নাগুণের পরিচয় পেলাম। অমন ডাল আর রাইশাক আগে কখনও খাইনি। বিশেষত রাইশাক। পরের কদিন লোভীর মতো খেয়েছি এই পদ। ডাল ও শাকসবজি ছাড়া এই কয়েকদিনের মেনুতে ছিল ডিম, চিকেন।প্রকৃতির অকৃপণ দান আর ওঁর হাতের নিপুণ গুণে সবই অমৃত। পরের কদিনে একে একে ওঁর আরও গুণের পরিচয় পেলাম।

দুপুর, বিকেল কাটলো কিছুটা বসে, কিছু এদিকওদিক ঘুরে। বাগানে রংবেরঙের ফুল। সেখানে চঞ্চল ফড়িং ও প্রজাপতির ওড়াউড়ি। সন্ধ্যায় আলাপ হলো পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে। হোম স্টে মালিকের দুই ছেলেই কালিম্পং-এ থেকে পড়াশোনা করে। পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসেছে। দুজনেরই চোখে অনেক স্বপ্ন। জানা যায়, গ্রামে তাদের প্রজন্মের সকলেই এমন কিছু করতে চায়, যা ভবিষ্যতে কাগের উন্নয়নে সাহায্য করবে। বিশেষত স্কুল ও চিকিৎসাকেন্দ্র নির্মাণ খুব খুব জরুরি, বলে ওরা। কথা বলতে বলতেই  চা এবং পকোড়ার সদ্ব্যবহার।

North Bengal remote village kaage পাখিদের কাণ্ড দেখতে দেখতেই দূরে চোখ চলে যায়

সন্ধ্যা আর একটু  গাঢ় হয়ে নামার পর ঘরবন্দি হতে হলো। কারণ, জমিয়ে ঠান্ডা পড়েছে। উত্তুরে হাওয়ার দাপট বাড়ছে। শুক্লপক্ষের আহ্লাদী চাঁদ ক্রমশ উজ্জ্বল। আকাশের তারাদের সঙ্গে সান্ধ্য আদানপ্রদানে ব্যস্ত পৃথিবীর জোনাকির দল। সারাদিনের ক্লান্তি এবার চোখে নামে। বাইরে হিমেল কুয়াশা। রাতের খাওয়াও তাই ঘরেই। আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুম। তখনও জানি না, পরদিন কি অসাধারণ এক চমক অপেক্ষা করছে।

খুব ভোরে পাখির ডাকে ঘুম ভাঙ্গে। পাশের ঘরে আমার যাত্রাসঙ্গী ভাইটি তখনও গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। আমি তাকে বিরক্ত না করে শীত পোশাক জড়িয়ে বাইরে আসি। বসি ছাতার নিচে। বসতে না বসতেই একটি বাচ্চা মেয়েকে দিয়ে চা পাঠিয়ে দেন গৃহকর্ত্রী। তাঁর দোতলার কিচেনের জানালা দিয়ে এক মুঠো হাসিও উপহার দেন। বাচ্চাটি ওঁর দেওরের মেয়ে। গ্রামের স্কুলেই পড়ে। পড়াশোনায় খুবই ভালো। নাচ-গানেও আগ্রহ আছে। আর তাতে উৎসাহদাত্রী ওই জেঠিমা। গ্রামের সামগ্রিক সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রেই এই মহিলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করেন। সবাইকে উৎসাহ দেন , অনুষ্ঠানের আয়োজনও করেন। শুধু তাই নয়, যে কোনও সামাজিক বিষয়েই পরামর্শ নিতে এই বিচক্ষণ মহিলার কাছেই আসে গ্রামের লোকজন।



আকাশ আরও একটু পরিষ্কার হয়। চারপাশের অপার শান্তি ভঙ্গ করে হঠাৎই প্রবল তৎপর হয়ে ওঠে পাখির দল। খাবারের খোঁজে যেতে হবে তাদের। সারি বেঁধে, সুন্দর ছন্দে আকাশপথে পাড়ি দেয় ওরা। পাখিদের কাণ্ড দেখতে দেখতেই দূরে চোখ চলে যায়। চলে যায় ও আটকে থাকে। এক মুহূর্ত বুঝতে সময় লাগে। তারপরই লাফিয়ে উঠি। তিনটি সাদা শৃঙ্গ ক্রমশ উদ্ভাসিত হচ্ছে। কাঞ্চনজঙ্ঘা !! একটুও দেরি না করে হাঁকডাক করে ভাইটিকে তুলি। তারপর হাঁচরপাচর করে রাস্তায়। এখন থেকে ভিউ আরও একটু পরিষ্কার হবে। পিছু নেয় হোম স্টে মালিকের পোষা কুকুর। সে ছাড়া অঞ্চলটি তখন পুরোপুরি জনমানবশূন্য।

যেমন ভাবা, তেমনই হলো। রাস্তার উচ্চতা বেশি। তাই কাঞ্চনজঙ্ঘা এখানে অনেকটা সরাসরি দৃশ্যমান।  সারি সারি পাহাড় ছাড়িয়ে অনেকটা দূরে নিবদ্ধ করি দৃষ্টি। স্বমহিমায় কাঞ্চনজঙ্ঘা। স্পষ্ট হচ্ছে ক্রমশ।অনেকক্ষণ পর্যন্ত রাস্তার ওপর থেকেই নানা অভিমুখে  দর্শন করি তাকে। সে যে কি অপরূপ শোভা, কি অমোঘ আকর্ষণ  তার !! একটা সময়ের পর মুগ্ধতার রেশ কাটিয়ে হোম স্টে-তে ফিরতে হয়। রোদ্দুরের তেজ বেড়েছে। তার ঔজ্জ্বল্য এখন আকাশের সব প্রান্তে। মুখ ঢেকেছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। এদিকে আমাদের দুজনেরই পেটেও ছুঁচোরা রীতিমতো ডন বৈঠক দিচ্ছে। অতএব ফেরা।

