Advertisment

রূপনারায়ণের কোলে গাদিয়ারায় এক দিন

গাদিয়ারা কলকাতার খুব কাছে হাওড়া জেলার এক গ্রাম। নদীই, বা বলা ভালো নদই, এর আকর্ষণের কেন্দ্রে। সকালে এসে বিকেলে ফিরে যাওয়া যায়।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
kolkata weekend getaway gadiara

নদীবক্ষে গোধূলির লাল। ছবি: লেখিকা

বিভিন্ন প্রান্ত থেকে চারজন মহিলা যদি একত্রিত হয়ে কোথাও যাওয়ার চেষ্টা করেন, তাহলে অনেক কিছু ঘটতে পারে। সবাই ঘড়ি ধরে পূর্ব নির্ধারিত সময়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছতে পারবেন না, এটা তো অবধারিত। একে অপরকে দোষারোপ। তারপরই একে অপরের সাজগোজ নিয়ে আগ্রহ প্রকাশ, ছুটকো মন্তব্য। আর সব মিলিয়ে, সব ভুলে এক অনাবিল আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাওয়া।

Advertisment

সে তো হলো। কিন্তু সমস্যা অন্যত্র। আগুপিছু করে আমরা সবাই যখন পৌঁছলাম, তখন বাসের টিকিটের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর। আমরা মানে আমার দুই সহকর্মী, একজন পারিবারিক পরিচিত। দেরি না করে একজন টিকিটের লাইনে দাঁড়িয়ে পড়লেন। তাঁকে সঙ্গ দিতে আর একজন, মানে আমি। বাকি দুজন এদিক ওদিক ঘুরে খাদ্য সংগ্রহে মেতে গেলেন। বাস স্ট্যান্ডে যেসব হাবিজাবি খাদ্য মেলে, তা নিয়ে ভ্রু কুঁচকে লাভ নেই। যাত্রাপথে ওই সবুজ ঝাল ঝাল মটর ভাজা, মিষ্টি বাদাম, ঝুরি ভাজা, টক-ঝাল-নোনতা-মিষ্টি লজেন্স না থাকলে দূরপাল্লার বাসে চড়ে বেড়াতে যাওয়ার কোনও মানেই হয় না।

অকুস্থল ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ড। আমরা চলেছি রূপনারায়ণের তীরে, অর্থাৎ গাদিয়ারা। সময়টা ঘোর বর্ষা। বর্ষায় নদীর পাড় উপচানো রূপ দর্শন আর রুপোলি ইলিশের সদ্ব্যবহার, এই দুইই রয়েছে এজেন্ডায়। তবে সবচেয়ে বড় এজেন্ডা, রুটিনের বাইরে যাওয়া। দলের দুজন সাংবাদিক, একজন সংবাদপত্র অফিসের সিস্টেম বিভাগের কর্মী, অন্যজন যোগ শিক্ষক। সবাই বেশ চাপে জীবন কাটান। অর্থাৎ একটু অক্সিজেন প্রবলভাবে প্রয়োজন। আরও বড় আকর্ষণ স্বাধীনতা। সবাই তো আমার মতো 'বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো' নয়! এঁরা তিন কন্যা সেই স্বাধীনতা প্রাপ্তির আনন্দে আপাতত বিভোর।

kolkata weekend getaways gadiara নদীর পাড় ধরে ছায়াঘেরা পথ। ছবি: লেখিকা

ঋতু বর্ষা হলেও আকাশ বেশ পরিষ্কার। বাস কলকাতা ছাড়িয়ে অনেকটা চলে এসেছে। হাইওয়েতে পড়ার পর থেকেই গতি বেশ দ্রুত। লোকজনের ওঠানামা চলছে। সুযোগ মতো হকাররাও বাসে উঠে সেরে নিচ্ছেন বিকিকিনি। দুপাশে শহরতলি, গ্রাম, ফসলের ক্ষেত, বাজার-হাট পেরিয়ে চলেছি আমরা। সূর্যদেব এই মুহূর্তে বেজায় ব্যস্ত। তাঁকে পৃথিবীর উল্টোদিকে আলো ফেলতে হবে। পৃথিবীর অবস্থান বদলাচ্ছে মহাকাশে। আমাদের আকাশ গোধূলির আলোয় লালে লাল।

