Advertisment

এই পরিযায়ী শ্রমিকরা নিজের রাজ্যে ফিরতে চান না

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ মাসের গোড়ায় জানিয়েছিলেন তাঁর সরকার রাজ্যের ৩৩ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে নিজেদের রাজ্যে ফেরানোর জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Migrant Labour in tripura

এখানে কাজ কম, তবু নিজের রাজ্যে ফিরতে নারাজ

পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরার জন্য সরকার ট্রেন-বাসের ব্যবস্থা করছে বটে, কিন্তু ত্রিপুরায় কর্মরত বেশ কিছু শ্রমিক অন্যরকম ভাবছেন। বিহারের একটি বড়সড় শ্রমিকগোষ্ঠী বেশ কয়েক বছর আগে এখানে এসেছিল লোডারের কাজ করতে। তাঁরা বলছেন লকডাউন শিথিল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তাঁরা কাজ পেতে শুরু করেছেন। তাঁরা অতিমারী শেষ হওয়া পর্যন্ত এখানেই থাকতে চান। তাঁদের বক্তব্য, দেশে ফিরলে তাঁদের কাজ থাকবে না, টাকা থাকবে না, এমনকি সাহায্য করার মত কেউও থাকবে না।

Advertisment

আগরতলার বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংস্থায় লোডারদের লেবার সর্দার হিসেবে কাজ করেন বাবলু কুমার যাদব। গত ২০ বছর লোডারের কাজ করছেন তিনি এখানে। বিহারের খাগাড়িয়া জেলার বাবলু বললেন লকডাউনের জন্য তাঁদের অসুবিধা হলেও সরকার কিছু সাহায্য করেছে। “আমরা যদি কাজ পাই, আমরা থেকে যাব। মালিকদের ব্যবস্থা করে দেওয়া একটা বাড়িতে আমরা ১৪-১৫ জন একসঙ্গে থাকি। আমরা মাস্ক পরছি, সোশাল ডিসট্যান্স মানছি। কিন্তু যতদিন না এই ভাইরাস যাচ্ছে আমরা এখানেই থাকতে চাই।”

লকডাউনে বাংলার রেড জোন তিন ভাগ করে ছাড় ঘোষণা মমতার

তিনি বলেন, বিহারে ফিরে লাভ নেই কারণ করোনা পরিস্থিতি সেখানে আরও খারাপ এবং কাজের কোনও সুযোগ নেই। “ত্রিপুরায় বিএসএফের মধ্যে রোগ ছড়ানোয় আমাদের কয়েকজন ভয় পেয়েছে। কিন্তু আমরা সবাই নিরাপদে আছি। কাজ পেলে আমরা ফিরতে চাই না।"

Migrant Labour in tripura এখানে স্বাস্থ্যবিধি পালন করছেন ওঁরা

বিহারের আরেকজন লোডার ব্যাস যাদব তিন বছর আগে কাজের খোঁজে এখানে আসেন। কাজের দিনে প্রতিদিন ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার করেন তিনি। কিন্তু লকডাউনের পর থেকে ২০০ টাকার বেশি রোজগার নেই। তবে পরিস্থিতি ভাল না হওয়া পর্যন্ত বাড়িভাড়ার ২০০০ টাকা দিতে হবে না বলে দিয়েছেন বাড়িওয়ালা।

ফলে ব্যাস চাইছেন মহামারী শেষ হোক, তিনি কাজে ফিরুব। তিনি বললেন, “আমি কম রোজগার করছি, কিন্তু কিছু তো করছি। বাড়ি ফিরে কী করব? এখানে তবু কিছু কাজ রয়েছে। আমরা চাই করোনাভাইরাস চলে যাক আর আমরা নিজেদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরি।”

উনিশ বছরেরে সানি দয়াল বিহারের ভাগলপুর থেকে এসেছেন। তিনি, ৬২ বছরের সন্তোষ যাদব এবং আরও অনেকে আগরতলার কামান চৌহানিতে এবং মহারাজগঞ্জ বাজারে মাল তোলা-নামানোর কাজ করেন। তাঁদের গলাতেও একই সুর। “কাজ পেলে এখানেই থাকব আমরা। আমরা ফিরতে চাই না, ট্রেনে বা রাস্তায় অন্য কোথাও সংক্রমণের ভয় আছে।”

এই কুলিদের অধিকাংশেরই শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন নিয়ে ভারতীয় রেলের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বাধ্যতামূলক পরীক্ষার কথা অজানা।

মহারাজগঞ্জের তীর্থময়ী ট্রেডার্স প্রাইভেট লিমিটেডের ম্যানেজার তাপস দে এই ধরনের কর্মীদের নিয়োগের দায়িত্বে থাকেন।

করোনা ভয়- দুদিনের যাত্রাশেষে বাড়ি পৌঁছে ঠাঁই মিলল না, তাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী

প্রতিবেদককে তিনি জানান, “আমরা ওদের মাস্ক, হ্যান্ড ওয়াশ দিচ্ছি এবং যাতে সোশাল ডিস্ট্যান্সিং মানা যায় এরকম থাকার জায়গাও দিচ্ছি। আমরা ওদের বলেছিলাম ফিরতে চাইলে ওরা চলে যেতে পারে, কিন্তু ওরাই থাকতে চেয়েছে।”

কামান চৌমহনির আরেক ব্যবসায়ী গোপাল চন্দ্র সাহা বলেছেন, এখন খদ্দের অল্প। বিক্রিও কম, ফলে কুলিও কম লাগছে।

ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব এ মাসের গোড়ায় জানিয়েছিলেন তাঁর সরকার রাজ্যের ৩৩ হাজার পরিযায়ী শ্রমিককে নিজেদের রাজ্যে ফেরানোর জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করবে। এর জন্য সরকারের ২.৫ কোটি টাকা খরচ হবে যা মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

অন্যদিকে সরকারি খতিয়ান অনুসারে ভারতের বিভিন্ন জায়গায় ৩৭৭২১ জন ত্রিপুরাবাসী আটকে রয়েছেন। এঁদের মধ্যে ১২৭৮২ জন কর্নাটকে, ৮১২৯ জন তামিলনাড়ুতে, ৬১৭৪ জন পশ্চিমবঙ্গে রয়েছেন। ১৪৭০জন আসামে এবং ১৩৮২ জন তেলেঙ্গানায় আটকে রয়েছেন।

আজই রাতে কর্নাটক থেকে প্রথম যাত্রীবাহী ট্রেন আগরতলা পৌঁছবে, তামিলনাড়ু থেকে আরেকটি ট্রেন পৌঁছবে ১৫ মে।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tripura coronavirus Lockdown
Advertisment