প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে ২২৬ জন নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। এঁদের মধ্যে ১৭২ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ৫৪ জন নন-গ্র্যাজুয়েট। সম্প্রতি এই ঘোষণা করেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ।
সমস্যা হলো, একইসঙ্গে আগামী ৩১ মার্চের মধ্যে চাকরি যেতে চলেছে ত্রিপুরার ১০,২৩২ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার, যাঁদের নিয়োগ প্রক্রিয়াকে ত্রুটিপূর্ণ বলে মত দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
রাজধানী আগরতলার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের রতনলালবাবু বলেন, নব্যনিযুক্ত শিক্ষক-শিক্ষিকারা বিভিন্ন জেলায় পোস্টিং পাবেন - ৫৭ জন ধলাইয়ে, ৩০ জন উত্তর ত্রিপুরায়, ১৮ জন সিপাহিজলায়, ৩৮ জন দক্ষিণ ত্রিপুরায়, ২৫ জন গোমতীতে, ৪৯ জন উনাকোটিতে, এবং খোয়াই ও পশ্চিম ত্রিপুরায় তিনজন করে। মন্ত্রী আরও বলেন যে সমস্ত নতুন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ক্ষেত্রে গ্রামাঞ্চলে পোস্টিংকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে রাজ্য সরকার।
আরও পড়ুন: ত্রিপুরায় এনপিআর-এর তোড়জোড়, প্রক্রিয়া সফল হবে না, বলছেন বিরোধীরা
২০১৮ সালের মার্চ মাসে ক্ষমতায় আসার পর থেকে এই নিয়ে ১,২৯৬ জন গ্র্যাজুয়েট এবং ১৩২ জন পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়োগ করল ত্রিপুরার বিজেপি-আইপিএফটি সরকার।
সমস্ত নিয়োগই করা হয়েছে রাজ্যের টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট (TET) বোর্ড এবং টিচার্স রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে।
যে ১০,৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা চাকরি খোয়াতে চলেছেন, তাঁদের ২০১০ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধাপে নিয়োগ করা হয়। ২০১৪ সালে বিষয়টি আদালতে পৌঁছয়। হাইকোর্ট প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকার নিয়োগ বাতিল করে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে "অসাংবিধানিক" ঘোষণা করে। এই রায়ই ২০১৭ সালের মার্চে বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।
সেসময় বলা হয়, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে ৩১ ডিসেম্বর, ২০১৭-র মধ্যে কাজ ছেড়ে দিতে হবে ওইসব শিক্ষক-শিক্ষিকাকে, যার পর তাঁদের ফের 'অ্যাড-হক' বা অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। গত বছরের নভেম্বর মাসে তাঁদের মার্চ ২০২০ পর্যন্ত এককালীন এক্সটেনশন প্রদান করে সুপ্রিম কোর্ট।
আদালতের রায় ঘোষিত হওয়ার পর রাজ্যের তৎকালীন বামফ্রন্ট সরকার উদ্যোগ নিয়েছিল কিছু শিক্ষক-শিক্ষিকাকে শিক্ষা অথবা সমাজকল্যাণ দফতরে নন-টিচিং পদে নিয়োগ করার। তবে অধিকাংশ শিক্ষক-শিক্ষিকাই এই প্রস্তাবে অসম্মত হন। তৎকালীন প্রধান বিরোধী দল বিজেপি প্রতিশ্রুতি দেয় "দীর্ঘমেয়াদী" সমাধানের, কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয় নি, এই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পথে নেমেছেন ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা।
চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি রতনলালবাবু জানান, ওই ১০,৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকার মধ্যে যাঁরা ৩১ মার্চ, ২০২০ পর্যন্ত বিকল্প চাকরি পাচ্ছেন না, তাঁদের যাতে পুনর্বহাল করা যায়, সেই উদ্দেশ্যে মোট ১১,৮০০ টি অতিরিক্ত পদ সৃষ্টি করতে চলেছে রাজ্য সরকার। তবে এগুলি সবই চুক্তিভিত্তিক পদ হবে বলে জানান তিনি।