তারপর কোনও একসময় সন্ধ্যা নামে। বাস থেমেছে একটি বেশ গঞ্জ এলাকায়। ব্যস্ত লোকজন, হাঁকডাক। একে একে জ্বলে উঠছে রাস্তার আলো। কোথা থেকে ভেসে আসে শঙ্খধ্বনি। কাছেই কোনও বাড়ি থেকে। কেউ সন্ধ্যারতি করছেন। বাংলার চিরন্তন এই ছবি, এই অনুভব বড় আপন এক যাপনে আপ্লুত করে। এরই মধ্যে ঠান্ডা হাওয়ার ঝাপটা। সচকিত সকলেই। কখন যেন ধূসর মেঘে ঢেকে গেছে আকাশ। এই রে, পৌঁছনোর আগেই বৃষ্টি?!

আরও পড়ুন: পাহাড়ের পথে যেতে হাজারো নদীর সঙ্গে দেখা

আমাদের বাসও থামল, আর বৃষ্টিও এল ঝেঁপে। দৌড়োদৌড়ি করে হোটেলের গেটে ঢুকি সবাই। ভাগ্য ভালো, হোটেলটা বাস স্ট্যান্ডের গায়েই। আর এখান থেকেই হাত ছোঁয়া দূরত্বে রূপনারায়ণ। ব্যাগপত্তর নিয়ে ছুটোছুটির মধ্যেই একবার সেদিকে চোখ যায়। গাঢ় অন্ধকার নদীর বুকে। তারই মধ্যে এদিক-ওদিক জ্বলছে জেলে নৌকোর মিটমিটে আলো। হোটেল কর্মীরা এগিয়ে এসে ব্যাগপত্তরের দায়িত্ব নেন। কিছুটা ভিজে গেছি সকলেই। ম্যানেজার বলেন, এন্ট্রি ইত্যাদি কাল করলেই হবে। অতএব আমরা আমাদের নির্ধারিত ঘরে।

বেশ বড় ঘর। আমরা দ্রুত ফ্রেশ হই। যেদিকে ঘরে ঢোকার দরজা, তার ঠিক বিপরীতে টানা গ্রিলে ঘেরা বারান্দা। ওই দিকেই নদী। সবাই ঠেলাঠেলি করে বারান্দায় যাই। হোটেলের উঁচু পাঁচিল বাধার সৃষ্টি করছে। নদীর গন্ধ পাচ্ছি। ঠান্ডা কোমল বাতাস আদরের হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। কিন্তু দর্শনের সুযোগ নেই। আমরা যতটুকু পাই, তাই চেটেপুটে নিই। এর মধ্যে অর্ডার মতো হাজির চা আর চিকেন পকোড়া। বেশ সুস্বাদু। বৃষ্টিভেজা আমেজ ঘিরে রেখেছে আমাদের। স্পেশাল আদা চা আর পকোড়া সহযোগে জমে যায় আড্ডা।

মেয়েদের কত যে না বলা কথা, কত যে গভীর ব্যথা! এই সন্ধ্যায় সেই সব কথা উড়ে উড়ে, ঘুরে ঘুরে চলে যায় রূপনারায়ণের কাছে। সে অবশ্য নদ, অর্থাৎ পুরুষ। আমাদের ভাষা সে বুঝল কিনা জানি না। তবে আমরা পরস্পরের সুখদুঃখ ভাগাভাগি করে নিলাম। সুখের ভাগে সুখ বাড়ে, দুঃখ কমে দুখের ভাগে। আড্ডার সঙ্গে গান, আবৃত্তি। চার দেওয়ালের মাঝে আমরা। একটু দূরে রূপনারায়ণ। বৃষ্টি থেমেছে অনেকক্ষণ। বৃষ্টির জল পেয়ে চঞ্চলা নদী। তার উচ্ছ্বসিত গুঞ্জন ভেসে আসছে। সন্ধ্যাটা দ্রুত কাটে। এবার ডিনারের অপেক্ষা। ডিনার অর্থাৎ ইলিশ!

