উত্তর পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির মধ্যে কোভিড সংক্রমণে দ্বিতীয় শীর্ষে ত্রিপুরা। এখনও পর্যন্ত সেখানে ৩২১টি সংক্রমণের ঘটনা সরকারিভাবে জানা গিয়েছে। এঁদের মধ্যে ১৬৩ জনই বিএসএফ জওয়ান কিংবা তাঁদের আত্মীয়।
এঁরা সকলেই ১৩৮ম, ৮৬ তম ও তৃতীয় ব্যাচালিয়নের কর্মী, যাঁরা ধলাই জেলায় ছিলেন। ধলাই বাংলাদেশের খাগড়াছড়ি অঞ্চলের লাগোয়ে যার কিছু জায়গায় এখনও মতানৈক্যের কারণে বেড়া দেওয়া হয়নি। এই অঞ্চলগুলি, এং দক্ষিণ ত্রিপুরা ও সিপাহিজলা জেলার কিছু অংশসহ ত্রিপুরার আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৬৭ কিলোমিটার জুড়ে পুরোমাত্রায় পেট্রোলিং প্রয়োজন।
বিএসএফ যদিও দাবি করেছে বিজিবির সঙ্গে যৌথ পেট্রোলিং তারা করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণের পর থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে, ত্রিপুরার মোট সংক্রমিতের অর্ধেক এই বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত হওয়ার ঘটনা রাজ্য সরকারকে চিন্তায় ফেলেছে।
এনসিডিসির তদন্তদল গতকাল তাদের রিপোর্ট জমা দেবার পর সোমবার ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লবকুমার দেব জানান, এই ভাইরাস বিএসএফের নিচের তলায় ছড়িয়ে পড়েছে কারণ ভারত সরকার যে সোশাল ডিসট্যান্সিং ও কোয়ারান্টিনের নিয়ম জারি করেছিল, তা মানা হয়নি।
নিজের বাসভবনে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেব তদন্ত রিপোর্টের উল্লেখ করে এ কথা বলেন।
যেহেতু বিএসএফ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীন, ফলে এই রিপোর্ট মন্ত্রকে পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, গতকাল রাজ্যসরকারের কাছে এই রিপোর্ট জমা পড়েছে, যা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের কাছে পাঠানো হয়েছে। তদন্তদলের পর্যবেক্ষণ, ছুটিতে অনেক জওয়ানেরই ভ্রমণের ইতিহাস রয়েছে, যাঁরা ফিরে এসে নিয়ম মোতাবেক সোশাল ডিসট্যান্সিং মান্য করেননি। ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসে যাঁরা ফিরেছিলেন, তাঁদের কোয়রান্টিনে যাওয়া উচিত ছিল, সেরকম কিছুই হয়নি।
তিনি আরও জানান বিএসএফের ১৩৮ নম্বর ব্যাটালিয়েনে জওয়ানদের মধ্যে সোশাল ডিসট্যান্সিং ও কোয়ারান্টিন না পালিত হওয়ার জন্য ওই ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডান্টকে বদলি করে দেওয়া হয়েছে।
এৎ আগে এপ্রিল মাসে মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) বরুণ কুমার সাহু ত্রিপুরা বিএসএফ ফ্রন্টিয়ারের আইডি সলোমন মিনজকে রোগেরি উৎস ও ও সে ব্যাপারে বিএসএফের নেওয়া পদক্ষের সম্পর্কে জানতে চেয়ে সাতদিনের মধ্যে একটি রিপোর্ট জমা দিতে বলেন। সে রিপোর্ট এখনও আসেনি।
মে মাসের শেষে ত্রিপুরা এনসিডিসি-র একটি দলকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার কারণ অনুসন্ধানের অনুরোধ জানায়। সে সময়ে প্রতিদিন বিএসএফ জওয়ানদের মধ্যে সংক্রমণ বাড়ছিল দু অংকে। ১৫ মে জি কে মেধির নেতৃত্বে তিন সদস্যের এরটি দল আগরতলায় আসে। ওই দল ধলাইয়ের ব্যাটালিয়ন সহ উপদ্রুত এলাকা পরিদর্শন করে রবিবার তাদের রিপোর্ট জমা দেয়।
বিএসএফ ব্যারাকে জওয়ানদের মধ্যে রোগ ছড়ানো নিয়ন্ত্রণ না করতে পারার জন্য সরাসরি বিএসএফ কর্তৃপক্ষের দিকেই আঙুল তুলেছেন বিপ্লব কুমার দেব।
এ ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বিএসএফ-এর জনসংযোগ আধিকারিক বলেছেন, তাঁদের কাজের প্রকৃতির কারণেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় ভ্রমণ করতে হয়। তিনি আরও বলেন, পিটি বা সৈনিক সম্মেলনের মত জনসমাবেশ কর্মসূচি ত্রিপুরায় অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
যে আধিকারিককে বদলি করা হয়েছে, তিনি দৃশ্যতই ক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, সকলের মধ্যে থেকে তাঁকে বেছে নেওয়া হল, তাও কোনও তদন্ত ছাড়াই এ ঘটনায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ওই কম্যান্ডান্ট।
সরকারি হিসেবে, ২৫০ জনের বেশি বিএসএফ জওয়ান মার্চ মাসে ছুটি বা অন্য জায়গায় ট্রেনিং থেকে ফিরে ত্রিপুরায় কাজে যোগ দিয়েছেন।
ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন রাজ্যের কোথাও গোষ্ঠী সংক্রমণ দেখা যায়নি।