Advertisment

করোনা ভয়- দুদিনের যাত্রাশেষে বাড়ি পৌঁছে ঠাঁই মিলল না, তাড়িয়ে দিলেন স্ত্রী

বিস্মিত গোবিন্দ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্ত্রী, সন্তানেরা আমাকে চলে যেতে বলছে। আমি কী বলব।”

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Tripura Covid

গোবিন্দকে গভীর রাতে আগরতলার কাছে একটি ছোট কোয়ারান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়

টানা দু দিন গাড়িতে কাটিয়ে আসামের সিলপাথার থেকে নিজের টাকায় আগরতলায় বাড়ি পৌঁছলেন গোবিন্দ দেবনাথ। কিন্তু সেখানেই তাঁর ভোগান্তির ইতি ঘটল না। স্ত্রী ও বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা তাঁকে বাড়িতে ঢুকতেই দিলেন না। অথচ রাজ্যে প্রবেশের মুখে তাঁর করোনাভাইরাস পরীক্ষা নেগেটিভই এসেছিল। বাড়ির লোকের বক্তব্য রিপোর্ট যতই নেগেটিভ হোত, তাঁরা কমপ্লেক্সের সকলের স্বাস্থ্যের ব্যাপারে ঝুঁকি নিতে রাজি নন। গোবিন্দের ঘটনা দেখিয়ে দিল, কতটা কুসংস্কার, সংবদেনহীনতা এবং একঘরে করার তীব্র বোধ করোনাভাইরাস ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে।

Advertisment

৩৭ বছরের গোবিন্দ দিনমজুর। তিনি ও আরও কয়েকজন আগরতলার জয়নগর এলাকায় দরিদ্রদের জন্য আবাসন প্রকল্পে থাকার সুযোগ পান। সেখানে তিনি একটি ছোট ফ্ল্যাটে থাকেন নিজের স্ত্রী মাম্পি দেবনাথ ও আত্মীয়দের সঙ্গে। ফ্ল্যাটটি তাঁর শাশুড়ি ভানু দাসের নামে।

“দু বছরের আগে ভ্যাকসিনের সম্ভাবনা নেই”

মার্চ মাসে জাতীয় স্তরে লকডাউন শুরু হওয়ার অল্প কিছুদিন আগে গোবিন্দ তাঁরা শ্যালককে দেখতে যান আসামের সিলপাথারে। তাঁর শ্বশুরও তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তিন পর্যায়ের লকডাউনে অপেক্ষা করার সময়ে তিনি শেষ পর্যন্ত এক গাড়ির সন্ধান পান। চুক্তি হয়, বাড়ির দোরগোড়া পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার জন্য ৩০ হাজার টাকা দিতে হবে। ত্রিপুরা-আসাম রাজ্য সীমান্তের প্রথম চেকপোস্টে চুরাইবাড়ির কাছে গোবিন্দকে কোয়ারান্টিনে রাখা হয়।

নিয়ম অনুসারে তাঁর বাধ্যতামূলক কোভিড-১৯ পরীক্ষা হয় সেখানে, কোয়ারান্টিনে থাকতে হয় এক দিন। টেস্টে কোভিড নেগেটিভ আসার পরে রবিবার রাতে বাড়ি পৌঁছে দুঃস্বপ্নের মত ঘটনার মুখোমুখি হতে হয় তাঁকে।

বিস্মিত গোবিন্দ সাংবাদিকদের বলেন, “আমার স্ত্রী, সন্তানেরা আমাকে চলে যেতে বলছে। আমি কী বলব।”

তবে তিনি মনে করেন, কমপ্লেক্সের অন্যদের চাপেই এমন ব্যবহার করেছেন তাঁর স্ত্রী। “ওরা হয়ত ওকে বিরক্ত করে থাকবে। ও নিশ্চয়ই চায় না আমি চলে যাই। আমার মনে হয় আমার স্ত্রী ভয় পেয়েছিল, আমার বাচ্চারা কাঁদছিল। আমি জানি না কী বলব।”

অন্যদিকে স্বামী ও প্রতিবেশীদের মধ্যে পড়ে জর্জরিত তাঁর স্ত্রী। তিনি বলছেন তাঁর স্বামীর করোনাভাইরাস না থাকা সত্ত্বেও তিনি তাকে বাড়িতে ঢুকতে দিতে পারছেন না, কারণ তাহলে কমপ্লেক্সের অন্যরা অস্বস্তিতে পড়বে। তাঁর উপর কোনও চাপ রয়েছে কিনা সে নিয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে, সে কথা তিনি অস্বীকার করেন এবং বলেন, নিজের মেয়ে ও পরিবারকে সম্ভাব্য অসুস্থতার হাত থেকে বাঁচাতে চান তিনি।