kolkata weekend destination gadiara নদীর পথ গেছে বেঁকে। ছবি: লেখিকা

ডাল-আলু ভাজা, গন্ধ লেবু, ইলিশ ভাজা, ইলিশ ভাপা। মহিলা ব্রিগেডের খুশি দেখে কে? এমন নয় যে বাড়িতে আমরা ইলিশ খাই না। তবু, এখানে, এই নদীর শরীর ছুঁয়ে ইলিশ ভোজ, সত্যি এক না ভোলা অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে। আর রূপনারায়ণের ইলিশ তো বাঙালির খাদ্যরুচিতে চিরকাল ব্র্যান্ডেড। ডিনারের পরই ঘুম নয়, আগেই ঠিক হয়ে গেছে। এবার তাহলে গানের লড়াই। চারজন দু'দলে ভাগ হয়ে কিছুক্ষণ এই নিয়ে হুল্লোড় চলল। তারপর রাত বাড়ে, চরাচর শান্ত হয়, ক্লান্তি নামে চোখে।

পরদিন এক ঝকঝকে সকাল। খুব দ্রুত ব্রেকফাস্ট সেরে নিই আমরা, আলু পরোটা আর আচার সহযোগে। তারও আগে চা। সারা রাতের নিরবচ্ছিন্ন ঘুমের পর বেশ কড়া লিকারের দুধ চা খেয়ে তরতাজা হয়ে পড়ি সকলেই। এবার আক্ষরিক অর্থেই এক ছুটে নদীর কাছে। রবিবারের সকাল। ইতিমধ্যেই ভিড় জমেছে রূপনারায়ণের তীরে। গাদিয়ারা কলকাতার খুব কাছে হাওড়া জেলার এক গ্রাম। নদীই এর আকর্ষণের কেন্দ্রে। সকালে এসে বিকেলে ফিরে যাওয়া যায়। তেমন উইকএন্ড ট্যুরিস্টদের বেশ কয়েকটি দল ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ভিড় এড়িয়ে এগিয়ে যাই। গাড়ির রাস্তা সোজা গিয়ে শেষ হয়েছে নদীর পাড়ে। নদীর দিকে মুখ করে দাঁড়ালে ডানদিক, বাঁদিকে নদীর পাড় ধরে সোজা রাস্তা চলে গেছে। কাঁচা রাস্তা, তবে কাদা নেই। গাদিয়ারায় হুগলী, দামোদর আর রূপনারায়ণের সঙ্গম ঘটেছে। যার ফলে নদী এখানে অনেকটা চওড়া। এপার ওপার দেখা যায় না। ডানদিকের রাস্তা ওই সঙ্গমমুখী। ফলে এদিকটায় নদী সবচেয়ে বেশি চওড়া।

আরও পড়ুন: কালিম্পঙে ভিড় না করে চিবো-তে ফুলের জলসা দেখে আসুন

বাঁদিকে কোলাহল। ওদিকটায় সারি সারি হোটেল। পিকনিক স্পটগুলিও ওইদিকেই। পিকনিকের সিজন অর্থাৎ শীতে এলে এখানকার চেহারাই আলাদা। প্রচুর পিকনিক পার্টি। তখন মানুষের হইচই, উচ্চগ্রামের মিউজিক সিস্টেমের অত্যাচারে ব্যতিব্যস্ত নদী ও তীরবর্তী গ্রামগুলি। তবে এটাও ঠিক, এলাকার দরিদ্র মানুষের কিছু বাড়তি রোজগারের সুযোগ ঘটে তখনই। এখন এই ভরা বর্ষায় তত ভিড় না থাকলেও, লোকজন হোটেলগুলিকে ঘিরেই ওঠাবসা করে। তাই ওদিকেই ঘনীভূত জনতা।

