Advertisment

ভুলবো না ওখরে

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির পর্যটন মানচিত্রে সিকিম এই মুহূর্তে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকায়।  সার্বিকভাবেই এখানকার মানুষ শিক্ষিত ও সচেতন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Sikkim Okhrey Travel

ঘুম ভাঙলো আলোর ঝর্ণাধারায়

জোরথাং পৌঁছে যখন জানতে পারলাম, ওখরে যাওয়ার শেষ শেয়ার গাড়িটাও চলে গেছে, তখন মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়াই স্বাভাবিক  ছিল। তবে ওই, আমার মতো রুটিনের বাইরে চলা লোকজন যা করে, ঝাঁপিয়ে পড়ে নতুন উদ্যমে , আমিও তাই করলাম। কাজটা যদিও বেশ কঠিন। সেল ফোন আসেনি তখনও। এসটিডি বুথ থেকে কলকাতায় ট্রাভেল এজেন্টকে ফোন করে, তার চেনা এখানকার এক গাড়ির এজেন্ট ধরে গাড়ি রিজার্ভ করে রওনা দিতে দিতে সন্ধে ৭টা বেজে যায়। পাহাড়ের , বিশেষত কিছুটা প্রত্যন্ত অঞ্চলের ক্ষেত্রে এই সন্ধ্যার পর যাতায়াত যথেষ্ট বিপদজনক। কি আর করা, সেই সময় জোরথাং-এ থাকার কোনও জায়গা ছিল না। অতএব, বেশি না ভেবে মনের জোরে বেরিয়ে পড়াই যুক্তিযুক্ত।

Advertisment

আরও পড়ুন, গ্রামের নাম দাওয়াই পানি

বলা বাহুল্য, এই বিপদকে সঙ্গে নিয়ে পাহাড়ী পথে রাতভ্রমণ অসাধারণ এক অভিজ্ঞতা হয়ে আছে। কিন্তু সেসব বৃত্তান্ত পরে। তারও আগে শুরুর কথা। সারাদিন অফিস করে রাতের ট্রেন সফরে  গন্তব্যে পৌঁছব, এটাই ছিল চাকরি জীবনে পাহাড়ে বেড়ানোর রুটিন। পাহাড় মানে হয় উত্তরবঙ্গ, নয় সিকিম। আর অবশ্যই তালিকায় অচেনা কোনও নাম। আমি যখনকার কথা বলছি, তখন  সিকিমের ওখরে-র নাম খুব কম লোকই জানতো। এটা সিকিমের পশ্চিম দিকে। আদতে হিলে বা ভার্সে অনেক বেশি পরিচিত নাম। এই পরিচিতিও মূলত ট্রেকিং পাগলদের জন্য। একটি দুর্দান্ত পাখিরালয়ও অবশ্য আছে কাছাকাছি ও অপূর্ব এক রডোড্রেনডন স্যাংচুয়ারি। বেশ কয়েকটি মনাস্ট্রি। এছাড়া আর এক পাহাড়ী গ্রাম উত্তরে-তেও যাওয়া যায় এখান থেকে। অতি পরিচিত পেলিং-ও খুব দূরে নয়।

Sikkim Okhrey Travel ফুলের সমারোহ

আর হ্যাঁ, কাঞ্চনজঙ্ঘাও আছেন! ওখরে থেকে দুর্দান্ত ভিউ মেলে শুনলাম। তবে, আমার সঙ্গে সচরাচর কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা হয়না। এই যাত্রায়ও হয়নি। অথচ, অক্টোবর থেকে জানুয়ারিই হলো কাঞ্চনজঙ্ঘা দর্শনের সবচেয়ে সেরা সময়। পুজো সেবার অক্টোবরেই ছিল। তবু, চিরকালের মুডি ভদ্রলোক মুখ ফিরিয়েই রইলেন।

প্রসঙ্গত, হিলে  ও ভার্সে উপত্যকা জুড়েই রডোডেনড্রনের মেলা, যার সঙ্গে মিশেছে সিংগ্রিলা ফরেস্ট। ১০৪ কিলোমিটার বিস্তৃত এই অঞ্চলটি ভারতের সঙ্গে নেপালের সীমারেখা চিহ্নিত করে । যাই হোক, হিলে আর ভার্সে যেতেই পড়ে ছোট্ট গ্রাম ওখরে। ট্রেকিং-এ যাওয়ার পথে সাময়িক বিশ্রাম ও পানভোজনের জন্য থামে লোকজন সেখানে। থাকে হয়তো আমার মতো মুষ্টিমেয় কিছু পাগল। একটাই হোমস্টে। পুজোর ছুটির ৩টি দিন সেখানেই থাকবো, ঠিক হলো।