খাবার-কম্বল সঙ্গে নিয়ে আসবেন, যাত্রীদের জানাল রেল

তিনি বলেন, “আমার স্বামী আসাম গিয়েছিল। আমি বলেছিলাম এখন না ফিরতে তা সত্ত্বেও ফিরেছে। আমি এই কমপ্লেক্সে মায়ের ফ্ল্যাটে থাকি। এখানে কী করে ওকে থাকতে দেব! আমার ছোট মেয়ে রয়েছে, আমার মা অসুস্থ। কদিন আগে অপারেশন হয়েছে। আমি ওকে ১৪ দিন বাড়িতে রাখতে পারব না। আমায় বাড়ির কাজ করতে হয়। ওকে কোনওয় কোয়ারান্টিন সেন্টারে নিয়ে য়ান। ১৪ দিন সেখানে থেকে যা চিকিৎসা করার করিয়ে ও এখানে ফিরে আসতে পারে।” কথোপকথনের সময়ে জড়ো হওয়া কিছু প্রতিবেশীও এ কথায় সমর্থন জানালেন।

কমপ্লেক্সের বাসিন্দা দুলিয়া সাহা জানালেন, “ও আসাম গিয়েছিল। আমরা জানি না সেখানে কোথায় থাকত। ওর সঙ্গে কারা সফর করেছে তাও জানি না। পুলিশ এসে ওকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেযেছ যদি টেস্ট নেগেটিভও হয়, তাহলে পরের ১৪ দিনের মধ্যে যদি রোগের উপসর্গ দেখা যায়, তাহলে কী হবে। আমরা চাই ও দু সপ্তাহ কোয়ারান্টিন সেন্টারে থেকে তারপর ফিরুক।”

তিনি ৪০ কিলোমিটার দূরের গোমতী জেলার এক পরিবারের কথা বললেন, যারা চেন্নাই থেকে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে বাড়ি এসেছিল। তার কয়েকদিন আগেই শিলিগুড়িতে ড্রাইভারের করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। তাঁর প্রশ্ন গোবিন্দের ক্ষেত্রেও যে তেমনটা হবে না, সে কথা কে বলতে পারে।

পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার হেলথ সারভেইল্যান্স অফিসার ডক্টর সঙ্গীতা চক্রবর্তী বলেন, ওই কমপ্লেক্সের বাসিন্দারা গোবিন্দকে নিজের ফ্ল্যাটে প্রবেশে বাধা দেওয়ার সময়ে একসঙ্গে জড়ো হয়ে সোশাল ডিসট্যান্স মানেননি এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিও লঙ্ঘন করেছেন।

"পুলিশ ওঁদের বোঝানোর চেষ্টা করেছিল কিন্তু ওঁরা গোঁয়ার্তুমি করেছেন। আমাদের গোবিন্দকে কোয়ারান্টিন সেন্টারে রাখা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।"

ওই আধিকারিক আরও বলেন, শহুরে দরিদ্রদের জন্য তৈরি আবাসনের বাসিন্দারা করোনাভাইরাস টেস্টের পদ্ধতির বিষয়টা বুঝতেই চাননা। তিনি আরও বলেন, “ওই বাসিন্দাদের মধ্যে কেউ কেউ নেশাগ্রস্ত অবস্থায় ছিল এবং নিজের বাড়ির নিচে দাঁড়িয়ে থাকা গোবিন্দকে যে সব স্বাস্থ্যকর্মীরা সাহায্য করতে গিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছে।”

গোবিন্দকে গভীর রাতে আগরতলার কাছে একটি ছোট কোয়ারান্টিন সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়।

ত্রিপুরা অন্য রাজ্য থেকে নিজেদের বাসিন্দাদের ফিরিয়ে আনার বন্দোবস্ত করছে। এদিকে ইন্দ্রনগর, ধলেশ্বর, জয়নগর ও আরও অনেক জায়গাতেই অকারণ আতঙ্কে নিজের লোকেদেরা দ্বারাই প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন মানুষজন।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

tripura coronavirus
Advertisment