আমরা স্বাভাবিকভাবেই উল্টোদিকে চলি। এদিকটায় পথ বেশ আদুরে ছায়াময়। দুষ্টু ছেলের দল জলে হুটোপুটি করছে। মাছ ধরা জাল নিয়ে ব্যস্ত জেলেরা। মাঝে মাঝে পাড়ে এসে লাগছে ব্যাপারী নৌকো। নদী পাড়ের অমল জীবন ছবি। আজ সূর্যদেব কিঞ্চিৎ কুপিত হয়েছেন মনে হয়। যেন বাদল মেঘকে আকাশের ধারেকাছে আসতে দেবেন না কিছুতেই। ফলে বেলা গড়াবার সঙ্গে সঙ্গে তেজ বাড়ে তাঁর। আমরা হোটেলে ফিরি।

বলার অপেক্ষা রাখে না, লাঞ্চেও ইলিশ। এবার মাছের ডিম আর তেল, সঙ্গে বেশ হৃষ্টপুষ্ট একটি কাঁচালঙ্কা। আর কালজিরে-কাঁচালঙ্কার পাতলা ঝোল। আজ দুপুরে ইলিশ ছাড়া আর কিছু নয়, বলাই ছিল। লাঞ্চের পর ছোট্ট ভাতঘুম। নিছক ঘুম অবশ্য নয়, হালকা আড্ডাও ছিল। একপ্রকার পিএনপিসি। চারজন মেয়ে এক জায়গায় হব আর একটু লোকের নিন্দে করব না, তা হয়? আসলে সবারই জীবনে নানা অপ্রাপ্তি, নানা অভিযোগ। কোনও না কোনও ভাবে আমরা সকলেই কর্মক্ষেত্রে বা ব্যক্তি জীবনে প্রতিকূল পরিস্থিতির শিকার হই। আর এইসবের পিছনে সব সময় কিছু প্রভাবশালী মুখোশধারী থাকে। এদের বিরুদ্ধে কিছু করার অক্ষমতার গ্লানি থেকেই কিছু না-বলা কথা আসে বেরিয়ে, যা নিছক নিন্দেমন্দ নয়।

kolkata weekend trip gadiara নদীই জীবন, নদীই জীবিকা। ছবি: লেখিকা

বিকেলে হোটেলের পিছন দিকের বাগানে কিছুক্ষণ বসলাম। রোদের তাপ একটু কমতেই আবার নদীমুখী। আর কাছাকাছি পৌঁছতেই মুগ্ধ বিস্ময়ে স্তব্ধ আমরা। পুরো আকাশ লালে লাল। গনগনে আগুনের গোলাটা এক্ষুনি ঝাঁপিয়ে পড়বে ঠিক ওইখানে, যেখানে তিনটি নদীর জল মিলেমিশে একাকার। বাকরোধ করা অবস্থাটা কাটতেই তরুণীকুলের ফটো সেশন শুরু হয়ে যায়। সেলফি ও একে অপরের ছবি তোলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে ওরা। আমি অস্তরাগে ভেসে যাই। নদীকে একটু কাছ থেকে দেখি। পাল তোলা নৌকোর সারি দূর পথে ভেসে যায়। কোথায় যাবে কে জানে। আমি শুধু মুগ্ধ হয়ে ঈশ্বরের ক্যানভাস দেখি। অস্তগামী সূর্যকে পটভূমিতে রেখে নৌকার সারি বেয়ে যায়। যত দূরে যায়, তত ছোট হতে থাকে তারা। তারপর এক সময় দৃষ্টিসীমার বাইরে।

