Advertisment

ত্রিপুরায় ব্রু পুনর্বাসন সংকটের মুখে

ব্রুদের পুনর্বাসনের বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে তাঁদের উত্তর ত্রিপুরায় পাঁচটি, ধলাই জেলায় তিনটি ও পশ্চিম, সিপাহিজলা এবং খোয়াই জেলায় একটি করে জায়গায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Bru in Tripura

মিজোরামের ব্রু পরিযায়ীরা গত ২৩ বছর ধরে উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে বসবাস করছেন

ত্রিপুরায় ব্রু জনজাতির পুনর্বাসন বিপদের মুখে। দুটি মিজো ও বাঙালি সংস্থা জানিয়েছে সরকার যদি ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে ব্রু পরিযায়ীদের স্থায়ী বাসস্থান তৈরির পরিকল্পনা ত্যাগ না করে, তাহলে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ডাকবে এবং হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করবে। মিজোরামের ব্রু পরিযায়ীরা গত ২৩ বছর ধরে উত্তর ত্রিপুরার কাঞ্চনপুরে বসবাস করছেন।

Advertisment

এ বছরের জানুয়ারি মাসে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে পুনর্বাসন চুক্তি অনুসারে ১৯৯৭ সাল থেকে ত্রিপুরায় বসবাসকারী ৩২ হাজার ব্রু পরিযায়ীকে স্থায়ী বসবাসের বন্দোবস্ত করতে হবে। সরকার এঁদের জন্য এখনও পর্যন্ত ১২টি পুনর্বাসনের জায়গা স্থির করেছে।

মানু চাইলেংটা এরকমই একটি প্রস্তাবিত জায়গা। রবিবার সরকারি আধিকারিক ও ব্রু প্রতিনিধিদের একটি দল সেখানে পরিদর্শনে যাওয়ার পথে বিক্ষোভ দেখায় মিজো কনভেনশন ও নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ।

ব্রুদের পুনর্বাসনের বর্তমান পরিকল্পনা অনুসারে তাঁদের উত্তর ত্রিপুরায় পাঁচটি, ধলাই জেলায় তিনটি ও পশ্চিম, সিপাহিজলা এবং খোয়াই জেলায় একটি করে জায়গায় বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা।

নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চের সভাপতি রঞ্জিত নাথের দাবি কাঞ্চনপুরে ৬০ শতাংশ ব্রু পরিযায়ীদের পুনর্বাসন দেওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে, যা কার্যকর হবে স্থানীয় মানুষ অসুবিধেয় পড়বেন।

র়ঞ্জিত নাথ বলেছেন, “ব্রুদের মিজোরাম ফেরত পাঠানোর দাবিতে আমরা অনড়। কিন্তু সরকারের পুনর্বাসন পরিকল্পনা অনুসারে ৬০ শতাংশ ব্রু কাঞ্চনপুরে থাকবে, এদিকে ব্রু-রা যে শয়ে শয়ে বাঙালি ও মিজো পরিবারকে উৎখাত করেছে, সে নিয়ে কোনও শব্দও খরচ করা হয় না। এ জিনিস চলতে পারে না।" মিজো কনভেনশনের সাধারণ সম্পাদক ডক্টর জাইরেমচিয়ামা পাচুআউ বলেছেন, "কাঞ্চনপুরের ব্রু পুনর্বাসন ঘটলে সেখানে জমির সংকট দেখা দেবে।”

তিনি বলেন, “সরকার খোলাখুলি ব্রু পরিযায়ীদের পক্ষে দাঁড়িয়েছে।”

এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে কাঞ্চনপুরের মহকুমা ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনি চন্দ্রণ জানিয়েছেন, তিনি এই বিক্ষোভের বিষয়ে রেভিনিউ সেক্রেটারিকে জানিয়ে পরবর্তী কী পজক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে সে নিয়ে পরামর্শ চেয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিজের চিঠির কোনও জবাব তিনি এখনও পাননি। তবে সরকার যদি পুনর্বাসন পরিকল্পনা নিয়ে অনড় থাকে তাহলে সেই মোতাবেক কাজ এগোবে বলেই জানিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে মিজোরাম ব্রু ডিসপ্লেসড পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ব্রুনো মিশা বলেন, যে বিক্ষোভ নাগরিক সুরক্ষা মঞ্চ ও মিজো কনভেনশন দেখিয়েছে তা দুর্ভাগ্যজনক ও মানবাধিকার বিরোধী। তিনি বলেন, “এই দুই সংগঠন বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি করে চাইছে। আমরা গত দুদশকের বেশি সময় ধরে সমস্ত সম্প্রদায়ের সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করে আসছি। আমাদের বিরুদ্ধে এসব বিক্ষেোভ দুর্ভাগ্যজনক, কারণ এ পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে, আমরা নই।”

এ বছরের জানুয়ারি মাসে ভারত সরকার একটু চতুর্পাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যাতে ৩২ হাজার ব্রু পরিযায়ীদের ত্রিপুরায় পুনর্বাসন দেওয়ার কথা স্থির হয়। এঁরা ১৯৯৭ সালের অক্টোবর মাস থেকে ৬টি উদ্বাস্তু শিবিরে বাস করছেন। কেন্দ্রীয় সরকার এঁদের পুনর্বাসনের জন্য ৬০০ কোটি টাকা মঞ্জুর করেছে।

২০১৮ সালে একই পক্ষদের নিয়ে এক চুক্তি হয়, যাতে বলা হয়েছিল এঁদের সকলকে মিজোরামে ফেরত পাঠানো হবে। তবে অধিকাংশ পরিযায়ীরা সে কথা মানেননি। আশঙ্কা করা হয়েছিল তাঁরা ফিরলে গৃহযুদ্ধ শুরু হবে।

১৯৯৭ সালে ৩৭ হাজার ব্রু এই কারণেই মিজোরাম ছেড়ে পালিয়ে আসেন। তাঁদের মধ্যে ৫০০০ জনের মত ফিরে গিয়েছেন।

Advertisment