আরও পড়ুন, গ্রামের নাম দাওয়াই পানি

নিয়মমতো ব্রেকফাস্ট , লাঞ্চ ইত্যাদি সেরে কিছুক্ষণের বিশ্রাম। ঘরের বাইরে আসি। সূর্য ঢলে পড়েছে পশ্চিমে। গোধূলির আলো মেখে নিচ্ছে চরাচর। আলো ঠিকরোচ্ছে চাষের ক্ষেত, গাছপালা, ফুলের বাগান, গ্রামের যাবতীয় অনুষঙ্গ ঘিরে। সে এক অপরূপ আয়োজন প্রকৃতির বুক জুড়ে। এরই মধ্যে গ্রাম প্রদক্ষিণ করে এসেছে আমার সঙ্গী ভাইটি। পুরো গ্রাম জুড়ে একটাই দুর্গা পুজো। সেই পুজো দেখে এসে উচ্ছ্বসিত সে। আমরা যেখানে আছি, তার থেকে অনেকটা উপরে ওই পুজোর আয়োজন। আমার পক্ষে পৌঁছনো কঠিন। তাই তার কাছেই বর্ণনা শুনে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাই।

ছোট্ট কিন্তু আন্তরিকতায় অসাধারণ সেই পুজোয় সামিল আপামর গ্রামবাসী। সারাদিন ধরে পুজো, প্রসাদ বিতরণ ইত্যাদি। সন্ধ্যায় গানবাজনা, নৃত্য পরিবেশন ও নাটক। পুজোর চারদিন রোজ এই নিয়ম। অংশগ্রহণ করবে প্রত্যেকেই। এটাই তাদের বছরকার সব থেকে বড় পার্বণ। শুধু হিন্দুরা নন, ক্রিস্টান, বৌদ্ধ সব ধর্মের মানুষ  আবেগে, উৎসাহে যুক্ত থাকেন প্রতিটি কাজে।

প্রসঙ্গত, কাগে -তে এই তিন ধর্মের মানুষই বাস করেন অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ভাবে। প্রত্যন্ত এই গ্রামে অনেক কিছুই নেই। স্কুল নেই, চিকিৎসাকেন্দ্র নেই। নেই বাজার অথবা বহু ন্যূনতম প্রয়োজনীয় বাঁচার উপকরণ। আছে উদার প্রকৃতি, দূষণমুক্ত পরিবেশ আর মানুষের অফুরান প্রাণপ্রাচুর্যের সম্ভার। নেপালী ও তিব্বতী ভাষা ছাড়া হিন্দিতেও যোগাযোগ স্থাপন করেন এখানকার মানুষ।

জেলা কালিম্পং। কালিম্পং শহর থেকে যেতে সময় লাগে ঘন্টা দেড়েক। প্রত্যন্ত গ্রাম। উচ্চতা মোটামুটি ৪৫০০ ফুট। বর্ষা বাদ দিয়ে যে কোনও সময় যেতে পারেন। কাঞ্চনজঙ্ঘার দর্শন অক্টোবর থেকে জানুয়ারি। তবে, সবাই জানে, তার দেখা পাওয়া সব সময়ই ভাগ্যের ব্যাপার। আমার কী ভাগ্য, দর্শন দিলেন তিনি। মার্চ-এপ্রিলে পাবেন ফুলের শোভা। প্রচুর ওষধি গাছও আছে। শীতে ভালোই ঠান্ডা পড়ে। এখনও সেভাবে পর্যটকের ভিড় নেই। তাই নির্জনতা কাগে-র শরীর জুড়ে।

সন্ধ্যা নামছে। ঘরে ফিরছে পাখির দল। দূর থেকে মাইকের আওয়াজ ভেসে আসে। পূজা মণ্ডপে সান্ধ্য আসর বসেছে। সকালের ছোট মেয়েটি জানিয়ে যায়, গান গাইতে চলেছে সে। হারমোনিয়াম বাজাবেন তার জেঠিমা। ভারি খুশি দুজনেই। সে খুশি আকাশের এক কোণে চাঁদের মুখেও। হাজার তারার মাঝে নরম আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে উৎসবের পৃথিবীকে সুন্দরী করে তুলেছে সে। কফি আর মোমো সহযোগ সান্ধ্য টেবিলে। চুপচাপ কেটে যায় কিছুক্ষণ। সহযাত্রী ভাই পুজো মণ্ডপ থেকে ফেরে। ঠান্ডা বাড়ছে। ঘরে যেতে হবে এবার।

সময়টা কেমন অনন্য এক ছন্দে কেটে গেল। এবার শহরে ফেরা। পরদিন ঘুম ভাঙতেই বিষাদ আচ্ছন্ন করে। আজ বিদায় নিতে হবে। গৃহকর্ত্রী এসে ডেকে নিয়ে যান। পুরো বাড়ি, গাছগাছালি ঘুরিয়ে দেখান। আলাপ করান প্রতিবেশীদের সঙ্গে। সকলের মুখেই অমলিন হাসি। অভিব্যক্তি এমন যেন কতদিনের চেনা। কেউ মুখের কথায়, কেউ হাতজোড় করে মাথা ঝুঁকিয়ে উষ্ণতার পরশ দেন। এই রেশটুকু নিয়েই গাড়িতে ওঠা। মুদুম পার হয়ে যেতে যেতে শুনি তার হৃদয়ের কথা, "আবার এসো কিন্তু।"

travel destination travelogue
Advertisment