তিনটি নদী, বলা উচিত নদনদী, মিলেছে এখানে। রূপনারায়ণ ও দামোদর হলো নদ। হুগলি হলো নদী। তিন নদনদীর মিলনস্থলটি বড়ই চমৎকার। জলের পৃথক পৃথক রং পরিষ্কার দৃশ্যমান। তবে এখান থেকে সেটা বোঝা সম্ভব নয়। যদিও এটা অনুভূত হয়, এখানে তিন জলধারার মিলন ঘটেছে। যতদূর চোখ যায়, শুধু জল আর জল। এই বর্ষায় তা বেড়ে বহুগুণ। বেশ উঁচু বাঁধানো পাড়ে জলরাশি ধাক্কা খেয়ে খেয়ে ফিরে যাচ্ছে নদীর গভীরে। এই যাতায়াতের ফলে বেশ একটা আন্দোলন তৈরি হয়েছে। তার ওপর দিয়ে যখন নৌকোগুলি যাচ্ছে, তারাও দুলছে ওই দোলায়। সব মিলিয়ে প্রকৃতির এক প্রাণচঞ্চল ছবি যেন আঁকা হয়েছে। মুগ্ধ হয়ে দেখি সেই ছবি।

পথ চলে গেছে গ্রামের ভিতর। এক নিটোল গ্রাম জীবনের ছবি এখন আমার দৃষ্টিপথে। মাটির বাড়ি। টিন বা খড়ের চাল। দাওয়ায় কাপড়ের দোলনায় শায়িত শিশু। মহিলারা গৃহকর্মে ব্যস্ত। পুরুষদের মধ্যে কিছু আলস্য আজ। রবিবার বলেই বোধহয়। যাঁদের জমি আছে, তাঁরা মূলত চাষবাসের কাজে লেগে থাকেন। ওঁদের ছুটিছাটা নেই বললেই চলে। তবে, মোটামুটি সন্ধ্যার মধ্যে ফিরে আসেন সকলেই। মাছ ধরা পেশাতেও আছেন বহু মানুষ। তাঁরা আবার রাত থাকতে বেরিয়ে পড়েন। কেউ কেউ মাঝির কাজ করেন। বলা বাহুল্য, এই নদী তাঁদের সকলেরই জীবন ও জীবিকার উৎস।

kolkata weekend tours gadiara অবাধ রূপনারায়ণ। ছবি: লেখিকা

জল পিপাসা পেয়েছিল। একটু এগিয়ে সামনের বাড়িটিতে ঢুকি। নিকোনো উঠোন। কোথাও কোনও জঞ্জাল নেই। একজন মহিলা হাসিমুখে এগিয়ে আসেন। জল চাইতেই ছুটে ঘরের ভিতর। তারপর ঝকঝকে পিতলের গ্লাসে জল, আবার ছোট এক বাটিতে একটু গুড়। এমন মধুর আপ্যায়নে পরান আকুল হবে না? অনুভব করলাম, এই আমার জন্মভূমি। গ্রামের সরল মানুষের মধ্যেই অধিষ্ঠান করেন ভারতমাতা।

ওদের ফটো সেশন শেষ। নদীর সঙ্গে একাত্ম হয়ে পড়ি সকলেই। কে বলে, এখানে একবেলার বেশি থাকা যায় না? রূপনারায়ণ দু'হাত ভরে দিয়েছে আমাদের। সকাল, সন্ধ্যা ভিন্ন ভিন্ন রূপ তার। আমরা দু'চোখ ভরে সেই রূপসুধা পান করেছি। দেখেছি নদীপারের মানুষের জীবন। তাদের দিনযাপনের লড়াই প্রকৃতির মাঝে, যা এই নদীকে ঘিরেই আবর্তিত। সন্ধ্যা নামে একটু একটু করে। জল ছলাৎ ছলাৎ করে আছড়ে পড়ে পাড় ভাঙে। যেন জানান দেয় তার উপস্থিতি।