Okhrey Travel মুগ্ধকর ওক ও পাইনের শোভা

আবহাওয়া নয়, অন্য কোনও কারণে সেবার ট্রেন খুব বেশি লেট করেছিল। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে, বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন হোটেলে হাতমুখ ধুয়ে, লাঞ্চ করে যখন সিকিমের বাসে উঠলাম, তখন সূর্য মাথার উপরে উঠেছে। লোকাল বাসের যা নিয়ম, প্রায় সব স্টপেজেই দাঁড় করিয়ে যাত্রী তোলা। এখানেও সেটা চললো এবং এর অবধারিত ফল জোরথাং-এ লেটে পৌঁছনো, যার কথা শুরুতেই বলেছি। এখানে একটা কথা উল্লেখ প্রয়োজন, বেড়ানোর ক্ষেত্রে সব সময় গাড়ি রিজার্ভ করে এদিকওদিক যাওয়া মধ্যবিত্ত পকেটে কুলোয় না। ওখরের দূরত্ব যা, তাতে সেই সময় গাড়ি রিজার্ভ করে যাওয়া অসম্ভব ছিল। অতএব চলো জনতার সাথে।

যাত্রার মূল পর্বে যাওয়ার আগে একটা কথা। সেদিন ভিন রাজ্যের এক অচেনা ছোট শহরে মালপত্র নিয়ে একা অপেক্ষা করতে করতে আরও একবার অনুভব করছিলাম পাহাড়ী মানুষের প্রাণের স্পর্শ। কেউ বসবার টুল এগিয়ে দিচ্ছেন, কেউ খাবার জল। আবার ফোন বুথে যাওয়ার সময় আমার মালপত্র পাহারা দিতে নিজের দোকান ছেড়ে এসে দাঁড়িয়েছেন  কেউ। একজন মহিলা কাছের দুর্গা মন্দিরে নিয়ে গেলেন এক ফাঁকে। আর সবটাই হাসিমুখে।

এলাকাটা একটা বাজার । দোকানপাট ছাড়াও এখানেই  বাস ও গাড়ির স্ট্যান্ড। সন্ধ্যা নামতেই বেশ আলো ঝলমলে হয়ে উঠলো সব। গাড়ি রেডি। ড্রাইভার এক নেপালী তরুণ , সবে কৈশোর পার করেছে। ওরা খুব অল্প বয়সেই কাজে লেগে পড়ে, এটা দেখে দেখে এতদিনে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। অনুরোধ করে সঙ্গে নিলো ছোট ভাইকে। নাহলে, ফেরার সময় একা গাড়ি চালিয়ে আসতে হবে। আপত্তির কিছু নেই। দেরি না করে যাত্রা শুরু করলেই ভালো। হোম স্টে-তে পৌঁছনোর নির্দিষ্ট সময় বহুক্ষণ পার হয়ে গেছে। খবর দেওয়ার কোনও উপায় নেই। টেলিফোন নেই ওদের। খানিকটা দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই জোরথাং ছাড়লাম।

বাজার ছাড়িয়ে একটু যেতেই মাথা থেকে চিন্তাভাবনা উধাও। গাঢ় নির্জনতা চরাচর জুড়ে। আর অন্তহীন স্তব্ধতা। ইঞ্জিনের শব্দ , ছেলেদুটির বকমবকম,  রেকর্ডারে কিশোরেকুমারের গান কিছুই সেই নিস্তব্ধতা ছুঁতে পারে না। কাঁচ সব তোলা, তবু হিমেল বাতাস কাঁপিয়ে দেয় হাড়ের ভিতর পর্যন্ত। ততক্ষণে মাথার ওপরে সামিয়ানা টানিয়ে দিয়েছে রাতপরীরা। মায়াময় আবেশ তৈরি করেছে তারাখচিত আকাশের নীলাভ দ্যুতি। এক কোণে সপ্তমীর চাঁদ। কি অনির্বচনীয়। হে ঈশ্বর , এইসব দেখার জন্যই তো বেঁচে থাকা।

