ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পদে বসা ইস্তক বিতর্ক আর বিপ্লব দেব সমার্থক হয়েছেন। এবার ফের একবার আলটপকা মন্তব্য করে বিজেপি নেতৃত্বের বিড়ম্বনা বাড়ালেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। এমনটা কানাঘুষো গেরুয়া শিবিরের অন্দরে। তাঁর সাম্প্রতিক মন্তব্য, ‘শ্রীলঙ্কা, নেপালেও সরকার গড়ার পরিকল্পনা রয়েছে অমিত শাহের। এই পরিকল্পনার কথা খোদ অমিতই তাঁকে জানিয়েছিলেন।‘ প্রসঙ্গ ছিল দেশব্যাপী বিজেপির প্রভাব বিস্তার নিয়ে আলোচনা। আর সেই আলোচনায় অংশ নিয়ে আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে এই মন্তব্য করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী।
বিপ্লবের দাবি, ‘অমিত শাহ যখন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি হিসাবে ত্রিপুরা এসেছিলেন। সে সময় রাজ্য নেতাদের সঙ্গে এক চা-চক্রে এ কথা অমিত তাঁকে জানিয়েছিলেন।‘ তিনি জানান, রাজ্যের অতিথি নিবাসে আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা চলছিল। তখন বিজেপির উত্তর-পূর্বের আঞ্চলিক সম্পাদক অজয় জামওয়াল বলেন, ভারতের প্রায় সব রাজ্যেই সরকার গড়েছে বিজেপি। এই কথার জবাবে শাহ বলেছিলেন এখনও শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল বাকি। ওই দুই দেশে আমাদের দলকে ছড়িয়ে দিতে হবে। জিতে সরকার গ়ড়তে হবে।
বিজেপির বিকাশে অমিত শাহের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কমিউনিস্টরা দাবি করতেন তাঁরা বিশ্বের সবথেকে বড় দল। এই রেকর্ড অমিত শাহ ভেঙেছেন। বিজেপিকে বিশ্বের সবথেকে বড় দল বানিয়েছেন।’ বিজেপিকে দীনদয়াল উপাধ্যায়ের দল, শ্যামাপ্রসাদের দল বলেও অভিহিত করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী। দেশের বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘বিজেপি কেরলে ক্ষমতায় এলে প্রতি ৫ বছরে সরকার বদলানোর ধরন শেষ হবে।‘ এমনকি, পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতা থেকে মমতা বন্দোপাধ্যায় সরে যাবেন, বলেও দাবি তাঁর। পাশাপাশি বিজেপির কাছে মরুভূমি হিসেবে পরিচিত তামিলনাড়ুতে পদ্ম ফোটানোর স্বপ্নও দেখছেন এই মুখ্যমন্ত্রী।
বিপ্লবের এই মন্তব্য নিয়ে সমালোচনায় সরব সিপিএম-কংগ্রেস। রাজ্যের দুই বিরোধী দলের দাবি, ‘অনেক দিন ধরেই নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কাকে যুক্ত করে হিন্দুরাষ্ট্র গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে আরএসএসের।‘ সিপিএম নেতা বাদল চৌধুরীর মতে, ‘সেই গোপন কর্মসূচির কথাই বিপ্লববাবুর মুখ দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। এতে পড়শি দেশের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হবে।’ কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তাপস দে বলেন, ‘পড়শিদের সঙ্গে এমনিতেই ভারতের সম্পর্ক ভাল নেই। তারপরে এমন মন্তব্য ভারতকে বিশ্বের দরবারে আগ্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে তুলে ধরবে।’’
বিগত বছরগুলিতে একের পর এক দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছেন বিপ্লব। মহাভারতের যুগেও ইন্টারনেট ছিল বলে দাবি করেছিলেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ নোবেল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন— এ ধরনের প্রচুর কথা অতীতে বলেছেন তিনি। সেই তালিকায় যোগ হল আরও এক বিতর্ক।