আরও পড়ুন: খোশবাগ, বর্ণময় মুর্শিদাবাদের এক বেদনামুখর গাথাকাব্য

হোটেলের বাগানেই আমাদের বসার ব্যবস্থা করেন ম্যানেজার। ওখানে বসেই কফি আর বিস্কুট খেতে খেতে আমাদের এবারের যাত্রার পর্যালোচনা শুরু হয়ে যায়। আমার তো পায়ের তলায় সর্ষে। এই গাদিয়ারাতেও আগে এসেছি। ওদের প্রথমবার। স্বাভাবিকভাবেই আপ্লুত। এরই মধ্যে হঠাৎ মেঘের গুরুগুরু। তারারা পড়েছে ঢাকা। কোনও এক অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণে আমরা সকলেই যাই নদীর পাড়ে। দূর থেকে মেঘের দল বৃষ্টি হয়ে আসছে ছুটে। নদীর সে কী আনন্দ! উথাল পাথাল হয়ে ওঠে সে। আকাশ বুঝি এক্ষুণি নেমে আসবে তার বুকে। বড় বড় জলের ফোঁটা ভিজিয়ে দেয় আমাদের। অগত্যা ফিরতেই হয় হোটেলের ঘরে।

ডিনারে আজ চাইনিজ। একটু মুখ বদলের ইচ্ছে সবারই। খেয়েদেয়ে চটজলদি বিছানায়। কাল আমাদের ফেরা। ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচিরমিচির শব্দে। দ্রুত উঠে পড়া। তৈরি হয়ে,প্যাকিং করে আর একবার রূপনারায়ণের কাছে। আবার কবে দেখব তাকে কে জানে? মন খারাপ সকলেরই। নদীও আজ শান্ত। তারও মন আকুল আমাদের জন্য? হয়তো। হোটেলে ফিরে স্যান্ডউইচ ও কফি খেয়ে বাস স্ট্যান্ড। বাসে উঠে যে যার নির্ধারিত সিটে। আপনাতে আপনি মগ্ন সবাই। বাস ছেড়ে দেয়। ফেরার যাত্রা শুরু। পথ আমাদের নিয়ে যাবে কাজের শহরে, রুটিনের জীবনে।

কীভাবে যাবেন: ধর্মতলা থেকে গাদিয়ারা সিটিসি বাস সার্ভিস আছে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মোটামুটি এক ঘন্টা পর পর এক্সপ্রেস বাস যায়। ভাড়া আয়ত্তের মধ্যেই। গাড়িতেও যেতে পারেন। প্রচুর প্রাইভেট কার সার্ভিস কোম্পানি আছে, ইন্টারনেটে যার খোঁজ পাবেন।
কোথায় থাকবেন: হোটেল চলন্তিকা। একেবারে বাস স্ট্যান্ডের গায়েই। এদের ৩৪টি ঘর রয়েছে। অর্থাৎ বড় টিম নিয়েও যাওয়া যেতে পারে।
খরচাপাতি: নন এসি ডাবল বেড প্রিমিয়াম ১,২৫০ টাকা, এসি ডাবল বেড ১,৮০০ টাকা। নন এসি ট্রিপল বেড ১,৫০০ টাকা, এসি ট্রিপল বেড ২,২০০ টাকা, জিএসটি ১২ শতাংশ। এছাড়াও রূপনারায়াণের পাড় ধরে বেশ কয়েকটি হোটেল ও রিসর্ট আছে। খরচ উনিশ-বিশ। রাজ্য সরকারের পর্যটন বিভাগের একটি অতিথিশালাও আছে। যোগাযোগ, ৬এ সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার, 9564775670, 033 66077252 (হোটেল চলন্তিকা)
মনে রাখুন: টর্চ এবং জরুরি প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং ফার্স্ট এড বক্স সঙ্গে রাখতে হবে।

tourism tourism industry
Advertisment