Sikkim Okhrey শীতে পারদ নামে শূন্যের কাছাকাছি

বাইরে তাকালে পথের কিছু বোঝা যায় না। অনুভব করছিলাম একের পর এক বাঁক ঘুরছি। যত ঘুরছি, তত আকাশ নিচে নেমে আসছে। মানে পথ পুরোপুরি চড়াইগামী। কতটা ঝুঁকি সেদিন নিয়েছিলাম, সেটা বুঝেছিলাম ফেরার দিন। ফেরাটা ছিল দিনে। বাঁকগুলি বেশ কয়েকটি এমন, যেখানে একচুল এদিকওদিক হলেই কয়েক হাজার ফুট নিচে পড়ার সম্ভাবনা। কুর্ণিশ জানাই সেই তরুণকে । কি নিপুণ কুশলতায় সে আমাকে সে রাতে পৌঁছে দিয়েছিল গন্তব্যে। আজ পর্যন্ত প্রচুর বার পাহাড়ী পথে ভ্রমণ করেছি। কিছু আছে স্মৃতিতে, কিছু মুছে গেছে। এই রাতের যাত্রা সব কিছু থেকে আলাদা। আক্ষরিক অর্থেই স্বর্গীয় সেই রাত ভুলবো না কোনওদিন।

ওখরে পৌঁছতে রাত ১০টা বাজলো। আমার আশঙ্কা প্রায় সত্যি প্রমাণ করে ততক্ষণে হোম স্টে পরিবারটির সকলেই দরজা বন্ধ করে লাইট নিভিয়ে শুয়ে পড়েছেন। শেষে ড্রাইভার গাড়ির হর্ন বাজিয়ে, হাঁকডাক করে জাগায় তাঁদের। তারও ফেরার তাড়া। ওঁরা তো আমার আশা সেদিনের মতো ছেড়েই দিয়েছিলেন। একজন বাঙালি মহিলা অত রাতে একা পাহাড়ী পথে ট্রাভেল করবে, এটা ওঁদের ভাবনার অতীত, সেটা স্বীকার করলেন স্পষ্টতই। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চলে গেল। ঠান্ডা মারাত্মক। গরম জলে হাত-পা মুছে, ব্যাগ থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বের করতে করতেই ডিনার এসে গেল। গরম ভাত, ডাল, আলুসেদ্ধ আর অমলেট। যাকে বলে অমৃত। দ্রুত খেয়ে ডাবল কম্বলের তলায়। আর সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম।

ঘুম ভাঙলো আলোর ঝর্ণাধারায়। জানালার পর্দা সরিয়ে বাইরে তাকাতেই পাগল করা প্রকৃতি উদ্ভাসিত হলো চোখের সামনে। চারপাশে শুধুই পাহাড়। আর তার কোলে কোলে কোথাও সবুজের সমারোহ, কোথাও ফুলের বাহার। ব্রেকফাস্ট হলো টোস্ট-অমলেট দিয়ে, সঙ্গে ধোঁয়া ওঠা চা। শুনলাম, এটা হোম স্টে-র  মালিকের বাগানের চা। ব্যাপারটা রোমাঞ্চকর নিঃসন্দেহে। আকাশ ঝকঝকে পরিষ্কার। উত্তুরে হাওয়ার দাপট বেশ বোঝা যায়। শীত পোশাকে আপাদমস্তক মুড়ে ঘুরতে বের হলাম পায়ে হেঁটে।

সিকিমের পশ্চিমাঞ্চল, বিশেষত এই দিকটা তুলনায় রুক্ষ। তার মধ্যেই ফুলেরা দল মেলে। পাখি গান গায়। নানা প্রজাতির পাখি দেখতে পাওয়া যায় এখানে। রেড পান্ডার জন্য বিখ্যাত এই অঞ্চল। ভালুকও  আছে। আছে খরগোশ, বুনো কুকুর। বিচিত্র বর্ণের রডোডেনড্রন ছাড়াও মেলে নানা প্রজাতির অর্কিড। ফুলের মধ্যে প্রিমুলা,মাগনোলিয়ার রঙে রং মিলিয়েছে চেনাজানা গাঁদা ফুল।  মুগ্ধ করে ওক ও পাইনের শোভা।  উচ্চতা ৭২০০ ফুট। ফলে, সারা বছরই ঠান্ডা। শীতে শূন্যের নিচে নামে। কাছাকাছি শহর সোমবারিয়া। কেনাকাটা, বাজারহাট সেখানেই।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির পর্যটন মানচিত্রে সিকিম এই মুহূর্তে যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য ভূমিকায়।  সার্বিকভাবেই এখানকার মানুষ শিক্ষিত ও সচেতন। ওখরের মতো প্রত্যন্ত গ্রামের ছেলেমেয়েরাও কলকাতা, মুম্বই, দিল্লী ও ভারতের অন্যান্য বড় শহরে লেখাপড়া ও চাকরির সূত্রে বসবাস করছে। পুজোর ছুটিতে কয়েকজন তখন বাড়ি এসেছে। লাঞ্চের পর তাদের সঙ্গেই বেশ একটা আড্ডা জমে  উঠলো। একটু পর সেখানে যোগ দিলেন হোম স্টে-র কর্ণধার। কিছু পরে পরিবারের বাকিদের সঙ্গেও আলাপ হলো। ছেলেমেয়ে নিয়ে ভরপুর সংসার। সকলেই সব ধরনের কাজ করেন। হাসিখুশি মানুষগুলি অল্পে খুশি। আমিও ওদের সেই খুশির তালে মেতে উঠলাম।

Okhrey Travel রুক্ষতার মাঝে ফুটে থাকা ফুল

প্রথম দিন একতলায় ছিলাম। পরের দিন আমার থাকার ব্যাবস্থা হলো দোতলায়। কেন না, সেখান থেকে ভিউ আরও ভালো। তারপরের দিন চললাম বাড়ির মূল অংশ থেকে অনেকটা নিচের এক বাংলোতে। এটা আবার জঙ্গলের ভিতর। বুঝতেই পারছেন কি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। বিশেষত রাতে। ঝিঁঝিদের কনসার্ট, মাঝে মাঝে কুকুরের ডাক। এছাড়া চারপাশে অখন্ড নির্জনতা। প্রত্যেকবার আমার মালপত্র টানাটানির কাজটা হোম স্টে মালিকের ছেলেমেয়েরাই করলো, মহা উৎসাহে। খাওয়াদাওয়ার ক্ষেত্রে বলাই ছিল, ওঁদের যা রান্না হবে, তাই খাব। সেই মতোই রুটি -আলুভাজা বা পুরি-সবজি, টোস্ট-ওমলেট, ভাত-ডাল-সবজি-ডিম কারি বা চিকেন। পাহাড়ে মাছ পাওয়া যায় না। পদ যা-ই হোক, খাবারের পরিবেশন ভঙ্গী ভারী সুন্দর। তেমনই দৃষ্টিনন্দন ওদের গৃহসজ্জা।

দ্বিতীয় দিন থেকেই আবহাওয়ায় ঘন ঘন রং বদল শুরু। এই রোদ্দুরে মাখামাখি তো পরক্ষণে মেঘ। মেঘ আর কুয়াশা। সে কুয়াশাও এমন যে, একহাত দূরত্বে কি আছে দেখা যায় না। পুরোটাই উপভোগ করছিলাম, সেটা বলাই বাহুল্য। এরই সঙ্গে আপন খেয়ালে ঘুরে বেড়ানো। ঘুরতে ঘুরতেই একদিন পাহাড়ের উপরে এক  গুম্ফা দর্শনে গেলাম। নিয়ে গেল হোম স্টে পরিবারের এক কিশোর। সে পথও যথেষ্ট বিপদসঙ্কুল। জীবনে সেই প্রথম ও শেষ ট্রেকিং আমার। মনে পড়ে, সেই পাহাড়ী কিশোরের কথা। তার উৎসাহেই সেদিন ওই অসাধ্যসাধন। গুম্ফায় ওঠার পর মন এক অপার শান্তিতে ভরে গিয়েছিল। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ব্যস্ত নানা কাজে। পাঠগৃহে খুদে পড়ুয়ার দল। এরা হলো হবু সন্ন্যাসী। শান্ত, সমাহিত আর নিয়মনিষ্ঠ তারাও।

রুখু জমিতে স্কোয়াশ ও অন্যান্য শাকসবজি যা হয়, তা বৈচিত্রে না হলেও স্বাস্থ্যগুণে সমৃদ্ধ। সেই অত বছর আগেই দেখেছি ওরা জৈব সার ব্যবহার করে চাষে। মোটামুটি চাষবাসই জীবিকা গ্রামের মানুষের। চা বাগান আছে কিছু অধিবাসীর। এছাড়া পর্যটনেও ক্রমশ সম্ভাবনা বাড়ছে। জীবনযাপন সহজসরল। মূলত প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। তাই বেঁচে থাকাও সেই অনুষঙ্গে। ৩টে দিন কেটে যায় সেই অমল অনুষঙ্গের আবহে। ছুটি শেষ। এবার ফিরতে হবে কাজের দুনিয়ায়। দিনটা দুর্গাদশমী। মা ফিরবেন কৈলাশে। ছোট ছোট পুজো ঘিরে তারই আয়োজন। পথে যেতে যেতে সেইসব দেখি। শেয়ার গাড়িতে প্রথমে জোরথাং। সেখান থেকে শিলিগুড়ি হয়ে নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন। বিদায় ওখরে।

travelogue
Advertisment